Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

চল্লিশ দিন পরে মিলন মা-শিশুর

মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশেই আরও হাজার দুয়েক শিশুর মতো কিরি ও তার দাদা এলমারকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল মায়ের থেকে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
বস্টন শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

ছটফট করছে কিরি। কত দিন মাকে দেখেনি সে। বস্টনের লোগান বিমানবন্দরের ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা। পাশে দাদা এলমারেরও অধৈর্য লাগছে। একবার বোনের দিকে তাকাচ্ছে, একবার বাবার দিকে। কোলের উপর রাখা এক ডজন গোলাপ। মা আসছে।

ঠিক চল্লিশ দিন আগের কথা। টেক্সাসের কুখ্যাত ম্যাকালান ডিটেনশন সেন্টারের এক অফিসার ন’বছরের কিরিকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মায়ের কোল থেকে। এই সেই অভিবাসী আটক কেন্দ্র, যেখানে খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছে বন্দি শিশুদের। মে মাসের সেই দিনটার পরে কিরির সঙ্গে আর দেখা হয়নি লুদিনের। গুয়াতেমালার বাসিন্দা লুদিনের পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেআইনি ভাবে তারা আস্তানা গেড়েছে মার্কিন মুলুকে। লুদিন জানান, দু’বছর আগে গুয়াতেমালায় তাঁর স্বামী সিনিয়র এলমারের ভাই খুন হওয়ার পরে আমেরিকায় পালিয়ে আসেন তাঁরা। আইনি ভাবে আশ্রয় পেতে প্রশাসনের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন। সরকারি দফতরে সেই ফাইল এখনও পড়ে রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সেই সব শুনতে রাজি নয়। ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতিতে তাই আটক হতে হয়েছিল তাঁদেরও। মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশেই আরও হাজার দুয়েক শিশুর মতো কিরি ও তার দাদা এলমারকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল মায়ের থেকে।

প্রথমে তিন দিন একই ডিটেনশন সেন্টারের আলাদা দু’টি খাঁচায় রাখা হয়েছিল লুদিন ও তাঁর সন্তানদের। তার পর কিরি আর এলমারকে মিশিগানে ‘বেথানি ক্রিশ্চিয়ান সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এলমারের বয়স ১৭। কিন্তু কিরি খুবই ছোট। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি পরিবারের সঙ্গে থাকতে। একের পর এক ঠিকানা বদলের পরে ২০ জুন মুক্তি মেলে ভাইবোনের। বাবার হেফাজতে দেওয়া হয় কিরি ও এলমারকে। তাঁরা ম্যাসে ওয়েস্টবরোতে চলে যান। কিন্তু মা তখনও বন্দি।

গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। চাপের মুখে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে মেলানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে সেই ভাগ্যবানদের সংখ্যা নেহাতই কম। তার মধ্যে এক জন লুদিন। বললেন, ‘‘ডিটেনশন সেন্টারে অনেকে বলছিল, তোমার কী কপাল! তুমি এ বার ছেলেমেয়েকে দেখতে পাবে। ওদের জড়িয়ে ধরতে পারবে। ওরা জানেও না, সন্তান কোথায় কী ভাবে রয়েছে।’’

বুধবারই বস্টনে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল লুদিনের। কিন্তু যোগাযোগের ভুলে ঠিক সময়ে অস্টিন বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি তিনি। তাই বিমান ছেড়ে দিয়েছিল। পরের বিমানের টিকিট কেটে রাত দেড়টা নাগাদ যখন লোগান বিমানবন্দরে নামেন, ক্লান্ত-শ্রান্ত দু’টি খুদে মুখ অধীর অপেক্ষায়। মাকে দেখেই ছুটে যায় তারা। জড়িয়ে ধরে। শেষ হয় দীর্ঘ অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE