ওয়ার্কশপে নিজের তৈরি হাঁস নিয়ে শিল্পী বিপ্লব সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
এক হাঁসেই বাজিমাত! উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে বসেছিলেন। সেই সময় সমাজমাধ্যমের একটি বিজ্ঞাপনে নজর পড়ে বালুরঘাটের বিপ্লব সরকারের। চাওয়া হয়েছিল একটি বিশেষ আদলের পাইন কাঠের হাঁস। বিপ্লব চাহিদা মতো হাঁসের মডেল বানিয়ে কলকাতায় পাঠান। পত্রপাঠ মঞ্জুর হয় বিপ্লবের আবেদন। শহরে ফিরে এলাকার মহিলাদের এ কাজে যুক্ত করে নেন বিপ্লব। তার পর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় হাঁস বানানো। এখানে তৈরি পাইন কাঠের হাঁস এখন দিব্যি পাড়ি দিচ্ছে দেশ-বিদেশে। কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন শিল্পী, ক্রমশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার মহিলারাও।
সমাজমাধ্যমের পাতায় দেখা বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে যেন কপাল ফিরতে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের নলাতাহারের কাঠশিল্পীদের। বালুরঘাট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নলতাহার গ্রামে পাইন গাছের টুকরো কেটে হাতের জাদু মিশিয়ে চমৎকার হাঁস তৈরি করছেন নবান সরকার ও তাঁর ছেলে বিপ্লব। তাতে যুক্ত হয়েছেন এলাকার আরও অন্তত ১০ মহিলা। ফেসবুকে আলাপ হওয়ার পর কলকাতার একটি সংস্থা দু’হাজারটি কাঠের হাঁস তৈরির বরাত দিয়েছে বিপ্লবকে। সময় মতো কাজ শেষ করতে স্থানীয় মহিলারা কোমর বেঁধে হাঁস তৈরির কাজে লেগে পড়েছেন। কাজ প্রায় শেষের দিকে। আর হাঁস বানিয়ে বাড়তি অর্থ উপার্জন মুখে হাসি ফুটিয়েছে গ্রামের মহিলাদের।
কলকাতার এই সংস্থা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে পাইন কাঠ এসে পৌঁছচ্ছে বালুরঘাটে। তার পর সেই কাঠ দিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জামের সাহায্যে নির্দিষ্ট আদলের হাঁস তৈরি করছেন পিতা-পুত্র। খোলা বাজারে কেউ কারখানা থেকে হাঁস কিনতে চাইলে হাঁসপ্রতি এক হাজার থেকে বারোশো টাকা দিতে হবে। এই হাঁস কলকাতা থেকে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধি পেতেই গ্রামের মহিলাদের এই কাজে নিয়োগ করেছেন বিপ্লব। বর্তমানে সাত মহিলা কাজ করছেন। আগামিদিনে আরও কাজের বরাত পাওয়ার আশা রয়েছে। তখন আরও বেশি মহিলাকে এই কাজে নিয়োগ করার পরিকল্পনাও সাজিয়ে ফেলেছেন বাবা-ছেলে।
শিল্পী নবান বলেন, ‘‘এমন কাজ আগে কখনও করিনি। চাহিদা অনুযায়ী হাঁস তৈরির জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার পরে সঠিক আকার এবং আয়তনের হাঁস তৈরি আয়ত্তে এনেছি। অনেক মহিলা এই কাজ করে ক্রমশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই হাঁস তৈরি করে প্যাকেটজাত করা হয়েছে। কলকাতা থেকে এখানে গাড়ি পাঠানো হবে। সেই গাড়িতে আমাদের তৈরি করা মাল উঠে যাবে।’’
আর বিপ্লব বলছেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। এখন কলেজে ভর্তি হব। আগে থেকেই খুঁটিনাটি জিনিস তৈরি করতাম। তার পরে সমাজমাধ্যমে এ রকম পোস্ট দেখে উৎসাহী হই। আমার পাঠানো নমুনা পছন্দ হওয়ায় তাঁরা দু’হাজারটি হাঁসের বরাত দিয়েছেন। সেগুলি আবার বাইরে রফতানি করবেন বলে শুনেছি। দিনে প্রায় ১০টি হাঁস তৈরি করতে পারি। স্থানীয় মহিলাদের আরও বেশি করে কাজে নিযুক্ত করে স্বাবলম্বী করে তোলার ইচ্ছে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy