Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র, সংঘর্ষ তীব্র ইরাকে

মুখে নিষ্পাপ হাসি, হাতে এ-কে ৪৭! এ ভাবেই শেষ হচ্ছে শৈশব। ইরাকের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বচ্ছল মফস্সল বেশিরভাগ এলাকাতেই বড়দের পাশাপাশি জঙ্গি হামলা ঠেকানোর দায়িত্ব পেয়েছে খুদেরাও। প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি অবশ্য আগেই ঘোষণা করেছিলেন, যাঁরা সরকারের হয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করবেন, তাঁদের হাতে অস্ত্র এবং সরঞ্জাম তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে সরকার। কিন্তু সেই ইচ্ছুক যোদ্ধাদের তালিকায় যে খুদেরাও নাম লেখাবে, তা বোধহয় জানা ছিল না।

বন্দুক হাতে খুদে। ইরাকের নজাফ-এ। ছবি: এএফপি

বন্দুক হাতে খুদে। ইরাকের নজাফ-এ। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

মুখে নিষ্পাপ হাসি, হাতে এ-কে ৪৭!

এ ভাবেই শেষ হচ্ছে শৈশব। ইরাকের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বচ্ছল মফস্সল বেশিরভাগ এলাকাতেই বড়দের পাশাপাশি জঙ্গি হামলা ঠেকানোর দায়িত্ব পেয়েছে খুদেরাও। প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি অবশ্য আগেই ঘোষণা করেছিলেন, যাঁরা সরকারের হয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করবেন, তাঁদের হাতে অস্ত্র এবং সরঞ্জাম তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে সরকার। কিন্তু সেই ইচ্ছুক যোদ্ধাদের তালিকায় যে খুদেরাও নাম লেখাবে, তা বোধহয় জানা ছিল না।

বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। তাঁদের যুক্তি, সেনাবাহিনী যে জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ (আইএসআইএস)-এর লাগাতার হামলার সামনে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারছে না, তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার। এ পরিস্থিতিতে সরকারপন্থী বিভিন্ন অ-সামরিক গোষ্ঠী এগিয়ে আসছে। সে দলে যদি শিশুদেরও সামিল করে নেওয়া যায়, তাতে ক্ষতি কী? ভয়াবহ প্রশ্ন নিঃসন্দেহে। কিন্তু তীব্র জঙ্গি হামলা রোখার জন্য বাসিন্দারা যা খড়কুটো পাচ্ছেন, তা-ই আঁকড়ে ধরছেন।

গত এক সপ্তাহের ঘটনাক্রম দেখলে তাঁদের এই প্রবণতা হয়তো অস্বাভাবিক বলে মনে হবে না। তথ্য বলছে, উত্তর ইরাকের বড়সড় অংশ ইতিমধ্যেই জঙ্গিদখলে চলে গিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মসুল এবং তিকরিত শহরও। মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আগেই বাগদাদের অদূরে বাকুবা শহরের দখল নিয়েছিল জঙ্গিরা। সারা রাত তুমুল গুলির লড়াই চলেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, সে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে ৪৪ জন বন্দি পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়। তবে একটা সূত্রের দাবি, শহরের বেশ কিছু এলাকা জঙ্গিদের দখলমুক্ত করেছে সেনা। তা বাদে হাদিতা ও জালুলায়ও তীব্র সংঘর্ষ চলছে। প্রশাসনের দাবি, জঙ্গিদের এই হামলায় গোপনে সাহায্য করছে সৌদি আরব ।

চিন্তার আরও কারণ রয়েছে। তথ্য বলছে, বাকুবা থেকে বাগদাদের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। যে ভাবে বাকুবায় হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা, তাতে নুরি-সরকারের জোর আশঙ্কা, খুব শীঘ্রই বাগদাদের উপরও আক্রমণ চালাবে জঙ্গিরা। সে ক্ষেত্রে তাদের রোখার প্রস্তুতি না থাকলে রাজধানীও হাতের বাইরে চলে যাবে। তার পর কী হবে, তা ভেবেই চিন্তিত সরকার।

তবে শুধু নুরি-সরকারের নয়, ভারতেরও চিন্তা বাড়াচ্ছে এই গৃহযুদ্ধ। ইরাকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ জন ভারতীয় নার্স কর্মরত। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত সরকার। তবে ইরাকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এ অজয় কুমার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত নিরাপদেই রয়েছেন তাঁরা। তবুও প্রত্যেক ঘণ্টার পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর।

অন্য দিকে, আমেরিকা নিজেদের দূতাবাসে ইতিমধ্যেই ২৭৫ জন সেনা পাঠিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অস্বীকার করলেও শোনা যাচ্ছে আকাশপথে হয়তো জঙ্গিদের উপর হামলা করতে পারে মার্কিন সেনা। সে সম্ভাবনার কথা অবশ্য উড়িয়ে দেননি মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিও। তবে ইরাকের উপর হামলা চালাতে গেলে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যে ভালও করতে হবে, তা বিলক্ষণ জানে পশ্চিমী দুনিয়া। আর সে কারণেই ঠিক এই সময় তেহরানে ফের দূতাবাস খোলার কথা জানিয়েছেন ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ। তাঁর বয়ানে, “এটাই দূতাবাস খোলার উপযুক্ত সময়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iraq terrorist attack clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE