Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের কবি রফিক আজাদ প্রয়াত

কবি ও সম্পাদক রফিক আজাদ আর নেই। শনিবার দুপুরে দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

ঢাকা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ১৭:৩৫
Share: Save:

ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাব- ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় লেখা এ পঙক্তি কে না জানেন। এর রচয়িতা কবি ও সম্পাদক রফিক আজাদ আর নেই। শনিবার দুপুরে দীর্ঘ ১৭দিন লাইফসাপোর্টে থাকার পর মারা যান তিনি।
রফিক আজাদ ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সলিম উদ্দিন খান ছিলেন একজন প্রকৃত সমাজসেবক এবং মা রাবেয়া খান ছিলেন আদর্শ গৃহিণী। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।
ভালোবাসার কবি রফিক আজাদ মাটি, মানুষ, প্রকৃতি ও প্রেমের কবি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অসম্ভবের পায়’। এ গ্রন্থে ‘হে দরোজা’ কবিতায় তিনি লিখেছেন- সন্ধ্যে থেকে যোজন-যোজন দূরে যখন ছিলাম দেখেছি তোমার ঠোঁটে বা মনে উৎসবের আলো; দ্রুত কাছে এসে দেখি: ঠা ঠা হাসে অন্ধকার! আর‘প্রবেশ নিষেধ’ বলে জ্বলে এক রক্তচক্ষু-বালক! এই কবির ভালবাসার কবিতা দিয়ে প্রেমপত্র লিখেছেন হাজারো প্রেমিক। প্রেমিকার কাছে মেলে ধরেছেন নিজেকে অপার মমতায়। কবি রফিক আজাদ তার ‘ভালোবাসার সংজ্ঞা’- কবিতায় লিখেছেন; ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা ভিতরে-বাহিরে দুজনের হেঁটে যাওয়া; ভালোবাসা মানে ঠান্ডা কফির পেয়ালা সামনে অবিরল কথা বলা; ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও মুখোমুখি বসে থাকা।

আরও পড়ুন- কমছে নাব্যতা, বাংলাদেশে নদীর রক্ষায় নজর বিশ্বব্যাঙ্কেরও

প্রতিবাদী এই কবি তার বিপ্লবী চিন্তাকে শুধু কবিতার লেখনীতে আবদ্ধ রাখেননি ১৯৭১ এ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন কবি। কর্মজীবনে রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর সম্পাদক ছিলেন। ‘রোববার’ পত্রিকাতেও রফিক আজাদ নিজের নাম উহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন। রফিক আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে, ‘অসম্ভবের পায়ে’, ‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’, ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ভাত দে হারামজাদা কবিতাটি বহুলপঠিত, যেখানে তিনি লিখেছেন, দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে; অবশেষে যথাক্রমে খাব: গাছপালা, নদী-নালা, গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাথ, নর্দমার জলের প্রপাত; চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব-প্রধান নারী; উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ি; আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ; ভাত দে হারামজাদা, তা না হ’লে মানচিত্র খাব।

একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী এই কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। গত জানুয়ারিতে রফিক আজাদের ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হলে তাকে প্রথমে বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নেওয়া হয় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার বিকালে তাকে আনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হন কবি রফিক আজাদ। কবি রফিক আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছেন।

এর আগে হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকাল থেকেই শুরু হয় প্রচারণা- মারা গেছেন প্রিয় কবি। এ বিষয়ে দুপুর ১টায় কবির ভাতিজি নীরু সামসুন্নাহার বলেন, তিনি মারা যাননি। তবে খুবই খারাপ অবস্থা। তার সাথে কথা হওয়ার একঘন্টা পর কবিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

কবির মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে বাদ জোহর ঢাকা ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে কবির পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rafiq azad poet bangladesh passes away
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE