Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চাওয়া হয়েছিল মুক্তিপণ, দাবি ফোলির নিয়োগকর্তার

সন্দেহ ছিলই। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও মানলেন, যে জঙ্গি মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলিকে খুন করেছে, সম্ভবত সে ব্রিটেনেরই নাগরিক। ফোলি যে মার্কিন সংবাদপত্রের হয়ে কাজ করতেন, তার সিইও জানিয়েছেন গত নভেম্বরে বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ চেয়ে ফোলির পরিবারকে ই-মেল পাঠিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় সেই যোগাযোগ। তবে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে খুনের খবর আগাম জানিয়ে ফের ফোলির পরিবারকে ই-মেল পাঠায় জঙ্গিরা।

২০১১-এর ১৮ মে লিবিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ত্রিপোলির একটি হোটেলে জেমস ফোলি।  —ফাইল চিত্র

২০১১-এর ১৮ মে লিবিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ত্রিপোলির একটি হোটেলে জেমস ফোলি। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

সন্দেহ ছিলই। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও মানলেন, যে জঙ্গি মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলিকে খুন করেছে, সম্ভবত সে ব্রিটেনেরই নাগরিক। ফোলি যে মার্কিন সংবাদপত্রের হয়ে কাজ করতেন, তার সিইও জানিয়েছেন গত নভেম্বরে বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ চেয়ে ফোলির পরিবারকে ই-মেল পাঠিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় সেই যোগাযোগ। তবে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে খুনের খবর আগাম জানিয়ে ফের ফোলির পরিবারকে ই-মেল পাঠায় জঙ্গিরা।

জঙ্গিদের দাবি মেনে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য কিছু জানাননি সংবাদপত্রের সিইও। তাঁর দাবি, মার্কিন প্রশাসনকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা হলে সময় থাকতে মার্কিন বাহিনী উদ্ধার-অভিযান চালাল না কেন? এর সরাসরি জবাব না মিললেও মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরের গোড়ার দিকে ফোলি ও অন্যান্য অপহৃতদের উদ্ধার করতে সিরিয়ার নির্দিষ্ট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল নেভি সিল টিম সিক্স-এর মতো বিশেষ বাহিনী। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। মার্কিন সূত্রের দাবি, জঙ্গিদের সম্ভাব্য ডেরা হিসেবে যে জায়গাগুলিতে অভিযান চালানো হয়েছিল, সেখান থেকে কিছু দিন আগেই সরে গিয়েছিল তারা।

তথ্য বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ায় লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে জঙ্গিদের হাতে বহু বিদেশি সাংবাদিক অপহৃত হয়েছেন। বহু ক্ষেত্রেই এই অপহৃতদের দায়িত্ব থাকত পশ্চিমী দেশগুলি থেকে আইএসআইএসে যোগ দেওয়া জঙ্গিদের হাতে। যেমন ফোলির দেখভালের দায়িত্ব ছিল ওই সন্দেহভাজন ব্রিটিশ জঙ্গির উপর। এক প্রাক্তন অপহৃতের দাবি, ওই জঙ্গির নাম জন। ‘দ্য বিটলস’ নামে আইএসআইএস জঙ্গিদের এক বিশেষ গোষ্ঠীর সদস্য সে। তার কথা বলার ভঙ্গি থেকে বিশেষজ্ঞরা আগেই আঁচ করেছিলেন, ওই জঙ্গি ব্রিটেনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বাসিন্দা। রিচার্ড ব্যারেট নামে ব্রিটেনের সন্ত্রাস-দমন শাখার প্রাক্তন প্রধান জানিয়েছেন, এই তথ্য সঠিক হলে জনের খোঁজে সিরিয়ায় তল্লাশি চালাবে ব্রিটেনের স্পেশ্যাল এয়ার সার্ভিস (স্যাস)। ধরা পড়লে বিচারের জন্য ব্রিটেনে নিয়ে আসা হবে ওই জঙ্গিকে।

কিন্তু সে সব তো পরের কথা। আপাতত যা চিন্তা বাড়াচ্ছে, তা হল জঙ্গিদের কথা না মানলে অপহৃত দ্বিতীয় মার্কিন সাংবাদিকও খুন হতে পারে। তা হলে কি ইরাকে নিয়ন্ত্রিত হামলা থামাবে ওবামা প্রশাসন? সে সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। তাঁর বক্তব্য, “এই শয়তানি শক্তির কাছে কোনও মতেই মাথা নোয়ানো হবে না।” আজ মসুল শহরের উপরে ১৪ বার বিমান হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। তাতে জঙ্গিদের বহু অস্ত্রশস্ত্র, সাঁজোয়া গাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করেছে মার্কিন প্রশাসন। ফ্রান্স জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ভাবে এই জঘন্য অপরাধের মোকাবিলা করা দরকার। জার্মানি ও ইতালিও জানিয়েছে, ইরাকি সেনা ও কুর্দ বাহিনীকে অস্ত্র পাঠিয়ে সাহায্য করবে তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অন্য দেশের জঙ্গি-সমস্যার সমাধানে এ ভাবে অস্ত্র পাঠিয়ে সাহায্য করতে বিশেষ দেখা যায়নি জার্মানিকে।

এ থেকেই পরিষ্কার, গত কালের ভিডিও ঠিক কতটা আলোড়ন ফেলেছে ইউরোপে।

তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হলেও বিস্মিত নয় ব্রিটিশ প্রশাসন। এ দিনও ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড জানান, ব্রিটেনের বহু নাগরিকই যে আইএসআইএসে যোগ দিয়েছে, সে তথ্য বহু আগেই জানতেন তিনি। ব্রিটেন চায় সেই জঙ্গিদের দ্রুত চিহ্নিত করে ফিরিয়ে আনতে। তা না হলে তারা গোপনে দেশে ফিরে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা ক্যামেরন সরকারের। দেশের স্বার্থেই তাই ফোলির হত্যাকারীকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা দরকার বলে মনে করছে ব্রিটেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

james foley bagdad ransom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE