Advertisement
E-Paper

সোনাগাছির স্কুলে বেবি এখন বাংলা-হিন্দির দিদিমণি

ক্ষতবিক্ষত মেয়েবেলায় তিনি দিনের পর দিন বাবার হাতে মাকে বেধড়ক মার খেয়ে শেষে ঘর ছাড়তে দেখেছিলেন। পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ থাকলেও বাবা আর সৎ মা ১৩-য় পা দেওয়ামাত্র তাঁর বিয়ে দিলেন দ্বিগুণের বেশি বয়সি বরের সঙ্গে। শুরু হল আর এক দুঃস্বপ্ন। 

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:২০
শিক্ষিকা: সোনাগাছিতে পড়াচ্ছেন বেবি হালদার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শিক্ষিকা: সোনাগাছিতে পড়াচ্ছেন বেবি হালদার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ক্ষতবিক্ষত মেয়েবেলায় তিনি দিনের পর দিন বাবার হাতে মাকে বেধড়ক মার খেয়ে শেষে ঘর ছাড়তে দেখেছিলেন। পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ থাকলেও বাবা আর সৎ মা ১৩-য় পা দেওয়ামাত্র তাঁর বিয়ে দিলেন দ্বিগুণের বেশি বয়সি বরের সঙ্গে। শুরু হল আর এক দুঃস্বপ্ন।

মা হলেন ১৪ বছর বয়সে, আর ২৫ বছর বয়সে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় দিল্লির ট্রেনে উঠলেন। পড়ে পড়ে মার খেতে চাননি তিনি। আস্থা রেখেছিলেন নিজের ক্ষমতায় আর সন্তানদের দিতে চেয়েছিলেন সুস্থ জীবনের ঠিকানা। ভবিষ্যতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে করতেই তিনি হয়ে উঠলেন ‘আলো-আঁধারি’র মতো বইয়ের জন্য পুরস্কারজয়ী লেখিকা বেবি হালদার।

সোনাগাছির ভিতর একটি অসরকারি সংস্থা পরিচালিত এক কামরার ছোট্ট স্কুলঘরে সেই বেবি এখন বাংলা আর হিন্দির দিদিমণি। বদনাম-গলির অন্ধকারে ডুবে থাকা শিশুদের তিনি আলোর দিশা দেখাতে চাইছেন। অমর্যাদা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে বড় হওয়া এই বাচ্চাগুলোর জন্যই প্রতিদিন হালিশহরের বাড়ি থেকে ট্রেনে করে যাতায়াত করেন তিনি। এদের মধ্যে নিজের শৈশবের ছায়া দেখে দম বন্ধ হয়ে আসে তাঁর।

দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের কুখ্যাত এলাকায় বেবি দিদিমণি তাই তিন-চার পাঁচ-আটের ছোট্ট কুঁড়িদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন অধিকার আর সম্মান আদায় করে নেওয়ার ধারণা। চাগিয়ে দিচ্ছেন পড়াশোনা শিখে সমাজের চোখে চোখ রাখার আত্মবিশ্বাস। ‘আন্টি’র আঙুলে আঙুল জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে চার বছরের এক পুঁচকে বলতে পারছে, ‘‘দেখো আমি ওয়ান-টু লেখায় গুড পেয়েছি। পোয়েমও পুরো রেডি। এ বার বড় হয়েই চাকরি পেয়ে যাব। মাকে এসিওয়ালা ফ্ল্যাট কিনে দেব।’’

শুনতে-শুনতে বেবির চোখ দু’টো জলে ভরে যায়। ধরা গলায় বলেন, ‘‘আমি যদি ঘটনাচক্রে গুড়গাঁওয়ে মুন্সি প্রেমচন্দের নাতি প্রবোধকুমারের বাড়িতে গিয়ে না-পড়তাম, হয়তো আমারও ঠাঁই হত এ রকম কোনও গলিতে।’’ প্রবোধবাবুই বেবির হাতে পেন ধরিয়েছিলেন। তাই বেবির শপথ, ‘‘আরও পাঁচ জন অসহায়কে দাঁড়াতে সাহায্য করার দায় বর্তায় আমার উপরে।’’

যৌনকর্মী মায়েদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলে কাউন্সেলিং করেন বেবি। ‘‘আমি নিজে বৈবাহিক ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার। শিক্ষার জোর ছিল না, অর্থের সংস্থান ছিল না। আমি যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারি, আমার বই যদি ২৬টি ভাষায় অনূদিত হতে পারে, তোমরাও এই নরক থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে’’— ক্রমাগত এই মনের জোর আর বিকল্প পেশার সন্ধানের জন্য বেবি উদ্বুদ্ধ করেন তাঁদের। তাঁরা যাতে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও সমঝোতা না করেন, সেই পরামর্শ দেন পাখিপড়া করে। প্রান্তবাসী নিপীড়িত মেয়ের অসাধারণ হয়ে ওঠার জীবননাট্য তিনি এ বার লেখা হতে দেখতে চান যৌনপল্লির প্রতিটি মেয়ের জীবনে।

International Women's Day Red Light Area Prostitute
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy