Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Anti-Hijab Protests

ইরানের টেলিভিশনের সম্প্রচারে হিজাব-বিরোধী হ্যাকারদের হানা, দেশ ছাড়ার পরামর্শ খামেনেইকে

ওই সম্প্রচারে অন্য একটি ফুটেজও ভেসে ওঠে। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনের সময় ‘পুলিশের গুলিতে নিহত’ তিন মহিলার বিক্ষোভকারীর পাশাপাশি সাদা-কালো ছবিতে মাহশার মুখও দেখা গিয়েছে তাতে।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ  দিলেন হ্যাকাররা।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিলেন হ্যাকাররা। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১৮:০৮
Share: Save:

মাহশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে তুমুল বিক্ষোভের মাঝে এ বার জাতীয় টেলিভিশনেও ‘হানা’ দিলেন ইরানের হিজাব-বিরোধী আন্দোলনকারীরা। শনিবার রাতে সংবাদের সরাসরি সম্প্রচারের সময় টেলিভিশনের পর্দায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর মুখে তাঁরা বসিয়ে দিলেন চাঁদমারি চিহ্নের সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা। সেই সঙ্গে খামেনেইকে দেশ ছাড়ার বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শনিবার রাত ৯টায় খবরের সরাসরি সম্প্রচার চলাকালীন একটি ফুটেজে দেখা যায়, প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন খামেনেই। সেই সময়ই কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওই সম্প্রচারের ‘দখল’ নেন হিজাব-বিরোধী হ্যাকাররা। সুপারইম্পোজ করা ওই ফুটেজে খামেনেইর মুখের উপর ভেসে ওঠে একটি চাঁদমারির চিহ্ন। পিছনে জ্বলতে থাকে আগুনের শিখা। পাশে ফুটে ওঠে কয়েকটি লাইন— ‘‘আমাদের সঙ্গে যোগদান করুন এবং জেগে উঠুন।’’ সঙ্গে খামেনেইর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন হ্যাকাররা। দাবি করেছেন, ‘‘আপনার হাতে যুবসমাজের রক্ত লেগে রয়েছে।’’ খামেনেইকে ইরান ছাড়ার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা। তেহরানে তাঁর অফিস ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘‘পাস্তুর স্ট্রিটের অফিস থেকে আপনার আসবাবপত্র সরানোর সময় এসে গিয়েছে। নিজের পরিবারের জন্য ইরানের বাইরে কোথাও জায়গা খুঁজে নিন।’’

ওই সম্প্রচারে অন্য একটি ফুটেজও ভেসে ওঠে। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনের সময় ‘পুলিশের গুলিতে নিহত’ তিন মহিলার বিক্ষোভকারীর পাশাপাশি সাদা-কালো ছবিতে মাহশার মুখও দেখা গিয়েছে তাতে।

জাতীয় টেলিভিশনে হ্যাকিংয়ের দায় স্বীকার করেছেন ইরানের ইদালত-ই আলি নামের হ্যাকারদের একটি আন্দোলনকারী সংগঠন।

প্রসঙ্গত, ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের রাস্তায় মাহশাকে গাড়ি আটকেছিলেন ইরানের ‘নীতিপুলিশেরা’। অভিযোগ, গাড়িতে বসা পরিবারের সদস্যদের সামনেই মাহশাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানায়। মাহশার ‘অপরাধ’, ইরানের মতো ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত পোশাকবিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি। পুলিশি হেফাজতে মাহশার উপর অকথ্য অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মারা যান মাহশা। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান পুলিশ।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানের রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন অগণিত সাধারণ মহিলার নেতৃত্বে মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। তাতে ইরানের বহু পুরুষও শামিল হয়েছেন। হিজাব-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ইরানের বাইরেও বিশ্বের বহু দেশে। প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে অভিনব প্রতিবাদও দেখা গিয়েছে নানা মঞ্চে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, আন্দোলনের গতিরোধ করতে পুলিশের গুলিতে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৩৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র শুক্রবার ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলেও দাবি।

ইরানের জাতীয় টেলিভিশনে হ্যাকারদের হানার খবর সমাজমাধ্যমেও হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মিম। হ্যাকারদের ওই ফুটেজও দেখা গিয়েছে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সমাজমাধ্যমে। ইরানের একটি সংবাদ সংস্থাও স্বীকার করে নিয়েছে, ‘‘কয়েক মুহূর্তের জন্য বিপ্লব-বিরোধী এজেন্টরা হ্যাকিং করে সংবাদের সম্প্রচারের দখল নিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anti-Hijab Protests Iran Hijab Moral Policing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE