Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বহু বার ঠিকানা ও ডিরেক্টর পাল্টেছেন নীরব

লন্ডনের অভিজাত বন্ড স্ট্রিট এলাকা। সেখানেই এখন নীরব মোদীর ব্রিটিশ সংস্থার ‘সরকারি ঠিকানা’। তবে রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, বারবার বদলেছে সংস্থার ঠিকানা। ক্রমাগত পাল্টে গিয়েছে সংস্থার বিদেশি ডিরেক্টরদের নামও। 

লন্ডনের রাস্তায় এই বেশেই দেখা গিয়েছে নীরব মোদীকে। —ফাইল চিত্র

লন্ডনের রাস্তায় এই বেশেই দেখা গিয়েছে নীরব মোদীকে। —ফাইল চিত্র

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

লন্ডনের অভিজাত বন্ড স্ট্রিট এলাকা। সেখানেই এখন নীরব মোদীর ব্রিটিশ সংস্থার ‘সরকারি ঠিকানা’। তবে রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, বারবার বদলেছে সংস্থার ঠিকানা। ক্রমাগত পাল্টে গিয়েছে সংস্থার বিদেশি ডিরেক্টরদের নামও।

সংস্থার নাম ‘নীরব মোদী লিমিটেড’। স্পেশ্যালিটি স্টোর, অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ বিপণিতে এই সংস্থাটি ‘গয়না ও ঘড়ি’ বিক্রি করবে বলে রেজিস্ট্রেশন নথিতে লেখা রয়েছে। সংস্থাটি নথিভুক্ত করা হয় ২০১৪-র ১৩ নভেম্বর। ২০১৬-র ১৫ জানুয়ারি, শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা পেশ করা হয়। ২০১৮-র ১ ডিসেম্বর আয়কর রিটার্নও দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেবও দাখিল করা হয়েছে।

অর্থাৎ, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রিটেনে ব্যবসা করছেন নীরব। ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া বা ভারতের প্রত্যার্পণ মামলায় লড়ার সময়ে তিনি এই সব নথিই পেশ করবেন। গত বছর জুলাইয়ে ঋণখেলাপি নীরবকে প্রত্যর্পণ করার আর্জি জানিয়েছে ভারত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ দাভেদের কাছে সেই আর্জি জমা পড়েছিল। এখন ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে রয়েছে সেই মামলা।

রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, নীরবের সংস্থাটির ঠিকানা ও ডিরেক্টর বারবার পাল্টানো হয়েছে। যখন সংস্থাটি নথিভুক্ত হয়, ঠিকানা ছিল ‘দত্তানি বিজ়নেস সেন্টার, স্কটিশ প্রভিডেন্ট হাউস, কলেজ রোড, হ্যারো’। ডিরেক্টরের নাম হিমাংশু ত্রিবেদী। ঠিকানা শঙ্কর লেন, কান্ডিভোলি, মুম্বই। ২০১৪-র ১৪ নভেম্বর থেকে তিনি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন।

২০১৬-র ৩০ নভেম্বরের একটি নথিতে নীরবকে সংস্থার ‘মূল পরিচালক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সংস্থার মূলধন এখন ৩০ লক্ষ পাউন্ড (এখন বেড়ে হয়েছে ৮০ লক্ষ পাউন্ড)। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্থায় আসছেন নতুন দুই ডিরেক্টর— মিহির ভংসালী ও অজয় গাঁধী। দু’জনেই মার্কিন নাগরিক। দু’জনেরই যোগাযোগের ঠিকানা আমেরিকায়।

২০১৭-র ৩০ মে ত্রিবেদীকে ডিরেক্টর পদ থেকে সরিয়ে নতুন ডিরেক্টর করা হয় হংকংয়ের বাসিন্দা এবং ফরাসি নাগরিক, ৫৮ বছর বয়সি অ্যাঞ্জেলিনা গুয়েনকে। ২০১৮-র মার্চে সরিয়ে দেওয়া হয় অ্যাঞ্জেলিনা, মিহির ও অজয়কে। নতুন ডিরেক্টর করা হয় মার্কিন নাগরিক অ্যান্টনি অ্যালিকককে। এখনও তিনিই ডিরেক্টর পদে রয়েছেন।

২০১৮-র গোড়াতেই নীরবের ঋণখেলাপের কথা প্রকাশ্যে আসে। সে বছরই ৩ এপ্রিল সংস্থাটির ঠিকানা হ্যারো থেকে ৩১, ওল্ড বন্ড স্ট্রিট, লন্ডনে পাল্টানো হয়। গয়নার দোকান ও বিভিন্ন ডিজ়াইনার বিপণির জন্য বিখ্যাত এই রাস্তা। এই ঠিকানায় একটি দোকানও খুলেছিলেন নীরব। সেই দোকানটি অবশ্য আর নেই।

আজ কংগ্রেস দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করে, ‘প্রধানমন্ত্রীর মেহুল ভাই’ (আর এক ঋণখেলাপি, নীরব মোদীর মামা মেহুল চোক্সী) লন্ডনে ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁর নতুন সংস্থার ঠিকানা দুবাইয়ে। তা হলে কেন দুবাই বা ব্রিটেনের কাছে মেহুলকে প্রত্যর্পণের আর্জি জানাচ্ছে না কেন্দ্র? কেন এই আর্জি জানানো হচ্ছে অ্যান্টিগুয়ার মতো দেশের কাছে, যাদের সঙ্গে দিল্লির প্রত্যর্পণ চুক্তিই নেই? কংগ্রেসের যুক্তি, এ সবই নরেন্দ্র মোদীর ‘মেহুল ভাই’ এবং আর এক মোদী (অর্থাৎ, নীরব)—‘যিনি নরেন্দ্র মোদীর মতোই দামি জ্যাকেট পরেন’— তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirav Modi PNB Scam Britain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE