Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রীদের মোবাইল নাকি বাজছে, রহস্য-বিমান এখনও বেপাত্তাই

মানুষগুলোর খোঁজ নেই এখনও। অথচ চার দিন বাদে হঠাৎই তাঁদের কারও কারও মোবাইল বেজে উঠেছে। তা-ও একাধিক বার। কিন্তু মেসেজ করলে উত্তর মেলেনি। মঙ্গলবার সকালে এমনই দাবি করেছিলেন নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের যাত্রীদের বেশ ক’জন আত্মীয়। সে কথা তাঁরা জানিয়েওছিলেন তদন্তকারীদের। কিন্তু দুপুরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র ইগনাটিয়াস অং বেজিংয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন, কুয়ালা লামপুরে তাঁদের সদর দফতর থেকে এমনই একটি নম্বরে ফোন করা হয়েছিল।

বিমানের খোঁজে ভিয়েতনামের উপকূল রক্ষী বাহিনীর টহল। ছবি: এএফপি।

বিমানের খোঁজে ভিয়েতনামের উপকূল রক্ষী বাহিনীর টহল। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কুয়ালা লামপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

মানুষগুলোর খোঁজ নেই এখনও। অথচ চার দিন বাদে হঠাৎই তাঁদের কারও কারও মোবাইল বেজে উঠেছে। তা-ও একাধিক বার। কিন্তু মেসেজ করলে উত্তর মেলেনি।

মঙ্গলবার সকালে এমনই দাবি করেছিলেন নিখোঁজ বিমান বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরের যাত্রীদের বেশ ক’জন আত্মীয়। সে কথা তাঁরা জানিয়েওছিলেন তদন্তকারীদের। কিন্তু দুপুরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র ইগনাটিয়াস অং বেজিংয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন, কুয়ালা লামপুরে তাঁদের সদর দফতর থেকে এমনই একটি নম্বরে ফোন করা হয়েছিল। তবে সংযোগ হয়নি।

মোবাইল সংযোগ মিললে তার সূত্র ধরে বিমানটিকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারত। মঙ্গলবার অন্তত তেমন কিছু ঘটল না। বরং চার দিন পরে এমন অদ্ভুত ভাবে মোবাইল বাজতে শোনা গেল কী করে, সেটাই এখন নতুন রহস্য। আত্মীয়দের দাবি যদি সত্য হয়, তা হলে বিমানটি ধ্বংস হয়নি বলে আশা থাকে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, যাত্রীরা কি তবে বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন? নইলে মোবাইল চালু করেছেন কী করে? যদি ফোন চালু করে থাকেন, তবে উত্তর দিচ্ছেন না কেন? তাঁরা কি বন্দি? তাঁদের মোবাইল অন্য কারও হাতে রয়েছে? তারা কারা? কোথায়? কী তাদের উদ্দেশ্য?

শুধু ফোন নয়, এ দিন চিনের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিসেও যাত্রীদের কাউকে কাউকে অনলাইন পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন আত্মীয়রা। যেমন সকাল থেকে এক যাত্রীকে অনলাইন দেখে দুপুরের দিকে পুলিশকে বাড়িতে ডেকে আনেন চিনের এক বাসিন্দা। কিন্তু যত ক্ষণে পুলিশ পৌঁছয়, তত ক্ষণে ওই প্রোফাইলটি আবার অফলাইন হয়ে গিয়েছে। চিনেরই আর এক বাসিন্দা বিয়াং লিয়াংওয়ের দাদা ওই বিমানে ছিলেন। বিয়াং বলেন, “আজ বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমি দাদার নম্বরে বার দুয়েক ফোন করি। এবং রিংও শুনতে পাই।” কিন্তু সমস্যা একটাই। ফোনটা বাজলেও তা কেউই ধরছেন না। মেসেজ করা হলেও তার কোনও জবাব আসছে না।

আত্মীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস, তদন্তকারীরা চাইলে ফোনের জিপিএস সিগন্যালের মাধ্যমে যাত্রীরা কোথায় রয়েছেন, তা জেনে যেতেই পারেন। সকালের দিকে সে সব ভেবেই তাঁরা কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দুপুরে অং-য়ের সাংবাদিক সম্মেলন সে আশায় জল ঢেলে দেয়। চার দিন পরেও কারও কোনও খোঁজ না মেলায় এ দিন বেজিংয়ে ক্ষোভও উগরে দেন আত্মীয়দের অনেকে। তিন ভারতীয় যাত্রীর পরিবারকে অবশ্য এ দিন কুয়ালা লামপুর নিয়ে এসেছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স।

তাতে কী? চার দিন পরেও সেই একই প্রশ্ন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথায় গেল এমএইচ ৩৭০?

তল্লাশিতে নতুন বলতে দু’টো সম্ভাবনা। চিনের উপগ্রহচিত্রেই এ দিন ফের সমুদ্রে নতুন তিনটি জায়গায় তেল ভাসতে দেখা গিয়েছে। তার একটি থেকে যদি কোনও হদিস মেলে, সেটা একটা রাস্তা। অন্য দিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, হয়তো নির্ধারিত পথ বদলে মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলে ফিরে এসেছিল বিমানটি। তার পর মালাক্কা প্রণালীতে সেটি ভেঙে পড়ে। এ দিন সেই সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মালাক্কা প্রণালীতে অনুসন্ধান চালানো হয়। কারণ তথ্য বলছে, শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ যখন হারিয়ে যাওয়া বিমানের সঙ্গে শেষ বারের মতো যোগাযোগ হয় এটিসি-র, তখন তার অবস্থান ছিল মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের শহর কোটা ভারু থেকেও বেশি কিছুটা পূর্বে। তার পর সেটি নিজের অভিমুখ বদলে ফিরে এসেছিল বলে রেডারের রেকর্ডিং থেকে আগেই সন্দেহ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেটি যে মালয়েশিয়া ভূখণ্ডের উপর দিয়েই উড়ে গিয়ে শেষমেশ মালাক্কা প্রণালীতে ভেঙে পড়ে, এই তত্ত্ব নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। অনেকেরই প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে সেটি এটিসি-র নজর কী ভাবে এড়াল?

আবার পাসপোর্ট-চুরির উপর ভিত্তি করে এত দিন নাশকতার যে ব্যাখ্যা খাড়া করা হচ্ছিল, সেটাও আর খুব ধোপে টিঁকছে না। এ দিন দুপুরে মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বাকার জানিয়ে দেন, যে দু’জন ভুয়ো পাসপোর্টের ভিত্তিতে টিকিট কেটে বেজিংগামী বিমানটিতে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম পৌরিয়া নৌর মহম্মদ মেহরদাদ। বয়স ১৯। আদতে ইরানের বাসিন্দা পৌরিয়া প্রথমে নিজের আসল পাসপোর্টের ভিত্তিতেই তাইল্যান্ডে আসেন। তার পর সেখান থেকে ভুয়ো পাসপোর্ট জোগাড় করে চলে আসেন কুয়ালা লামপুরে। সেখানে এক পরিচিতের বাড়ি সপ্তাহখানেক কাটিয়ে ভুয়ো পাসপোর্ট দেখিয়েই কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং হয়ে আমস্টারডাম যাওয়ার টিকিট কাটেন তিনি। কিন্তু তাঁর আসল গন্তব্য ছিল জার্মানি। এমনকী ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে পৌরিয়ার জন্য অপেক্ষাও করেছিলেন তাঁর মা। কিন্তু ছেলে না পৌঁছনোয় তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুরো বিষয়টা তখনই সামনে আসে।

অন্য দিকে, দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম খালিদ না জানালেও ইন্টারপোল জানিয়েছে। তাঁর নাম, দিলাওয়ার সুয়েইদ মহম্মদ রেজা। বয়স ৩০। ইন্টারপোলের ধারণা, কাজম আলি নামে কুয়ালা লামপুরে বসবাসকারী এক ইরানের বাসিন্দা পৌরিয়া এবং দিলাওয়ারের হয়ে টিকিট কাটেন। কিন্তু তার পিছনে বেআইনি অভিবাসনই লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

boeing 777-200 plane accident vietnam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE