Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সীমিত হামলাই চলবে, ফের অকপট ওবামা

পুরোদস্তুর যুদ্ধ নয়। জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রিত হামলাই চালাবে আমেরিকা। শনিবার মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকারকে লেখা চিঠিতে এ কথা ফের জানালেন বারাক ওবামা। পাশাপাশি স্পষ্ট করলেন কুর্দিস্তানের রাজধানী আর্বিলে কর্মরত মার্কিন অফিসারদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।

শুরু হল শিনজার পর্বতে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধারকাজ। শনিবার। ছবি: গেটি ইমেজেস

শুরু হল শিনজার পর্বতে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধারকাজ। শনিবার। ছবি: গেটি ইমেজেস

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩১
Share: Save:

পুরোদস্তুর যুদ্ধ নয়। জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রিত হামলাই চালাবে আমেরিকা। শনিবার মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকারকে লেখা চিঠিতে এ কথা ফের জানালেন বারাক ওবামা। পাশাপাশি স্পষ্ট করলেন কুর্দিস্তানের রাজধানী আর্বিলে কর্মরত মার্কিন অফিসারদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।

বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ই অবশ্য এ কথাগুলি বলেছিলেন ওবামা। তার পর গত কাল জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে দু’দফায় অভিযান চালিয়েছে আমেরিকা। তাতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, জুন মাস থেকে চলতে থাকা আইএসআইএস জঙ্গিদের তাণ্ডব রুখতে হঠাৎ এখনই কেন উদ্যোগী হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? কারও কারও মতে, উত্তর ইরাকের ১৭টি শহর দখল করার পরে এখন তেল-সমৃদ্ধ আর্বিলের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে জঙ্গিরা। ইরাকের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের দখলও যদি জঙ্গিদের হাতে চলে যায়, সে ক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক তেলের খনি থেকে তেল-সরবরাহের সুযোগ হারাবে আমেরিকা। তা যাতে না হয়, সে জন্যই সীমিত হামলার পদক্ষেপ। প্রকাশ্যে অবশ্য কর্মী-নিরাপত্তা ও অসহায় ইরাকি বাসিন্দাদের সাহায্যের যুক্তি দিয়েছেন ওবামা। আজ দিল্লিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব চাক হাগেলও বলেন, “শুধু সাহায্য করার জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকই করতে হবে।” তাঁর আরও দাবি, আইএসআইএস-এর কাজকর্ম গোটা বিশ্বেই প্রভাব ফেলছে। তা রুখতেই আমেরিকা ইরাক সরকারকে সাহায্য করে যাবে।

তবে প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে নিরুত্তাপ ছিলেন ওবামা। পরে বুঝতে পারেন ২০১২-য় বেনগাজির মার্কিন কনস্যুলেটে যে হামলা হয়েছিল, সে রকম যদি আর্বিলের কনস্যুলেটেও হয় তা হলে তার ফল মারাত্মক হবে। তা আটকাতেই সীমিত হামলার সিদ্ধান্ত। ওবামা নিজেও গত কাল এক মার্কিন দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, লিবিয়াকে আরও বেশি সাহায্য করা উচিত ছিল আমেরিকার। তা হলে হয়তো গদ্দাফি-পরবর্তী জমানা আরও বেশি শান্তিপূর্ণ হতো। এড়ানো যেত কনস্যুলেট হামলা।

তবে লিবিয়ায় যে ‘ভুল’ হয়েছে, তা ইরাকে যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করবে মার্কিন বাহিনী। প্রয়োজনে ইরাককে আরও বেশি সেনা-সাহায্যও দেবে আমেরিকা, জানিয়েছেন ওবামা। “তবে কিছুতেই ইরাক ও সিরিয়া কোনও খলিফার হাতে চলে যেতে দেব না”, বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এ জন্য আগে যে ইরাকের শিয়া সরকারের শরিক দলগুলিকে সহমত হতে হবে, সে কথাও জানান তিনি।

কিন্তু সে ঐকমত্য কি আদৌ আছে? সন্দেহ থাকছেই। কারণ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি-অল-মালিকি আমেরিকার সীমিত হানাকে সাধুবাদ জানালেও তাঁর দলেরই এক নেতার বয়ানে, “স্বার্থ গোছাতে ময়দানে নেমেছে আমেরিকা।” আর এক নেতার দাবি, সীমিত হামলার সিদ্ধান্ত ঠিক হলেও বড় দেরি করেছেন ওবামা। সিরিয়া এবং ইরাক থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে এখন প্রবল শক্তিশালী আইএসআইএস। আকাশপথে হামলায় তাদের কত দূর রোখা যাবে, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওই নেতা।

জঙ্গিদের দাবি, মার্কিন হামলা কোনও ক্ষতি করতে পারেনি তাদের। নিজেদের মত বোঝাতে এ দিন তাদের ‘খলিফা’ আবু বকর অল-বাগদাদির বক্তৃতার ভিডিও ফের ইন্টারনেটে দিয়েছে জঙ্গিরা। সেখানেই উঠে এসেছে আমেরিকার সঙ্গে লড়তে রীতিমতো উদ্গ্রীব জঙ্গিরা।

অর্থাৎ দু’পক্ষই লড়তে প্রস্তুত। কিন্তু এর মাঝে গৃহহারা মানুষগুলোর কী হবে, তার কথা কেউ ভাবছে না। তা বাদে শিনজার পর্বতে গত আট দিন ধরে যে বিপুল সংখ্যক ইয়েজিদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন আটকে রয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত। এ দিন আকাশপথে তাঁদের দ্বিতীয় দফার ত্রাণ পাঠিয়েছে মার্কিন বাহিনী। কিন্তু এই ত্রাণে ঠিক কত টুকু লাভ? ক’জনের হাতেই বা তা পৌঁছবে, তার হিসেব নেই। ইরাকের এক এমপি-র দাবি, দু’এক দিনের মধ্যে তাঁদের উদ্ধার না করতে পারলে মৃত্যুমিছিল শুরু হবে শিনজার পর্বতে। আশার কথা এ দিন বিপজ্জনক পরিস্থিতির মাঝেই বহু শিনজার পর্বতে আটকে থাকা বহু ইয়াজিদিকে উদ্ধার করেছে কুর্দিশ বাহিনী। ইরাকের সেনার সঙ্গে যৌথ ভাবে জঙ্গি দখলে যাওয়া এলাকা পুনরুদ্ধারের কথাও ভেবেছে তারা।

কিন্তু তাতেও কি থামবে জঙ্গি-বিক্রম? উত্তর অনিশ্চিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

obama washington militants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE