Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
International News

৩ দশকে চরম দুর্দশায় পড়বেন ৬০ কোটিরও বেশি ভারতীয়, বলছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক

জীবনযাত্রার মান পড়তে চলেছে দেশের অন্তত ৬০ কোটি মানুষের। গড় জাতীয় আয় (জিডিপি) পড়তে চলেছে কম করে ২.৮ শতাংশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ১৭:৪৬
Share: Save:

জলবায়ু যে ভাবে দ্রুত বদলাচ্ছে, তাতে আর ৩০/৩২ বছরের মধ্যে ভারতে যে সরকারই কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তার সাফল্য নিয়ে বড়াই করার ‘সেরা অস্ত্র’টি হাতছুট হতে চলেছে!

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে বলে চাষযোগ্য জমি দ্রুত উর্বরতা হারাচ্ছে। ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়লেও তার সুফল চোখে পড়ছে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তাতে ফসল উৎপাদন কমার সম্ভাবনা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ফলে, কৃষিনির্ভর ভারতে আগামী তিন দশকে গড় জাতীয় আয় (জিডিপি) পড়তে চলেছে কম করে ২.৮ শতাংশ। জীবনযাত্রার মান পড়তে চলেছে দেশের অন্তত ৬০ কোটি মানুষের।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টের শিরোনাম- ‘সাউথ এশিয়াজ’ হটস্পটস’। ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাব ২০৫০ সালের মধ্যে কতটা পড়তে চলেছে আর তা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে কোন কোন অঞ্চলে (‘হটস্পটস’), তা নিয়ে এটাই প্রথম সমীক্ষা বিশ্ব ব্যাঙ্কের।

সব কেন্দ্রীয় সরকারই সাফল্য বোঝাতে বলে, ‘‘কেমন বাড়ছি দেখো আমি!’’ বড়াই করে বছর বছর দেশের জিডিপি বাড়ানোর।

কিন্তু উত্তরোত্তর ‘জ্বর’ বাড়ছে পৃথিবীর। যাবতীয় পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুত হারে। তাপমাত্রা বাড়ছে ভারতের বিভিন্ন এলাকার। কমছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বর্ষাকালের মেয়াদ। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বদলাচ্ছে বর্যার চরিত্র। তাতে যে সময়ে যে এলাকায় যে ফসলের বীজ রোপন করার কথা, তা করা যাচ্ছে না। ফসলের উৎপাদনও হচ্ছে না প্রত্যাশামাফিক।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, তার ফলে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপির হার অন্তত ২.৮ শতাংশ কমে যাবে। আর রুজি-রোজগার খুইয়ে বা তার সুযোগ কমে যাওয়ার ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেরই জীবনযাত্রার মান পড়ে যাবে উদ্বেগজনক ভাবে।

জীবনযাত্রার মান মাপতে রুজি-রোজগারের পরিমাণের সঙ্গে ধরা হয়েছে ক্রয়ক্ষমতাকেও। জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতে কী ভাবে মানুষের আয় বেড়েছে স্বাধীনতার পর, সেই হারকেও বিবেচনায় রেখেছেন সমীক্ষকরা।

আরও পড়ুন- ফের ১০% বৃদ্ধির স্বপ্ন ফেরি প্রধানমন্ত্রীর​

রিপোর্ট বলছে, গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আর তার চরিত্র বদলে যাওয়ার ফলে আগামী ৩০/৩২ বছরের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের জীবনযাত্রার মান নেমে যাবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্তগুলি মেনে চললেও। ভারতের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছবে ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে।

কেন? কী ভাবে?

রিপোর্ট জানাচ্ছে, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যে ভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আর এলাকাভেদে তার চরিত্র উত্তরোত্তর বদলে যাচ্ছে, তাতে চাষবাসে আর তেমন ফসল উঠবে না ঘরে আগামী তিন দশকে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশে ফসল উৎপাদন এতটাই মার খাবে যে, কোনও ভাবেই আর দেশের অর্থনীতি তেজি থাকতে পারবে না।

সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বিদর্ভের

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্য ভারতের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা। তার মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতি হবে বিদর্ভ এলাকার। মহারাষ্ট্রের পূর্ব প্রান্তের ওই অঞ্চলের ১০টি জেলার মধ্যে ৭টিরই অর্থনীতি পুরোপুরি বেহাল হয়ে পড়বে। এই বিদর্ভেই রয়েছে নাগপুর ও অমরাবতীর মতো অর্থনীতির নিরিখে আপাতত এগিয়ে থাকা দু’টি ডিভিশন। মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশই রয়েছে এই বিদর্ভে। সমৃদ্ধশালী মহারাষ্ট্রের মোট এলাকার সাড়ে ৩১ শতাংশেরও বেশি বিদর্ভ অঞ্চল।

বিদর্ভের ১০টি জেলার মধ্যে যে ৭টি জেলা অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে চন্দ্রপুর, ভান্ডারা, গোন্ডিয়া, ওয়ার্ধা ও নাগপুর। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে চন্দ্রপুরের। জীবনযাত্রার মান সেখানে পড়বে ১২.৪ শতাংশ।

কোন কোন রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা?

রিপোর্ট বলছে, রাজ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে ছত্তীসগঢ়ের। তার পরেই রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পঞ্জাব। জীবনযাত্রা মান সবচেয়ে বেশি নামবে ছত্তীসগঢ়ে, ৯.৪ শতাংশ হারে। মধ্যপ্রদেশে ৯.১ এবং রাজস্থানে ৬.৪ শতাংশ হারে। সেই নিরিখে অবশ্য কিছুটা এগিয়ে রয়েছে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর রাজ্য পঞ্জাব। সেখানকার অর্থনৈতিক ক্ষতির হার তুলনায় একটু কম হবে- ৩.৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন- চিনকে পিছনে ফেলে বৃদ্ধিতে দ্রুততম ভারত​

‘হটস্পটস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে রিপোর্টে?

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তার ধরনের রদবদলের দরুন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতের যে যে এলাকাগুলি আর তিন দশকের মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সবচেয়ে বেশি, নেমে যেতে পারে সেখানকার জীবনযাত্রার মান, বিশ্ব ব্যাঙ্কের ওই রিপোর্টে সেই অঞ্চলগুলিকে বলা হয়েছে ‘হটস্পটস’। কোন কোন এলাকায় অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা সর্বাধিক, মাঝারি আর অল্প, তার নিরিখে হটস্পটগুলিকে ভাগ করা হয়েছে তিন ভাগে। রয়েছে আরও দু’টি ভাগ। যে এলাকাগুলি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি মেলেনি এবং যে এলাকাগুলি হটস্পট নয়।

ভারতের সম্ভাব্য হটস্পটগুলির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎও দু’ভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষায়। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে ব্যবস্থাগুলি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলি নিলে কোন কোন এলাকা ভারতে আর তিন দশকের মধ্যে হটস্পট হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। দেখা হয়েছে, ওই সব ব্যবস্থা একেবারেই না নেওয়া হলে বা তা প্রত্যাশামাফিক না হলে হটস্পট হয়ে উঠতে পারে ভারতের কোন কোন এলাকা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তথ্যসূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট (‘সাউথ এশিয়াজ’ হটস্পটস’)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE