Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মামুলি ঘটনা, প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ঘিরে উত্তাল তুরস্ক

দু’দিক থেকে হাত দু’টোকে চেপে ধরেছে সেনা। মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন বছর তিরিশের যুবক। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন ক্রমাগত। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এর্দোগানের স্যুট-টাই পরা উপদেষ্টা তাঁকে লাথি মেরে চলেছেন নাগাড়ে। ওই যুবকের অপরাধ? পশ্চিম তুরস্কের সোমায় খনি-বিপর্যয়ের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। বিক্ষুব্ধদের ভিড়ে ছিলেন ওই যুবকও। তিনি সজোরে লাথি মারেন এর্দোগানের গাড়িতে।

ক্ষোভ প্রকাশের অপরাধে জুটছে লাথি। (বাঁ দিকে) এর্দোগানের মন্ত্রিসভার সেই ডেপুটি চিফ ইউসুফ এরকেল। সোমায়। ছবি: রয়টার্স।

ক্ষোভ প্রকাশের অপরাধে জুটছে লাথি। (বাঁ দিকে) এর্দোগানের মন্ত্রিসভার সেই ডেপুটি চিফ ইউসুফ এরকেল। সোমায়। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
সোমা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

দু’দিক থেকে হাত দু’টোকে চেপে ধরেছে সেনা। মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন বছর তিরিশের যুবক। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন ক্রমাগত। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এর্দোগানের স্যুট-টাই পরা উপদেষ্টা তাঁকে লাথি মেরে চলেছেন নাগাড়ে।

ওই যুবকের অপরাধ? পশ্চিম তুরস্কের সোমায় খনি-বিপর্যয়ের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। বিক্ষুব্ধদের ভিড়ে ছিলেন ওই যুবকও। তিনি সজোরে লাথি মারেন এর্দোগানের গাড়িতে। প্রেসিডেন্টের এ হেন অপমানে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ওই উপদেষ্টা ইউসুফ এরকেল। তিনি এর্দোগানের মন্ত্রিসভার ডেপুটি চিফ। গাড়ি থেকে নেমে লাথি মারতে শুরু করেন লোকটিকে। চার পাশে বহু মানুষের ভিড়, সাংবাদিকদের জটলা, ক্যামেরার ঝলকানি সে দিকে নজর নেই তাঁর। নিরুত্তাপ উপদেষ্টা ‘শাস্তি’ দিতে ব্যস্ত।

এ ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। সমালোচনার ঝড় ওঠে মুহূর্তে।

তুরস্কে খনি-দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব নিয়ে অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ বারে সোমার খনি-বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ২৮২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দেড়শো খনি-শ্রমিকের খোঁজ নেই। শক্তি-মন্ত্রী তানের ইলদিজ নিজেই বলছেন, তাঁদের বেঁচে ফেরার আশা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় স্বজনহারা মানুষের সঙ্গে কোনও সরকারি কর্তা কী ভাবে এমন আচরণ করতে পারেন? সরকারের তরফে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি।

ক্ষুব্ধ জনতার বক্তব্য, প্রেসিডেন্ট নিজেই তো বিতর্ক-ক্ষোভ উস্কে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সোমা-সফরে এসে কোনও রকম সহানুভূতি না দেখিয়ে এর্দোগান উল্টে মৃত কর্মীদের পরিবারকে বলেছেন, “কাজের জায়গায় একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।” এখানেই থামেননি তিনি। খনির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। বলেন, “খনিতে এ ধরনের বিস্ফোরণ মাঝেমধ্যেই ঘটে। পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে এমন ঘটনা ঘটেনি, তা তো নয়।” লঘু করে দেখিয়ে এর্দোগান বলেন, “মামুলি বিষয়।”

এতেই আগুনে ঘি পড়ে। স্বজনহারা মানুষগুলো ক্ষেপে ওঠে। ‘খুনি!’, ‘চোর!’ বলে চেঁচাতে শুরু করেন তাঁরা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে সেনা-পুলিশ নিয়ে কাছেই একটি সুপারমার্কেটে আশ্রয় নেন তিনি। শুধু সোমাতেই নয়, ইস্তানবুল, আঙ্কারাতেও আজ বিক্ষোভ-ধর্নায় বসে সাধারণ মানুষ। প্রায় ৮ লক্ষ কর্মী নিয়ে তৈরি তুরস্কের সব চেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন ‘তুর্ক-ইজ’ও আন্দোলনে নেমেছে। ইস্তানবুলে সরকার-বিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায় বিক্ষোভকারীদের “এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। এটা হত্যা।” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জল-কামান, কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে।

অগস্ট মাসেই তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রাজনীতিতে এর প্রভাব যে পড়বে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কূটনীতিকরা। তা নিয়ে অবশ্য মোটেও মাথাব্যথা নেই স্বজনহারাদের। পরিজনকে সমাহিত করতে শাবল হাতে নেমে পড়েছেন তাঁরাই।

সোমার সবুজে মোড়া পাহাড়ি উপত্যকায় খোঁড়া হচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে কবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soma president statement controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE