Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বন্ধু’ বলছেন ট্রাম্প, তবু মোদীর কাজটা কাল বেশ চ্যালেঞ্জের

ভারতকে ট্রাম্প প্রশাসন ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না- এ জাতীয় ভাবনাকে আলাদা করে প্রশ্রয় দিতে না বলার পিছনে সেই সাবধানতাই কাজ করছে। যদিও মোদী যেমন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, তেমনই ট্রাম্পের তরফেও এই সাক্ষাৎকে ঘিরে বেশ কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

মোদী-ট্রাম্পের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। ছবি: এএফপি।

মোদী-ট্রাম্পের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। ছবি: এএফপি।

প্রসেনজিৎ সিংহ
ফিলাডেলফিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১৪:৩২
Share: Save:

আমেরিকা-ভারত যুগলবন্দি কতটা সুরে বাজবে আগামী সাড়ে তিন বছর, তার ধরতাইটা ঠিক হবে সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় (ভারতীয় সময় রাত একটা)। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম বৈঠকে। ধরতাই এ জন্য যে, ট্রাম্পের আগামী সাড়ে তিন বছরের কার্যকালে বিশ্বব্যবস্থায় কত রকমের উত্থান-পতন ঘটতে পারে, তার খবর আগাম বলা তো সম্ভব নয়! তবে ট্রাম্প জমানায়, প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম— এই দুই গণতান্ত্রিক দেশ মুখোমুখি হচ্ছে প্রথমবারের জন্য। এই বৈঠককে যথাসম্ভব ফলপ্রসূ করতে দু’তরফেই যথেষ্ঠ সাবধানতা রয়েছে।

সাবধানতা এ জন্য, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমেরিকার পদক্ষেপ ভারতকে খুব একটা স্বস্তি দিতে পারেনি। হয়তো উল্টোটাও।

ভারতকে ট্রাম্প প্রশাসন ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না- এ জাতীয় ভাবনাকে আলাদা করে প্রশ্রয় দিতে না বলার পিছনে সেই সাবধানতাই কাজ করছে। যদিও মোদী যেমন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, তেমনই ট্রাম্পের তরফেও এই সাক্ষাৎকে ঘিরে বেশ কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। লাল কার্পেট ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছে নৈশভোজের বিশেষ ব্যবস্থা। টুইটে ভারতকে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ বলেও লিখেছেন ট্রাম্প। তবে শৈত্য কাটানোর এই ব্যবস্থা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শেষ পর্যন্ত কতটা উষ্ণতা দেবে, তার আঁচ খানিকটা হলেও পাওয়া যেতে পারে সোমবার রাতে ট্রাম্পের টুইটার হ্যন্ডলে।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরেই আমেরিকায় এসেছিলেন মোদী। তখন দ্বিতীয়বারের জন্য ওভাল অফিসে আসীন ওবামা। খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, তাঁদের প্রথম বৈঠকে প্রধানত যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, এ বারে দুই শীর্ষনেতৃত্বের বৈঠকেও আলোচ্যসূচি তার থেকে খুব দূরে নয়। পূর্বতন প্রেসিডেন্টের সময়কালে একটা সময় পর্যন্ত মোদীর আমেরিকা ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞাও বলবৎ ছিল। সেই বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল বুশ জমানায়। এহেন অবস্থা থেকে মোদী দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছিলেন। নির্বাচনে তাঁর বিপুল জয়ের পরে এক সময় প্রায় নিঃশব্দেই ওবামা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয়। বলতে কী, এর পর ওবামা-মোদী দু’টি দেশের মধ্যে যে সু-সম্পর্কের সূচনা করেন, দু’দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে তা বিরল। ভারতের বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও সেটা ছিল বেশ বড় রকমের পরিবর্তন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বণিক মহলের সঙ্গে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

কিন্তু সেই সু-সময় ট্রাম্পের আমলেও সমানভাবে বজায় রয়েছে, এমন কথা বলার সময় এখনও আসেনি। বরং, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে কিছু অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে নয়া দিল্লিরও। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবের আগাম আঁচ পেয়ে ভারত কিছুটা সংযত। আমেরিকার মাটিতে অনাবাসী ভারতীয়দের নিয়ে মোদীর চোখ ধাঁধানো সভা (ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন বা পরে সান হোসে’র বিপুল অনাবাসী সমাবেশ) যা ওবামার সময়ে আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তার নমুনা হিসাবে পেশ করা গিয়েছিল, এ বার সে রকম কিছু থেকে বিরতই থাকছে ভারত।

আমেরিকার বর্তমান বিদেশনীতি পুরোপুরি পড়ে ওঠা এখনও ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে তা কোন পথে এগোবে সেটা বোঝার জন্য যে স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল, তা এখনও দেখতে পায়নি ভারত। সেটাও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বচ্ছতার একটা বড় কারণ।

এশিয়া অঞ্চলে চিনের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণে ওবামা প্রশাসন এক সময় ভারতকে যে ভাবে সম্ভাব্য মার্কিন-সহযোগী হিসাবে দেখতে শুরু করেছিল, ট্রাম্প প্রশাসন কিন্তু সেই অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছে। যাদের নিয়ে ভারতের মাথাব্যথা, সেই চিন বা পাকিস্তানকে ট্রাম্প প্রশাসন কী চোখে দেখছে বা ভবিষ্যতে দেখবে, সেটাও ভারতের কাছে স্পষ্ট নয়। যদিও ওই সম্পর্কগুলোর কোনওটাই একমাত্রিক নয়। অর্থাৎ জলবায়ু চুক্তি কিংবা উত্তর কোরিয়ার উদ্বেগজনক মনোভাব কিংবা বিশ্ববাণিজ্যের মতো প্রশ্নে তা ভিন্ন ভিন্ন।

আরও পড়ুন: সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি কোনও দেশ, আমেরিকায় মোদী

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের চিন বিরোধিতা ভারতের কাছে যতটা স্বস্তির ছিল, এখন অবস্থানটা ততটা সুখকর নয়। উত্তর কোরিয়ার ‘বিপজ্জনক’ পরমাণু কর্মসূচি প্রতিহত করতে এখন সেই চিনকেই পাশে পেতে চায় আমেরিকা। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা-বাণিজ্যের ‘ফুটনোট’ হিসাবে ওয়াশিংটন ঘোষণা করে, এই চুক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও রকম প্রভাব ফেলবে না। তা হলে ভারতের হাতে কী রইল?

আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের অবস্থানকে আগামী দিনে কতটা মজবুত করতে পারবেন মোদী, তারও একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হবে ওভাল অফিসে। এই বৈঠকের হাত ধরে সেই অবস্থান ভারতের কতটা অনুকূলে আনা যায়, সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ এখন মোদীর সামনে।

প্রতিরক্ষা বাণিজ্য এ বারের বৈঠকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারই সূত্র ধরে ভারতের পুঁজিনিবেশের পরিবেশ আরও উদার করার ব্যাপারে চাপ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের এক প্রতিনিধিদল ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছে। ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে, তাঁরা ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট উল্লেখ করেছেন, যেখানে বিনিয়োগ-অনুকূল পরিবেশের নিরিখে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩০। তাঁদের কাছে ভারতে বিনিয়োগের বিষয়টি এখনও ‘জটিলতায় ভরা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

আমেরিকার অগ্রগণ্য কোম্পানিগুলির সিইও’দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। প্রায় একই রকম বৈঠকে বসবেন মোদীও। হোয়াইট হাউসের কাছেই উইলার্ড হোটেল। দুই বৈঠকের আমন্ত্রিতের তালিকায় অনেকেই মিল। মোদীর ওই বৈঠকে নিশ্চিতভাবেই উঠে আসবে এইচওয়ান-বি ভিসার বিষয়টি। তার পরে বিষয়টি মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে উঠবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে হোয়াইট হাউসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,বিষয়টি উঠলে তারা জবাব নিয়ে তৈরি।

এই বৈঠক শেষ পর্যন্ত কোনও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রইলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE