Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কটাক্ষ তালিবানের, উৎসব সত্ত্বেও অভিমানী সোয়াট

তার প্রতিটি বক্তৃতাতেই ঘুরেফিরে আসে শান্তির কথা। এমনকী সুযোগ পেলেও নিজের হামলাকারীদের ক্ষতি করতে চায় না সে। এমন মনোভাবের জন্য গত কাল নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছে মালালা ইউসুফজাই। কিন্তু মালালা কি জানে যে যাঁর নামে এই শান্তি পুরস্কার, সেই আলফ্রেড নোবেল নিজেই বিস্ফোরকের স্রষ্টা? শুক্রবার গভীর রাতে টুইটারে এমন প্রশ্নই ১৭ বছরের কিশোরীর দিকে ছুঁড়ে দিল পাকিস্তানি তালিবানের একটি গোষ্ঠী।

উৎসবের মেজাজ ইসলামাবাদে। শনিবার।  ছবি: এএফপি

উৎসবের মেজাজ ইসলামাবাদে। শনিবার। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

তার প্রতিটি বক্তৃতাতেই ঘুরেফিরে আসে শান্তির কথা। এমনকী সুযোগ পেলেও নিজের হামলাকারীদের ক্ষতি করতে চায় না সে। এমন মনোভাবের জন্য গত কাল নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছে মালালা ইউসুফজাই। কিন্তু মালালা কি জানে যে যাঁর নামে এই শান্তি পুরস্কার, সেই আলফ্রেড নোবেল নিজেই বিস্ফোরকের স্রষ্টা? শুক্রবার গভীর রাতে টুইটারে এমন প্রশ্নই ১৭ বছরের কিশোরীর দিকে ছুঁড়ে দিল পাকিস্তানি তালিবানের একটি গোষ্ঠী।

এমন প্রতিক্রিয়া অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। বছর দু’য়েক আগে এই তালিবানের গুলিতেই মরতে বসেছিল মালালা। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সোয়াট উপত্যকায় নারীশিক্ষা নিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করায় তালিবানের গুলি তার মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। দ্রুত তাকে লন্ডনে উড়িয়ে আনা হয়। প্রাণে বেঁচে যায় মালালা। কিন্তু ঘটনার দু’বছর পরও নিজের দেশে ফিরতে পারেনি সে। কারণ আজও তালিবানের বন্দুক তারই অপেক্ষায়। এমন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে নোবেলজয়ের অভিনন্দন যে সে পাবে না, তা তো জানাই ছিল। কিন্তু তা বলে এমন কটাক্ষ? তেহরিক- ই-তালিবান পাকিস্তান অবশ্য এখনও চুপ। কিন্তু তাদেরই দলছুট গোষ্ঠী জামাত-উল-আহরা গত কাল রাত থেকে মালালার সমালোচনায় মুখর। কটাক্ষের পাশাপাশি তাদের দাবি, ‘অবিশ্বাসীরা’ এই কিশোরীকে নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই মত অবশ্য শুধু তালিবানের নয়। পাকিস্তানের বহু বাসিন্দাই মনে করেন মালালা পশ্চিমী দুনিয়ার সৃষ্টি, ‘সিআইএ-র এজেন্ট।’ “এই ধারণার পিছনে কারণও রয়েছে।” মনে করেন মালালার গ্রাম মিঙ্গোরার সরকারি স্কুলের বিজ্ঞান-শিক্ষক গুল মকাই। “আসলে ও অনেক কিছু পেয়েছে আর সোয়াটের বাসিন্দারা এখনও নিঃস্ব।” বলে ওঠেন গুল। আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ে অঙ্কের শিক্ষিকা সাইমা খানের গলাতেও। “যে দিকেই শোনো, শুধু মালালা, মালালা আর মালালা।...এ রকম বহু মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, সব কিছু খুইয়েছেন। তাঁদের বা তাঁদের পরিবারকে কেউ কিচ্ছু দেয়নি” বলেন সাইমা।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরও আক্ষেপ, সোয়াটের স্কুলগুলোর উন্নতি নিয়ে সরকার এখনও মাথা ঘামায় না। সেখানকার চল্লিশ শতাংশ স্কুল এখনও সেনা দখলে। এমনকী মালালা এক সময় যে স্কুলে পড়ত, সেটিতেও সেনা ছাউনি রয়েছে। এ সব করে মালালার উদ্দেশ্য মোটেও পূরণ করতে পারছে না সরকার। অথচ তার ভাবনাচিন্তার প্রশংসা করতে ক্লান্ত হয় না তারা। এই বৈষম্য, দ্বিচারিতা সহ্য করতে পারেন না বাসিন্দারা। রাগ, ঘৃণা, ক্ষোভ সব মিলে মালালাই তাদের কাছে খলনায়িকা হয়ে ওঠে। গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে তার নোবেলজয়।

ঠিক যেমন ভাবে ১৭ বছরের কিশোরীর এই জয়কে পাত্তা দিতে চায় না চিনা সংবাদমাধ্যম। তাদের মতে গোটাটার পিছনেই কাজ করেছে মার্কিন কূটনীতি। না হলে এত অল্প বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার?

একই প্রশ্ন তুলছেন মালালার নিজের দেশের বহু বাসিন্দাই। তবে তা বলে তার নোবেলজয় নিয়ে উৎসবে খামতি নেই। শনিবার দিনভর মিঙ্গোরায় উৎসব করেছে মালালার আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীরা। তার ছবি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ বলেছেন, “এ আমাদের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি।” কিন্তু সবার গলাতেই কেমন যেন দ্বিধার সুর। কারণটা জানালেন অকাল জাদা নামে স্থানীয় রেস্তোরাঁর মালিক। “মালালাকে সমর্থন করি। ওর জন্যই আমার সব মেয়েকে স্কুলে-কলেজে পাঠাতে পেরেছি। কিন্তু এ কথা চেঁচিয়ে বলতে পারব না। ভয় হয় কখন কে শুনে নেবে? আর তার পর...”

কথা শেষ হয় না। কিন্তু স্পষ্ট হয়ে যায়, সোয়াট উপত্যকায় ত্রাসের চেহারাটা। আর নারীশিক্ষা প্রসারের প্রক্রিয়া ঠিক কতটা মন্থর। না হলে মালালার স্কুলের পড়ুয়াদের অবস্থা আজও এ রকম থাকত না। চটের উপর বসে ক্লাসে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। জানলা ভাঙা, দেওয়াল নোংরা। সরকারি উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট।

ঠিকই বলছেন কেউ কেউ। শান্তি ও সকলের জন্য শিক্ষা এই দুই লক্ষ্যে পৌঁছতে এখনও সত্যিই অনেকটা পথ হাঁটা বাকি মালালার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

islamabad Swat Malala peace prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE