বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধিতার সব চেয়ে বড় মুখ গোলাম আজমের মৃত্যুতে উচ্ছ্বাস ও খুশির সঙ্গে হতাশাও জানিয়েছে ছাত্র-যুবদের কোনও কোনও মহল। তাঁর নিজের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরগাঁওয়ের মানুষ ঘোষণা করেছেন, সেখানকার মাটিতে তাঁরা এই রাজাকার শিরোমণিকে কবর দিতে দেবেন না। গোলাম আজমের ছেলে অবশ্য জানিয়েছেন, মগবাজারে মামার বাড়ির কবরখানাতেই শেষকৃত্য করা হবে এই নেতার। বীরগাঁও গ্রামে বাড়ি হলেও মামার বাড়িতেই জন্মেছিলেন গোলাম আজম।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মারা যান জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা গোলাম আজম। ৯২ বছরের এই নেতাকে মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য ৯০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত বলেছিল, আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য হলেও বয়স বিবেচনায় ছাড় দেওয়া হল। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জামাতে ইসলামির সর্বোচ্চ আমির পদে ছিলেন গোলাম আজম। পাক বাহিনীর সহচর হিসেবে রাজাকার, আল বদর, শান্তি বাহিনীর মতো বেশ কিছু ঘাতক দল গড়ে তিনি স্বাধীনতাকামীদের নিকেশ করার অভিযান শুরু করেছিলেন।
বাংলাদেশ গঠনের ঠিক আগে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন শীর্ষ এই জামাত নেতা। পরে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফেরেন। সে সময়ে তাঁর ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে হঠে। শহিদ-জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা তাঁর গণবিচার করে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলেও ফাঁসি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার আপিল করার পরে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তিনি স্বাভাবিক ভাবে মারা যাওয়াতে হতাশ একাধিক মুক্তিযুদ্ধ-পন্থী সংগঠন।
ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবীরের কথায়, মানবতা-বিরোধীদের শীর্ষ নেতার মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ আফশোস করছেন। কারণ তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানোর শপথ নিয়েছিলেন লাখো দেশবাসী। শাহবাগ আন্দোলনের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও বলেছেন, “ঘৃণিত এই নেতার ফাঁসিতে মৃত্যুই চেয়েছিলেন দেশের অসাম্প্রদায়িক মুক্ত চেতনার মানুষেরা। তা না হওয়াতে সকলেই হতাশ।” বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গোলাম আজমের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভিড় জমান শয়ে শয়ে ছাত্র। তাঁরা উল্লাসে স্লোগান দিতে থাকেন, গোলামের ছবিতে জুতো ও ঝাঁটাপেটা করা হয়। তার পরে ছাত্ররা শাহবাগ চত্বর হয়ে মিছিল করে শহর পরিক্রমা করেন।
জামাতে ইসলামি শোক প্রকাশ করলেও শীর্ষ রাজাকার গোলাম আজমের মৃত্যুতে মুখবন্ধ রেখেছেন তাদের শরিক বিএনপি। তবে বিএনপি-র কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজশাহির মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঢাকায় জামাতের অফিসে শোক জানাতে গিয়ে প্রকাশ্যেই কান্নাকাটি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy