Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছক ভাঙতে চেয়েও কি ছকেই বাঁধা পড়ল মাতৃরূপ

১৩ মে, রবিবার ‘মাদার্স ডে’ উপলক্ষে তৈরি একটি ভিডিয়ো মায়ের সেই বদল তুলে ধরে ধন্যবাদ 

অন্বেষা দত্ত
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

সারা দিন কাজ সেরে গোটা বাড়িকে খাইয়ে, শেষ বেলায় পাতে পড়ে থাকা খাবারটুকু মুখে তোলা— মা যা ছিলেন।

ঝড়ের বেগে ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করে, স্বামীর অফিস যাওয়া নিশ্চিত করে হাঁফ ছাড়া। চেয়ার টেনে বসে সিগারেটে সুখ টান— মা যা হইলেন!

১৩ মে, রবিবার ‘মাদার্স ডে’ উপলক্ষে তৈরি একটি ভিডিয়ো মায়ের সেই বদল তুলে ধরে ধন্যবাদ দিয়েছে মায়েদের—‘আনসেড থ্যাঙ্ক ইউ।’ কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। মায়েদের বাহ্যিক রূপবদল যা-ই হোক, সংসার সামলানোর দায়িত্ব তাঁরই— এমন ‘মিথ’কেই কি প্রশ্রয় দিচ্ছে না এই ভিডিয়ো?

চারপাশের এই চাপে কী ভাবে নিজেদের সামলান তাঁরা? সাড়ে পাঁচের কন্যার মা ম্যানেজমেন্ট কর্মী নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমি সব পারি, আমি পারফেক্ট, এটা দুনিয়াকে বোঝানোর দায় নেই তো! আমি কতটা পারি, আমিই বুঝব। যেটা পারব না, সেটার ভার অন্য কেউ নেবে।’’ কিন্তু অফিস সামলে খুদেকে দেখা, সময় দিতে না পারার অপরাধবোধ যে এখনও কুরে কুরে খায় মায়েদের? নন্দিনী বলেন, ‘‘সত্যি। ব্যাপারটা এ ভাবেই বলা হয়। আমি ভাবি, মেয়ে কী বলছে? ওর কী মনে হচ্ছে। ও তো কখনও বলেনি, মা তুমি পারছো না!’’

তবে মায়ের চেষ্টার পাশাপাশি পরিবার বা সমাজেরও কি দায়িত্ব নয় এটা বোঝানোর যে বাবার কাজটা যেমন কাজ, মায়েরটাও তেমনই? বাবা অফিস ট্যুরে গেলে সময় দিতে না পারলে কোনও ব্যাপার নয়। আর মা গেলে? ‘‘এত উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হলেও পারত! এমনই তো বলা হয়। এই যুগে এই ধারণা জিইয়ে না রাখলেই নয়?’’ কর্মরতা না হয়েও কথাগুলো বললেন বছর ছয়েকের ছেলের মা সুতপা। কোনও কোনও পরিবারে শুনেছি, শিশুকে ছোটবেলা থেকে এমন শেখানো হয়েছে যে, সে বড় হয়ে মা-কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। বড়দের কথাই সাজিয়ে বলেছে, ‘‘তুমি তো ছিলে না। রেজাল্ট তো খারাপ হবেই!’’

কোথাও আবার কর্মরতা মা প্রসবকালীন ছুটি পেরিয়ে অফিস জয়েন করার আগে চাপে। চার দিক থেকে পরামর্শ, ‘ভেবে দেখো আর যাবে কি না। অমুক তো ছেড়ে দিল, তমুক দিব্যি সংসার করছে!’ ‘‘বিয়ে বা মা হওয়ার পরে এ জন্যই বহু সংস্থায় মহিলা কর্মীদের সংখ্যা হুট করে কমে যায়,’’ মনে করালেন কমলিকা গঙ্গোপাধ্যায়, বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী। সকালে বেরিয়ে কাজের চাপে অনেক সময়ে ফিরতে তাঁর মাঝরাত পেরিয়ে যায়। তাই ভালবাসার কাজ, না কি বাচ্চাকে সঙ্গ দেওয়া— এই টানাপড়েনে ভুগছেন তিনি।

‘‘মা হওয়ার পরে কেন আগের জীবনটায় ফিরতে পারছি না?’’ প্রশ্নটা থেকে অবসাদ এসেছিল প্রকাশনা সংস্থার কর্মী পরমা মাইতির মনে। ‘‘কেউ না বললেও মনে মনে তৈরি হয়ে যায় চাপটা। সন্তানের জন্য মাকেই যে রাত জাগতে হয়,’’ বললেন পরমা। কাজে ফেরার পরে চাপ কিছুটা কেটেছে তাঁর। তবে সেখানেও দক্ষতার প্রশ্ন নিয়ে লড়াই। মা হওয়ার পরে আর কি ততটা সময় দিতে পারবে? এমন না-বলা কথা যেন ঘুরে বেড়ায় অফিসে, দাবি পরমার।

আবার কোনও মা যদি নিজের ইচ্ছেয় কাজ ছেড়ে সংসার করাই পছন্দ করে থাকেন, তাতেও দুয়ো কম জোটে না। এত ভাল কেরিয়ারটা কেন নষ্ট করছে বসে বসে?

ভিডিয়োটির পরিচালক শৌর্য দেবের বক্তব্য, মাকে নিয়ে নানা ভাবে নানা রকম কথা বলা হয়। গালাগালি দেওয়ার সময় পর্যন্ত মায়ের শরণ! সে সব মায়েদের কানে পৌঁছয় না, তাঁরা তাঁদের কাজটা করেই যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Mother Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE