Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইমরান অনড়ই, নজর রাখছে সেনা

সংঘাত কমার বদলে বাড়ার সম্ভাবনা পাকিস্তানে। গত রাতের সংঘর্ষের পরে আজ ফের ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে অভিযান চালানোর ডাক দিয়েছেন ইমরান খান এবং তাহির-উল কাদরি। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল থেকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৪৫০। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সেনাবাহিনীর সব কোর কম্যান্ডারদের বৈঠক ডাকেন সেনাপ্রধান রহিল শরিফ।

নওয়াজ-বিরোধী সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন ইমরান খান। রবিবার ইসলামাবাদে। ছবি: রয়টার্স

নওয়াজ-বিরোধী সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন ইমরান খান। রবিবার ইসলামাবাদে। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

সংঘাত কমার বদলে বাড়ার সম্ভাবনা পাকিস্তানে। গত রাতের সংঘর্ষের পরে আজ ফের ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে অভিযান চালানোর ডাক দিয়েছেন ইমরান খান এবং তাহির-উল কাদরি। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল থেকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৪৫০।

পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সেনাবাহিনীর সব কোর কম্যান্ডারদের বৈঠক ডাকেন সেনাপ্রধান রহিল শরিফ। সম্প্রতি বিবাদমান দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেন সেনাপ্রধান। তার পরেই সেনার মধ্যস্থতায় সংঘাত কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে কূটনীতিকদের মতে, সেনার নিয়ন্ত্রণ বাড়ার বদলে নওয়াজের গদি বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রহিল।

১৭ দিন ধরে নওয়াজের ইস্তফার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফ ও কাদরির আওয়ামি তেহরিকের সমর্থকেরা। গতকাল রাতে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। ফলে, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে গত কাল থেকেই বিভ্রান্তি রয়েছে। আজ পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, এ পর্যন্ত তিন জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। কিন্তু কাদরির দাবি তাঁর ৭ জন সমর্থক প্রাণ হারিয়েছেন। হামলার খবর করতে গিয়ে আক্রান্তহয়েছেন সাংবাদিকরা।

নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ও গুলতি ছোড়া হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের। এখনও পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। কিন্তু গতকাল রাতে গুলি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশেরই একাংশ। প্রায় ৪৫০ জন আহত ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসলামাবাদের দু’টি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। নিরাপত্তাবাহিনীর দাবি, বিক্ষোভকারীদের হামলায় ৭০ জন পুলিশ ও ফ্রন্টিয়ার কনস্টেবুল্যারির ৫ জন জওয়ান আহত হয়েছেন।

নওয়াজ ইস্তফা না দিলে বিক্ষোভ থামানোর প্রশ্নই নেই বলে আজ সাফ জানিয়েছেন ইমরান। সমর্থকদের প্রতি তাঁর বার্তা, “গতকাল আমরা তৈরি ছিলাম না বলে সরকার শক্তিপ্রয়োগ করতে পেরেছে। আজ আমরা তৈরি। আমাদের শপথ স্বাধীনতা নয় মৃত্যু।”

তবে ইমরান যা-ই বলুন, এখনই নওয়াজকে সরানো হবে না বলেই ধারণা কূটনীতিকদের। তাঁদের মতে, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন নওয়াজ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে বাস কূটনীতির সময়ে পাক সেনাকে কার্যত গুরুত্ব দেননি নওয়াজ। পরে কার্গিল হয়ে বহু দূর গড়িয়েছিল পাক রাজনীতির জল। তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফের হাতে গদিচ্যুত হতে হয়েছিল নওয়াজকে।

তাই এ বার বিপাকে পড়েই পাক সেনার শরণাপন্ন হয়েছেন নওয়াজ। সেনাপ্রধান রহিল শরিফের সঙ্গে বৈঠক করে সাহায্য চেয়েছেন। সেনাবাহিনী কতটা নাক গলাবে তা স্থির করতেই কোর কম্যান্ডারদের বৈঠক ডেকেছিলেন সেনাপ্রধান। কূটনীতিকদের মতে, প্রশাসনে পাক সেনার আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ মেনে নেওয়ার বদলে নওয়াজ গদি বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন। ইমরান-কাদরির বিক্ষোভে পাক সেনার গোপন মদত রয়েছে বলে গত কয়েক দিন ধরে জল্পনা চলেছে কূটনীতিকদের মধ্যে। কিন্তু আজ সাউথ ব্লকের কর্তারা জানান, ইমরানের সঙ্গে পাক সেনার সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নওয়াজ প্রাক্তন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফকে আদালতে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রাক্তন প্রধান আহমেদ সুজা পাশা-সহ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইমরানকে সমর্থন করতে পারেন। কিন্তু, সেনাপ্রধান রহিল শরিফের সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক ভাল নয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি অভিযান নিয়ে ইমরানের দলে মতভেদ দেখা দিয়েছে। দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ইমরান ওই অভিযান চালিয়েছেন বলে দাবি করেন তেহরিক-ই-ইনসাফের সভাপতি জাভেদ হাশমি। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন ইমরান। কম্যান্ডারদের বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে সেনা জানিয়েছে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে। রাজনৈতিক ভাবেই এই সমস্যা মেটাতে হবে। হিংসার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

নয়াদিল্লির আশঙ্কা, গদিচ্যুত না হলেও রাজনৈতিক ভাবে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন নওয়াজ। ফলে, পাক সেনার ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ক্ষমতাই থাকবে না তাঁর। সেনাশাসিত পাকিস্তানের বদলে এই পরিস্থিতিও নয়াদিল্লির পক্ষে আদৌ শুভ নয়। তবে আমেরিকা এখনও পাক সেনার পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত না দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ভারত। সাউথ ব্লকের মতে, পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেন খতম অভিযানের পরে পাক সেনার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুরোপুরি ঠিক হয়নি। আপাতত পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা ছাড়া পথ নেই নয়াদিল্লির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

imran khan pakistan nawaz sharif
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE