Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

নয়া মোড়কে ফিরছে ঠাম্মার সুতির ন্যাপকিন

জগৎসংসারের ছিছিক্কার অগ্রাহ্য করে মেয়েদের জন্য সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর যন্ত্র তৈরি করেছিলেন অরুণাচলম মুরুগনন্থম।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৯
Share: Save:

নতুন বোতলে পুরনো মদের স্বাদ আদৌ বাড়ে কি না, বাড়লে কতটা বাড়ে— জানেন পানরসিকেরা। তবে নয়া মোড়কে আদ্যিকালের মতো নরম সুতির কাপড়ের ভাঁজ করা স্যানিটারি ন্যাপকিন একই সঙ্গে মহিলাদের স্বাস্থ্য বাঁচাবে, পরিবেশ বাঁচাবে এবং আর্থিক সাশ্রয় করবে বলে কিছু নতুন সংস্থার দাবি।

জগৎসংসারের ছিছিক্কার অগ্রাহ্য করে মেয়েদের জন্য সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর যন্ত্র তৈরি করেছিলেন অরুণাচলম মুরুগনন্থম। সেই ‘প্যাডম্যান’-এর ভারতেই গত কয়েক বছরে সাত-আটটি ‘স্টার্ট-আপ’ বা নতুন সংস্থা সিন্থেটিক ন্যাপকিনের বদলে পুরনো দিনের মতো নরম সুতির কাপড়ের উপরে ভরসা করেই বাজার ধরতে চাইছে।

৩০-৪০ বছর আগে ঋতুকালে মা-ঠাকুরমারা ঠিক যে-ধরনের কাপড় ব্যবহার করতেন, নতুন সংস্থাগুলি তাকেই আধুনিক মোড়কে পেশ করছে। তাতে লাভও হচ্ছে নজরকাড়া। বেঙ্গালুরু, পুণে, উদয়পুর, দিল্লি, তামিলনাড়ুর অরোভিলে-র মতো শহরের সঙ্গে সঙ্গে এমন স্টার্ট-আপ সংস্থা গড়ে উঠছে কলকাতাতেও। যা পুরনো, তা-ই তামাদি— এই ধারণা উল্টে দিতে চাইছে ওই সব সংস্থা। তাদের বক্তব্য, পুরনো ধ্যানধারণার পিছনে অনেক সময়েই জোরালো যুক্তি থাকে। ঋতুকালে কাপড় ব্যবহারের ব্যবস্থাটা ছিল অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। ফেলে দেওয়ার পরে সহজে মিশে যায় পরিবেশে। কাপড় অনেক বার ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। তাতে খরচ বাঁচে। সর্বোপরি সিন্থেটিকের চেয়ে কাপড়ের যত্নে রক্ষা পায় মেয়েদের স্বাস্থ্য।

আরও পড়ুন: অলস মেয়েরা শিখে রাখুন এই ৫ বিউটি টিপস

সেই তুলনায় ‘ডিসপোজেবল ন্যাপকিন’ বাড়াবাড়ি রকমের দূষণ ছড়ায়। রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়া সেই রক্তমাখা প্যাড নিয়ে কুকুর-বিড়ালের ছেঁড়াছেঁড়ি, নর্দমা-নদীনালায় ব্যবহৃত প্যাডের স্তূপ জমে যাওয়ার মতো ঘটনা আকছার ঘটে। প্লাস্টিক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে তৈরি সেই ন্যাপকিন ৫০০-৮০০ বছরেও মাটির সঙ্গে মেশে না। দূষণের নিরিখে ক্রমশ তালিকার উপরের দিকে উঠতে থাকা ভারতের ক্ষেত্রে যা মারাত্মক।

পরপর সুতির কাপড়ের স্তর বসিয়ে তৈরি হচ্ছে আধুনিক কাপড়ের ন্যাপকিন। পরিবেশবান্ধব বলেই একে বলা হচ্ছে ‘গ্রিন ন্যাপকিন’। কলকাতায় এই কাপড়ের প্যাড তৈরির সংস্থা রয়েছে দমদম ক্যান্টনমেন্টে। সেই সংস্থার তরফে দীপক পাল বলেন, ‘‘২০১৪ সালে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত বিক্রি হয় শুধু অনলাইনে। তাতেই ২০১৬ সালে ৮৫ হাজার এবং ২০১৭-য় প্রায় দেড় লক্ষ ন্যাপকিন বিক্রি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ক্রেতা খুব কম। সব চেয়ে বেশি কিনছেন তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র আর কর্নাটকের মেয়েরা।’’

দিল্লিতে এই ধরনের একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা জৈন। প্রতি মাসে অনলাইনে ওই সংস্থার ৫০০ থেকে ৭০০ ন্যাপকিন বিক্রি হচ্ছে। কিনছেন মূলত নাসিক, পুণে, বেঙ্গালুরুর মেয়েরা। ‘‘ভারতের যা জনসংখ্যা, তাতে প্রতি বছর পরিবেশে ফেলা হচ্ছে প্রায় ছ’‌কোটি ব্যবহৃত ন্যাপকিন। দূষণের বহরটা ভাবুন! এগুলি ‘বায়ো ডিগ্রেডেবল’ নয় অর্থাৎ পচে গিয়ে পরিবেশে মিশে যায় না। কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করলে ধোয়া-শুকোনোর অল্প ঝামেলা বাদ দিলে পরিবেশকে অন্তত দূষণমুক্ত রাখা যায়,’’ বলেন প্রিয়ঙ্কা।

কিন্তু ধোয়া-শুকোনোর প্রসঙ্গেই ন্যাপকিনকে জীবাণুমুক্ত রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুষুপ্তা চৌধুরী, রত্নাবলী চক্রবর্তীরা জানান, ঠিকমতো কাপড় না-ধুলে বা কড়া রোদে ভাল ভাবে না-শুকোলে তা জীবাণুর আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে। ভারতে এমনিতেই ঋতুস্রাব নিয়ে নানা রকমের অদ্ভুত বিশ্বাস, নিয়মকানুন, অহেতুক লজ্জা রয়েছে। রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে, অন্ধকারে কোনও মতে ঋতুকালের কাপড় শুকোনোর প্রবণতা। কাপড়ের ব্যবহার নতুন করে চালু করতে গিয়ে সেই ‘লজ্জা’ আবার রোগ ডেকে আনবে না তো? সেই প্রশ্ন থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE