বিভিন্ন দেশ থেকে এসে পৌঁছনো অনুদানের উপর এত দিন নির্ভর করেছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি। গত ২০ বছর ধরে দেশটি নিরন্তর যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। অনেকেই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আশ্রয় হারিয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ শেষের পর আফগানিস্তানে এমন এক সরকার প্রয়োজন ছিল, যাদের আন্তর্জাতিক সংযোগ ভাল। যারা অনুদানের অর্থ কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু তালিবানি শাসনে তা সম্ভব হচ্ছে না। যে তালিবানের নামের সঙ্গে হত্যালীলা, সন্ত্রাস চালানোর ঘটনা জরিয়ে রয়েছে, তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কী ভাবে রাখা হবে তা বুঝে উঠতেই পারছে না অধিকাংশ রাষ্ট্র। অথচ প্রায় ১০০ কোটি ডলারের অনুদানের অনুমোদন ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গুতেরেস।
ধুঁকছে অর্থনীতিও। সীমান্ত পেরিয়ে যে সব বাণিজ্য নিয়মিত চলত, তা তালিবান শাসনে বন্ধ হয়েছে। ঝাঁপ পড়েছে বহু স্থানীয় ব্যবসারও। কাবুল থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরত্বে ওয়ার্ডাক প্রদেশের এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘এখন এলাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। এতে আমরা এখন কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করছি। কিন্তু গ্রামে মানুষের হাতে কোনও কাজ নেই। উপার্জন নেই।’’ এর উপর আটা, ডালের মতো দৈনন্দিন খাবারের দাম বেড়েছে। ওই গ্রামবাসী বলেছেন, ‘‘স্থানীয় বাজারে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে আটা। মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা। চাল-ডালের দামও বাড়ছে। তবু বেঁচে থাকতে হবে। তাই আমরা এখন কম খাওয়ার অভ্যাস করছি।’’
হাসপাতালগুলি জানাচ্ছে, অপুষ্টিজনিত রোগ বরাবরই বেশি ছিল আফগানিস্তানে। যে হাসপাতালগুলিতে সেই রোগের চিকিৎসা হত, সেখানে আর তিল ধারণের জায়গা নেই। এ প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের বৈঠকে ইউনিসেফের প্রধান জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ১ কোটি শিশু নিয়মিত খাওয়া দাওয়া বিদেশ থেকে আসা আর্থিক অনুদানের উপর নির্ভর করে। আফগানিস্তান এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে, তা চলতে থাকলে এ বছরই অন্তত ১০ লক্ষ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। খাবারের অভাবে তাদের মৃত্যুও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউনিসেফ প্রধান।