Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

ইস্তাহারে কুড়মি আশ্বাস, চর্চা শাসকের অন্দরেই

তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, ইস্তাহারে স্পর্শকাতর ওই বিষয়ে শব্দচয়ন যথাযথ হয়নি। এর ফলে জঙ্গলমহলের একাংশ বাসিন্দার কাছে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা অঞ্চলের মেদীনী পারুলিয়া গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের জনসংযোগ কর্মসূচী।

বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা অঞ্চলের মেদীনী পারুলিয়া গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের জনসংযোগ কর্মসূচী। —নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৮:৩৫
Share: Save:

ভোট বড় বালাই! কুড়মি সম্প্রদায়কে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ করবে তৃণমূল। দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে এমন কথাই লেখা হয়েছে। যা নিয়ে অস্বস্তি ও বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে খোদ শাসক দলের অন্দরেই।

তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, ইস্তাহারে স্পর্শকাতর ওই বিষয়ে শব্দচয়ন যথাযথ হয়নি। এর ফলে জঙ্গলমহলের একাংশ বাসিন্দার কাছে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, কুড়মিদের দাবি পরাধীন ভারতে তাঁরা জনজাতি ছিলেন। অন্যদিকে, কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির বিরোধিতায় সরব জনজাতি সংগঠনগুলি। বিগত কয়েক দশক ধরে কুড়মিরা প্রশাসনিক মহলে এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে তাঁদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। এ জন্য হয়েছে বহু আন্দোলন, রেল-সড়ক অবরোধ, অশান্তি। ২০১৭ সালের গোড়ায় রাজ্যের তরফে কুড়মি সংক্রান্ত সিআরআই (অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের অধীনস্থ ‘কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’) রিপোর্ট কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রকে পাঠানো হয়। রাজ্যের সেই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (আরজিআই) কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে রাজ্যের কাছে উপযুক্ত মন্তব্য সহ ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান। এরপর আরজিআই গত সাত বছরে দশবার রাজ্যের কাছে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট তলব করেছে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে এক নির্বাচনী সভায় এসে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকার উপযুক্ত ব্যাখ্যা ও মন্তব্য সহ সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠায়নি। ঘটনা হল, কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবির বিরোধিতায় সরব জনজাতি সামাজিক সংগঠনগুলি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কুড়মিদের দাবির বিষয়ে সরাসরি পদক্ষেপ করা হলে আদিবাসী ভোট হারাতে হতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক অঙ্কেই কুড়মিদের বিষয়ে ধীরে চলার নীতি নিয়ে চলছিল তৃণমূলের ক্ষমতাসীন রাজ্য। অন্যদিকে, কেন্দ্রও সংশোধিতা সিআরআই রিপোর্ট চেয়ে রাজ্যের উপর পাল্টা চাপ বাড়াচ্ছিল।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

গত বছর ঝাড়গ্রামের গড়শালবনিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচির যাত্রাপথে একাংশ কুড়মি বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগে গত বছর ৪২ দিন জেল বন্দি ছিলেন কুড়মি আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আবার গত পঞ্চায়েত ভোটে কয়েকটি আসনে কুড়মি নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হন। ঝাড়গ্রাম জেলার সাতটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়েছে নির্দল কুড়মিরা। কুড়মিদের ক্ষোভ প্রশমনে গত ফেব্রুয়ারিতে পুরুলিয়ার প্রশাসনিক জনসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার কুড়মিদের নিয়ে সমীক্ষা করবেন বলেও ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে লেখা হয়েছে, ‘মাহাতো সম্প্রদায়কে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ করবে তৃণমূল কংগ্রেস’।

তৃণমূলের একাংশ নেতা আড়ালে মানছেন, ইস্তাহারের ওই অংশটি জঙ্গলমহলের বিশেষ কিছু জনগোষ্ঠীকে ভুল বোঝানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট। তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলছেন, ‘‘জনজাতি তালিকাভুক্তির বিষয়টি কেন্দ্র সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন্দ্র সরকার কুড়মিদের দাবি নিয়ে গড়িমসি করছে, সেই বিষয়টি ইস্তাহারে বলা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ইস্তাহারে প্রকাশিত বাক্যটি পড়লে মনে হতে পারে জনজাতি তালিকাভুক্তির বিষয়ে তৃণমূলই যেন পদক্ষেপ করবে। ইস্তাহারে এমন প্রতিশ্রুতির বিষয়টি বুঝেশুনে লেখা উচিত ছিল।’’ রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো অবশ্য বলছেন, ‘‘নেত্রী তো আগেই কুড়মিদের দাবিতে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেই বিষয়টিই ইস্তাহারে রাখা হয়েছে।’’ চূড়ামণি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ, কুড়মালিকে রাজ্যভাষার স্বীকৃতি সহ কুড়মিদের জন্য অনেক কিছু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জাতিসত্তার বিষয়টি কেন্দ্র না মানলে তখন আন্দোলন হবে।

সাঁওতাল সামাজিক সংগঠন -ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাদল কিস্কু গোষ্ঠীর ‘জিলা পারগানা’ ঢাঙ্গা হাঁসদা বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দিলে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে আমরা বিরোধিতা করব।’’ ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিত্যলাল সিং বলছেন, ‘‘গোড়া থেকেই আমরা কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবির বিরোধিতা করে আসছি। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’

আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজী মাহাতো বলছেন, ‘‘ভোট এলেই কুড়মিদের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়। ভোট ফুরোলে ভুলে যায়। সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাতে কেন গড়মসি করছে রাজ্য? কুড়মিদের ভোট আদায়ের জন্য শাসকদল এখন ইস্তাহারে কুড়মিদের দাবি নিয়ে নতুন নাটক শুরু করেছে।’’

কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘জাতিসত্তার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Jhargram TMC Kurmis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE