তার প্রতিটি বক্তৃতাতেই ঘুরেফিরে আসে শান্তির কথা। এমনকী সুযোগ পেলেও নিজের হামলাকারীদের ক্ষতি করতে চায় না সে। এমন মনোভাবের জন্য গত কাল নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছে মালালা ইউসুফজাই। কিন্তু মালালা কি জানে যে যাঁর নামে এই শান্তি পুরস্কার, সেই আলফ্রেড নোবেল নিজেই বিস্ফোরকের স্রষ্টা? শুক্রবার গভীর রাতে টুইটারে এমন প্রশ্নই ১৭ বছরের কিশোরীর দিকে ছুঁড়ে দিল পাকিস্তানি তালিবানের একটি গোষ্ঠী।
এমন প্রতিক্রিয়া অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। বছর দু’য়েক আগে এই তালিবানের গুলিতেই মরতে বসেছিল মালালা। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সোয়াট উপত্যকায় নারীশিক্ষা নিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করায় তালিবানের গুলি তার মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। দ্রুত তাকে লন্ডনে উড়িয়ে আনা হয়। প্রাণে বেঁচে যায় মালালা। কিন্তু ঘটনার দু’বছর পরও নিজের দেশে ফিরতে পারেনি সে। কারণ আজও তালিবানের বন্দুক তারই অপেক্ষায়। এমন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে নোবেলজয়ের অভিনন্দন যে সে পাবে না, তা তো জানাই ছিল। কিন্তু তা বলে এমন কটাক্ষ? তেহরিক- ই-তালিবান পাকিস্তান অবশ্য এখনও চুপ। কিন্তু তাদেরই দলছুট গোষ্ঠী জামাত-উল-আহরা গত কাল রাত থেকে মালালার সমালোচনায় মুখর। কটাক্ষের পাশাপাশি তাদের দাবি, ‘অবিশ্বাসীরা’ এই কিশোরীকে নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
এই মত অবশ্য শুধু তালিবানের নয়। পাকিস্তানের বহু বাসিন্দাই মনে করেন মালালা পশ্চিমী দুনিয়ার সৃষ্টি, ‘সিআইএ-র এজেন্ট।’ “এই ধারণার পিছনে কারণও রয়েছে।” মনে করেন মালালার গ্রাম মিঙ্গোরার সরকারি স্কুলের বিজ্ঞান-শিক্ষক গুল মকাই। “আসলে ও অনেক কিছু পেয়েছে আর সোয়াটের বাসিন্দারা এখনও নিঃস্ব।” বলে ওঠেন গুল। আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ে অঙ্কের শিক্ষিকা সাইমা খানের গলাতেও। “যে দিকেই শোনো, শুধু মালালা, মালালা আর মালালা।...এ রকম বহু মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, সব কিছু খুইয়েছেন। তাঁদের বা তাঁদের পরিবারকে কেউ কিচ্ছু দেয়নি” বলেন সাইমা।