Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘একা মা’ হওয়ার পথে যাত্রা বন্ধ্যত্ব চিকিৎসকেরই

বছর দেড়েক আগে আচমকাই তাঁর মনে হয়েছিল, অন্যকে সচেতন করার পাশাপাশি তিনি নিজেও যদি একক মাতৃত্বের পথে হাঁটতে পারেন তা হলে আরও অনেকে সেই পথে এগোতে উৎসাহী হবেন। সেই ভাবনা থেকেই অবিবাহিত শিউলিদেবী এখন এক পুত্র সন্তানের মা।

ছেলের সঙ্গে শিউলিদেবী।

ছেলের সঙ্গে শিউলিদেবী।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

তিনি অন্যকে ‘একক মাতৃত্ব’ নিয়ে সচেতন করেন। এমনকী মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের সুযোগও করে দেন। এ বার নিজেই সেই পথে হাঁটলেন।

তিনি বালির বাসিন্দা, পেশায় বন্ধ্যত্ব চিকিৎসক শিউলি মুখোপাধ্যায়। বছর দেড়েক আগে আচমকাই তাঁর মনে হয়েছিল, অন্যকে সচেতন করার পাশাপাশি তিনি নিজেও যদি একক মাতৃত্বের পথে হাঁটতে পারেন তা হলে আরও অনেকে সেই পথে এগোতে উৎসাহী হবেন। সেই ভাবনা থেকেই অবিবাহিত শিউলিদেবী এখন এক পুত্র সন্তানের মা।

৩৯ বছরের শিউলিদেবী আদর করে ছেলের নাম রেখেছেন ‘রণ’। যদিও ছোট থেকেই মেয়ের কোনও বিষয়ে আপত্তি না করা স্বপনবাবু ও ভারতীদেবী নাতির নাম রেখেছেন দেবদূত। তবে ছেলের জন্মের পরেই এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে শিউলির। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের জন্মের শংসাপত্রে বাবার নামের জায়গায় পুর কর্মীরা কী লিখবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।’’ তিনি জানান, শেষে আদালতে এফিডেভিট করে এবং সিঙ্গল মাদারের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার দেওয়া একটি শিশুর জন্মের শংসাপত্রের কপি ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কাগজপত্র পুরসভায় জমা দেওয়ার পরেই মেলে শংসাপত্র।

শিশু বয়স থেকেই রণ-কে সিঙ্গল পেরেন্ট বা সিঙ্গল মাদারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বোঝাতে চান শিউলি। শনিবার নিজের বেসরকারি হাসপাতালে বসে তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ওকে বুঝিয়ে দিলে বড় হয়ে আর মনে কোনও সংশয় থাকবে না।’’ প্রায় ১১ বছর আগে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করার পরে তাঁর হাতেই জন্ম হয়েছে অসংখ্য শিশুর। তবে সিজারিয়ান করে ছেলের জন্মের পরে প্রথম তাঁকে কোলে নেওয়ার অনুভূতি একেবারে অন্যরকম বলেই জানান তিনি।

শিউলিদেবী জানান, এমডি পড়ার সময় থেকেই বাড়ি থেকে তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু বিয়ে বিষয়টি ছিল তাঁর অপছন্দের। কারণ? ‘‘একান্নবর্তী পরিবারে প্রথম মেয়ে সন্তান হওয়ায় জন্মের পরেই আমার মা আমাকে নিয়ে মামারবাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ছ’মাস পরে বাড়িতে ফিরলেও সব সময় ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ফারাক করা হত।’’

শিউলি বলেন, ‘‘কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে ক্রমশ একাকিত্বও বাড়ছিল। অল্পেতেই রেগে যাচ্ছিলাম। তখনই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’’ এর পরেই বাবা এবং মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে পাকাপাকি ভাবে সিঙ্গল পেরেন্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। নিজের হাসপাতালের স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে শুক্রাণু নিয়ে প্রবেশ করানো হয় তাঁর শরীরে। হায়দরাবাদ ও মালদহের দুই মহিলাও তাঁর চিকিৎসাতে সিঙ্গল মাদার হতে চলেছেন।

ছেলেকে নিয়ে বেজায় খুশি শিউলিদেবী। ছেলের অন্নপ্রাশনের প্রস্তুতির ব্যস্ততার মধ্যেই বললেন, ‘‘কতক্ষণে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলের আবদার মেটাবো, সেই চিন্তাতেই থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE