Advertisement
E-Paper

বন্দুক নয়, ট্রাম্প দুষছেন অবসাদকে

ট্রাম্পের ঝটপট জবাব, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে বন্দুকের সম্পর্কই নেই। আমি জেনেছি, আততায়ীর প্রবল মানসিক সমস্যা ছিল। আসলে দেশে এখন মানসিক সমস্যা ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে... গোটা বিশ্বের মতোই।’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১২
সান্ত্বনা: রক্ষা মিলেছে কোনও মতে। সাদারল্যান্ড স্প্রিংসে। ছবি: এপি।

সান্ত্বনা: রক্ষা মিলেছে কোনও মতে। সাদারল্যান্ড স্প্রিংসে। ছবি: এপি।

লাস ভেগাস, থর্নটনের পরে টেক্সাসের সাদারল্যান্ড স্প্রিংস। ফের উন্মত্ত বন্দুকবাজের গুলিতে প্রাণ গেল ২৬ জনের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে মুখ খুললেন বটে, কিন্তু ঢিলেঢালা বন্দুক আইনে রাশ টানা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না। উল্টে জানালেন, বিশ্বের অন্য আরও দেশের মতো আমেরিকাতেও মানসিক অবসাদগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে। এশিয়া সফরে থাকা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ হেন মন্তব্যের সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত কাল সকালে সাদারল্যান্ডের ফার্স্ট ব্যাপ্টিস্ট গির্জায় সবে রবিবারের প্রার্থনা শুরু হয়েছিল। আচমকাই কালো কম্যান্ডো পোশাকে সেখানে হাজির হয় বন্দুকবাজ। হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল। গির্জায় তখন ৫ থেকে ৮৫-র ভিড়। গির্জায় ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে বন্দুকবাজ। প্রার্থনার মাঝে আচমকা এই হামলায় শুরু হয় হুড়োহুড়ি। মুহূর্তেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন অনেকে। আর্তনাদের মাঝেই স্থানীয় এক বাসিন্দা নিজের বন্দুক নিয়ে হামলাকারীকে আক্রমণ শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এর পরই নিজের বন্দুক ফেলে গাড়িতে উঠে চম্পট দেয় ওই বন্দুকবাজ।

তাতেও ক্ষান্ত হননি ওই সাহসী ব্যক্তি। ওই সময় গির্জার সামনে দিয়েই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় যুবক জনি ল্যাঙ্গেনডর্ফ। জনির গাড়ি থামিয়ে ওই ব্যক্তি তাঁকে হামলাকারীর গাড়ি ধাওয়া করতে বলেন। জনি বলেছেন, ‘‘হামলাকারীর গাড়ি প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম। এমন সময় একটি গর্তে পড়ে আটকে যায় ওর গাড়ি। আমার পাশের ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে ওর দিকে বন্দুক তাক করে ওকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলে। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। কিছু ক্ষণ পরে বুঝতে পারি, ও মারা গিয়েছে।’’ স্থানীয় এক পুলিশ কর্তার বয়ানের সঙ্গেও মিলে গিয়েছে জনির অভিজ্ঞতার বর্ণনা।


২০০৭: ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্র সেউং-হুই চো-র হামলায় নিহত ৩২ জন।


২০০৯: নিউ ইয়র্কে এক অভিবাসন কেন্দ্রে হামলা জিভারলি অন্তারেজ নামে এক যুবকের। নিহত ১৩।


২০০৯: টেক্সাসের সামরিক ঘাঁটিতে গুলিবর্ষণ সেনার মেজর নিদাল হাসানের। নিহত ১৩ মার্কিন সেনা।


২০১২: ব্যাটম্যান সিরিজের ছবি ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ চলার সময়ে কলোরাডোর অরোরার সিনেমা হলে হানা বন্দুকবাজ জেমস হোমসের। নিহত ১২ জন।


২০১২: কানেকটিকাটের প্রাথমিক স্কুলে হামলা অ্যাডাম লান্জা নামে এক যুবকের। নিহত ২০টি শিশু, ছ’জন স্কুলকর্মী ও অ্যাডামের মা।


২০১৫: ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নাডিনোয় হামলা দম্পতি সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক ও তাশফিন মালিকের। নিহত ১৪।


২০১৬: ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোয় সমকামী নাইটক্লাবে হামলা বন্দুকবাজ ওমর মাতিনের। নিহত ৪৯।


২০১৭: লাস ভেগাসের মান্দালয় বে হোটেলে সঙ্গীত উৎসবে হামলা বন্দুকবাজ স্টিফেন প্যাডকের। নিহত ৫৮।


২০১৭: টেক্সাসের সাদারল্যান্ড স্প্রিংয়ের চার্চে হামলা বন্দুকবাজ ডেভিন প্যাট্রিক কেলির। নিহত ২৬।

নিহত বন্দুকবাজের নাম ডেভিন প্যাট্রিক কেলি। বয়স, ২৬। কিন্তু কী ভাবে কেলি মারা গেল, তা বুঝতে পারছে না পুলিশও। কেলির পরিচয় নিয়েও প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন বায়ুসেনার প্রাক্তন সদস্য কেলির দেহে গুলির ক্ষত রয়েছে। অথচ সে নিজে আত্মঘাতী হয়েছে, না ওই সাহসী ব্যক্তির গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মার্কিন বায়ুসেনার সদস্য ছিল কেলি। স্ত্রী আর সন্তানকে মারধরের অভিযোগে কোর্ট মার্শাল হয় তার। এক বছর জেলও খেটেছিল সে। কালকের হামলায় ব্যবহার করা রাইফেলটি সে গত বছর কিনেছিল বলে জেনেছে পুলিশ। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট আজ জানান, কেলির বন্দুকের লাইসেন্সের আবেদন খারিজ করা হয়েছিল। তা হলে সে বন্দুক কিনল কী করে? উত্তর হাতড়াচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনও।

জানা যায়নি ওই সাহসী ব্যক্তির পরিচয়ও। তবে তিনি না থাকলে কালকের হামলায় আরও অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হতো বলে মনে করছে পুলিশ। আহত কুড়ি জনের মধ্যে কয়েক জন আশঙ্কাজনক।

গত সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ট্রাক হামলায় মৃত্যু হয়েছিল আট জনের। এর দু’দিন পরে ডেনভারের কাছে থর্নটনের ওয়ালমার্টের দোকানে ঢুকে গুলি চালিয়ে তিন জনকে মেরে ফেলেছিল এক বন্দুকবাজ। চার দিনের মাথায় আরও ভয়াবহ হামলার সাক্ষী থাকল সাদারল্যান্ড স্প্রিংস। টেক্সাসের ছোট্ট আপাত শান্ত এই শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে কালকের ঘটনা। নিউ ইয়র্কে হামলার পর পরই অভিযুক্তের ফাঁসির জন্য সরব হন ট্রাম্প। অথচ কালকের হামলাকে শুধু ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’-এর কাজ বলায় ক্ষুব্ধ দেশের সাধারণ মানুষও।

টোকিওয় আজ সাংবাদিকদের স্বাভাবিক প্রশ্ন ছিল, তা হলে কি বন্দুক আইন নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবছেন প্রেসিডেন্ট? ট্রাম্পের ঝটপট জবাব, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে বন্দুকের সম্পর্কই নেই। আমি জেনেছি, আততায়ীর প্রবল মানসিক সমস্যা ছিল। আসলে দেশে এখন মানসিক সমস্যা ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে... গোটা বিশ্বের মতোই।’’

Texas Church Shooting Donald Trump Mental Illness ডোনাল্ড ট্রাম্প
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy