নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে বন্দুকবাজ, লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত মানুষ, আর সেই ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ির ড্রইংরুমে! নাশকতার ভিডিয়োর এই সরাসরি সম্প্রচারের নজির খুব একটা নেই। আর ঠিক এই কাজটিই করল নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা চালানো বন্দুকবাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি চালানো শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় এই লাইভ সম্প্রচার। ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে ঢুকে গাড়ি পার্ক করার সময় থেকেই সক্রিয় করে দেওয়া হয় একটি ইন্টারনেট লিঙ্ক। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই তার কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছিল পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে।
হিংসার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড পুলিশকে বিব্রত করেছে বন্দুকবাজের এই গতিবিধিও। তার গুলিতে সাধারণ মানুষের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন সারা দুনিয়ার মানুষ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, হেলমেটে লাগানো গো-প্রো ক্যামেরা থেকেই গুলিচালনার লাইভ ভিডিয়ো তুলেছে এই বন্দুকবাজ।

বন্দুকবাজের তোলা লাইভ ভিডিয়ো থেকে নেওয়া তার গাড়ির ভিতরের ছবি, দেখা যাচ্ছে বন্দুক। ছবি: এপি।
আরও পড়ুন: সেনার পোশাকে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে বন্দুকবাজের হামলায় হত ৬, রক্ষা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের
বন্দুকবাজের হামলা আমেরিকাতে স্বাভাবিক ঘটনা হলেও নিউজিল্যান্ডে খুব একটা পরিচিত দৃশ্য নয়। সন্ত্রাসের শিকড়ও খুব একটা জমিয়ে বসেনি এই আপাত শান্ত দেশে। তাই এই ভয়াবহ হত্যালীলা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সারা দেশ। একই সঙ্গে যে ইন্টারনেট লিঙ্কটির মাধ্যমে দেখানো হচ্ছিল এই নৃশংসতার ছবি, সেই লিঙ্কটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছিল দ্রুত গতিতে।
শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে নিউজিল্যান্ড পুলিশই। টুইট করে তাঁরা জানান, ‘ক্রাইস্টচার্চে হামলার যে ছবি অনলাইনে দেখানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত অস্বস্তিকর। আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই ভিডিয়োর লিঙ্কটি না ছড়ানোর আবেদন রাখছি। যে সমস্ত ছবি ইতিমধ্যেই অনলাইনে প্রকাশ পেয়েছে, তা সরানোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি।’
Police are aware there is extremely distressing footage relating to the incident in Christchurch circulating online. We would strongly urge that the link not be shared. We are working to have any footage removed.
— New Zealand Police (@nzpolice) March 15, 2019
হামলার এই সম্প্রচার বন্ধ করতে শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের দ্বারস্থ হয় নিউজিল্যান্ড পুলিশ। কারণ, ফেসবুক থেকেই চালানো হচ্ছিল এই লাইভ সম্প্রচার। নিউজিল্যান্ড পুলিশের কাছ থেকে এই লাইভ সম্প্রচারের বিষয়টি জানার পরই ব্যবস্থা নেয় ফেসবুক। টুইট করে তারা জানায়, ‘হামলা শুরু হওয়ার পরই আমাদের সতর্ক করে পুলিশ। তার পরই আমরা বন্দুকবাজের ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিই। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হামলার ভিডিয়োও।’
Police alerted us to a video on Facebook shortly after the livestream commenced and we quickly removed both the shooter’s Facebook and Instagram accounts and the video. We're also removing any praise or support for the crime and the shooter or shooters as soon as we’re aware.
— Facebook Newsroom (@fbnewsroom) March 15, 2019
খবর পাওয়া পর্যন্ত ঠিক ক’জন এই হামলা চালিয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে এখন কিছু জানাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড পুলিশ। নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্তও চলেছে গুলির লড়াই। ফেসবুক এই ভিডিয়ো সরিয়ে নিলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে নিউজিল্যান্ড পুলিশের হাতে বন্দুকবাজের ধরা পড়ার দৃশ্য।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হত্যালীলা, ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের সামনে। ছবি: এপি।
ইতিমধ্যেই এই হামলার ঘটনাটিকে দেশের অন্ধকারতম দিনগুলির মধ্যে একটি বলে বিবৃতি দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্দের্ন। যদিও কী উদ্দেশ্যে কারা এই হামলা চালিয়েছে তা এখনও জানায়নি নিউজিল্যান্ড সরকার। নিউজিল্যান্ডের সংবাদপত্র দ্য হেরাল্ড অবশ্য জানাচ্ছে, এক জন বন্দুকবাজ অস্ট্রেলীয় নাগরিক। কেন এই বন্দুক হামলা, তা জানিয়ে ইন্টারনেটে একটি ইস্তাহারও প্রকাশ করেছে সে। সেই ইস্তাহারে সে চরম দক্ষিণপন্থী মতাদর্শের কথা লিখেছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিদেশিদের থাকতে দেওয়ার বিরুদ্ধেও নিজের চরমপন্থী অবস্থানের কথা প্রকাশ করেছে এই বন্দুকবাজ।