বয়স যত বাড়বে, মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে কী ভাবে, নিকটতম বন্ধু হয়ে সেটা মেয়েকে শেখানোর কথা মায়েরই। এ বার খানিকটা ভূমিকা বদলে মায়েরও শিক্ষিকা হয়ে উঠতে হচ্ছে মেয়েদের। স্কুল থেকে ফিরে ছাত্রী মাকে শেখাবে, ঋতুস্রাবের দিনগুলি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কী ভাবে কাটাবেন।
জেলার মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ছাত্রীদের সচেতন করে তাদের এই দায়িত্ব দিতে উদ্যোগী হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর। এই ব্যবস্থা হচ্ছে মালদহ-সহ বিভিন্ন জেলায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং সেই সময়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে কাউন্সেলিং শুরু হচ্ছে। প্রতি মাসে ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে গরহাজিরা বন্ধ করতেও কয়েক দফা ব্যবস্থা নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। ‘‘ঋতুস্রাবের পর্বটা বিশেষ ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কাটানোর জন্য ছাত্রীদের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করার ব্যবস্থা হয়েছে,’’ বললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও।
এই নতুন ব্যবস্থায় ছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকছেন স্কুলের শিক্ষিকারাই। গ্রামের দিকে বহু মহিলা এখনও ঋতুকালে ন্যাপকিনের বদলে কাপড়ের টুকরো বা নেকড়া ব্যবহার করেন। সেটা শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর, সেই বিষয়ে প্রচার চালানো হবে। ছাত্রীরা, তাদের বাড়ির অন্য কোনও মহিলা যাতে নেকড়া ব্যবহার না-করেন, সেটা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ছাত্রীদেরই। সব স্কুলে ন্যাপকিনের ‘ভেন্ডিং মেশিন’ এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন নষ্ট করার জন্য ‘ডেস্ট্রয় মেশিন’ বসানোর পরিকল্পনা আছে। সেখান থেকে ছাত্রীরা ন্যাপকিন পাবে বিনামূল্যে।
ন্যাপকিন বদলাতে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে স্কুলকেই। এই ধরনের পরিষেবা না-থাকায় প্রতি মাসে বেশ কয়েক দিন বহু ছাত্রীই স্কুলে আসে না। সেই প্রবণতা আটকাতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হচ্ছে দফতর।
স্কুলে ছাত্রীদের ঋতু-পাঠ
• ঋতুস্রাব নিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার।
• নেকড়া ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর, চাই ন্যাপকিন।
• স্কুলে থাকবে ভেন্ডিং মেশিন।
• পোশাক পরিবর্তনের ঘর।
• কুসংস্কার কাটাতে গ্রামে গ্রামে সচেতনতা শিবির।
• ছাত্রীদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি।
সূত্র: জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর
দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, ওই জেলায় মাধ্যমিক স্তরের স্কুল রয়েছে ১০৯৩টি। ব্লক ধরে ধরে স্কুলগুলিতে এই নিয়ে সচেতনতা এবং পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। দফতরের অন্য এক কর্তা জানান, ঋতুস্রাবের মতো প্রাকৃতিক নিয়মকে ঘিরে প্রত্যন্ত গ্রামে নানা ধরনের কুসংস্কার রয়েছে। যেমন ঋতুকালে ঠাকুরঘরে না-ঢোকা, সকলের সঙ্গসান্নিধ্য এড়িয়ে চলা, পাতকুয়ো না-ছোঁয়া, সর্বোপরি অকারণে কুঁকড়ে থাকা। এগুলো কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই কাজে ছাত্রীরাই হবে সব থেকে বড় অবলম্বন। স্কুলে যে-সব ছাত্রীর কাউন্সেলিং হবে, বাড়ি ফিরে মা-মাসিমা-কাকিমা, এমনকী ঠাকুরমা-দিদিমাদেরও সেই বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে তাদের উপরে। ঋতুস্রাবের স্বাভাবিক প্রবণতা সম্পর্কে যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণা সমূলে উৎখাত করতে চাই ছাত্রী-সমাজের সচেতনতা। তাই এই উদ্যোগ।
কলকাতার বেশ কিছু স্কুলে ইতিমধ্যে ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। কলকাতা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও বসেছে ওই যন্ত্র। যে-সব গ্রামে কুসংস্কার এখনও রয়ে গিয়েছে, সেখানে এই উদ্যোগ সফল করে তোলাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বলেই মনে করছেন স্কুলশিক্ষা-কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy