Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাসে ‘ইউনাইটেড’ ম্যাঞ্চেস্টার

সন্ত্রাসের বিভীষিকা এর আগে এতটা নাড়িয়ে দেয়নি ম্যাঞ্চেস্টারকে। ১৯৯৬ সালে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র। তবে আগে থেকেই সতর্ক থাকায় সে বার জখম হয়েছিলেন মাত্র এক জন।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০৪:২২
Share: Save:

সন্ত্রাসের বিভীষিকা এর আগে এতটা নাড়িয়ে দেয়নি ম্যাঞ্চেস্টারকে। ১৯৯৬ সালে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র। তবে আগে থেকেই সতর্ক থাকায় সে বার জখম হয়েছিলেন মাত্র এক জন। সোমবার রাতের এই সন্ত্রাস সে তুলনায় বহু গুণ বেশি ভয়াবহ। মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্র্যান্ডের কনসার্ট শুনতে এসে এ দিন আইএস জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। প্রথমটা শিউরে উঠলেও খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা শহর এসে দাঁড়িয়েছে আক্রান্তদের পাশে।

জখমদের আশ্রয় দিতে এগিয়ে এসেছে ম্যাঞ্চেস্টার এরিনার আশপাশের হোটেলগুলি। বছর চব্বিশের আরিয়ানার শ্রোতাদের তালিকায় কমবয়সিরাই সংখ্যায় বেশি। অনেকেই কনসার্ট শুনতে এসেছিলেন বাবা-মায়ের হাত ধরে। হামলার পরে বড়দের কাছছাড়া হয়ে যাওয়ায় কার্যত দিশেহারা তাঁরা। তাঁদের আশ্রয় দিতে নিজেদের ফাঁকা ঘর খুলে দিচ্ছেন শহরবাসী। কেউ বা বাড়ির বাইরে বার করে রেখেছেন সোফা। টুইটারেও ঘুরে বেড়াচ্ছে সাহায্যের আশ্বাস। আইএস তাণ্ডবে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলিকে সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যেই টাকা তোলা শুরু করেছেন শহরের মানুষ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তৈরি হয়েছে পেজ। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই তহবিলে জমা পড়েছে ১৯ লাখ টাকার বেশি। আহত ৬০ জনের চিকিৎসা চলছে শহরের ৮টি হাসপাতালে। জখমদের অনেকের অবস্থাই অাশঙ্কাজনক। প্রায় ৪০০ পুলিশের চেষ্টায় গত রাতেই ওই প্রেক্ষাগৃহ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের সকলকে।

এই বিপদ থেকে উদ্ধারে পথে নেমেছেন স্থানীয় ট্যাক্সি চালকেরাও। বিনা ভাড়ায় জখমদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছেন তাঁরা। ম্যাঞ্চেস্টারের অধিকাংশ ট্যাক্সিচালকই মুসলমান। ইসলামি জঙ্গি সন্ত্রাসের ক্ষত মুছতে তাঁরাই এখন সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। যেমন, স্যাম আরশাদ। গত রাত থেকে তাঁর ট্যাক্সিতে এরিনা কনসার্ট হল থেকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছেছেন বহু মানুষ। ৬০ লাখের এই শহরে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দু’টি ফুটবল ক্লাব। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। সন্ত্রাসে বিক্ষত শহরে একজোট আজ চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ক্লাবও। শহরের মেয়র থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, সকলের গলাতেই আজ এক সুর।

আরও পড়ুন:ফের আইএস হানা ব্রিটেনে

মেয়র অ্যান্ডি বামহ্যাম বলেছেন, ‘‘হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যে অচেনা-অজানা মানুষের জন্য দরজা খুলে দিয়েছেন এই শহরের বাসিন্দারা। আমাদের যারা আলাদা করতে চেয়েছিল, যোগ্য জবাব পেয়েছে তারা। আমরা একজোটই আছি। আমরা ওদের জিততে দেব না।’’

একই প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র গলাতেও, ‘‘ম্যাঞ্চেস্টার তথা ব্রিটেনের প্রাণশক্তিতে অতীতে কোনও দিন টান পড়েনি। ভবিষ্যতেও পড়বে না। আমরা প্রত্যেকে রয়েছি ম্যাঞ্চেস্টারের পাশে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE