Band Storm 2025

'কলকাতার শিল্পী বলে ব্রাত্য এই ধারণা ভেঙে দিল', শহরে 'ব্যান্ড স্টর্ম' তোলার আগে কী বললেন সিধু?

শহরের বুকে আছড়ে পড়তে চলেছে 'ব্যান্ড স্টর্ম', তার আগে কী জানালেন সিধু?

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১৮:১৫
সংগৃহিত চিত্র

সংগৃহিত চিত্র

কলকাতার বুকে পুজোর আগেই ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে। হ্যাঁ, 'সাইক্লোন' বটেই, তবে গানের। আগামী ৩১ অগস্ট বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে 'ব্যান্ড স্টর্ম'। এক মঞ্চে ৬টি বাংলা ব্যান্ড পারফর্ম করবে। আর এই ৬টির মধ্যে অন্যতম হল 'ক্যাকটাস'। শোয়ের আগে কতটা উন্মাদনা কাজ করছে, কী কী গান থাকছে, সবটাই আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন সিদ্ধার্থ রায়, ওরফে সিধু।

Advertisement

একসঙ্গে ৬টা বাংলা ব্যান্ড, তাও আবার এমন ছয়টি ব্যান্ড, যাদের গান শুনেই ৯০ দশকের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সিধু বলেন, ''এটি প্রথম নয়, এর আগেও একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেখানেও ৬টি ব্যান্ড ছিল। এ বার অঞ্জন দত্ত রয়েছেন, মানে ৫টি ব্যান্ড এবং অঞ্জন দত্ত। সেই অনুষ্ঠানেও আমরা খুবই ভাল সাড়া পেয়েছিলাম। প্রায় ৮ হাজার মতো মানুষ হয়েছিল। টিকিটের ভাল দাম থাকা সত্ত্বেও মানুষ কোনও কার্পণ্য করেননি। ৭-৮ ঘণ্টা ব্যাপী বাংলা ব্যান্ডের শো দেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আরও এক বার সেটা হতে চলেছে। এ বারও টিকিট বিক্রি খুবই ভাল। এমনকী আমি এ বার যেটা শুনে খুবই উদ্বুদ্ধ হয়েছি যে, পরীক্ষামূলক ভাবে সবথেকে দামি টিকিটের মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি রাখা হয়েছে। সেই টিকিটও ৫০টির বেশি বিক্রি হয়েছে। একটি দিনে বাংলা ব্যান্ড দেখার জন্য, শোনার জন্য অন্তত ৫০ জন লোক ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারেন, এটি খুবই উৎসাহ দেয়। টিকিটের দাম বড় কথা নয় এখানে, কিন্তু এই 'স্পিরিট'টা ভাল লাগল। আমরা বিদেশি ব্যান্ড দেখতে গেলেও তো টিকিটের দাম এমনই হয়। এর থেকে কম কি হয়? সোনু নিগম বা তাঁর মতো শিল্পীরা যখন আসেন তখনও ১০ হাজার টাকার টিকিট থাকে। কিন্তু এই যে কলকাতার শিল্পী বলে ব্রাত্য, ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’-র সেই ধারণাটাকে যেন ভেঙে দিল এ বারের 'ব্যান্ড স্টর্ম'। তাই আমি খুবই উত্তেজিত, উদ্বুদ্ধ।''

শ্রোতাদের জন্য কী কী গান থাকছে জিজ্ঞেস করায় গায়ক জানালেন, ''কয়েকটা তো সেরা হিট করতেই হয়। সেগুলি ছাড়া তো কোনও শো ডিজাইন হতেই পারে না। 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়', 'বধূ রে', 'হলুদ পাখি', 'শুধু তুমি এলে না', 'বুদ্ধ হেসেছে' এই পাঁচটা আমরা ধরে নিই আমাদের সেরা হিট, তাই এই পাঁচটা গান বাদ দিয়ে শো করার মানে হয় না। ফলে এই ৫টা থাকছে। আর বাকি পাঁচটা গান চমক হিসেবে থাক, সেগুলি হয়তো সব সময় করা হয় না, কিন্তু দর্শকদের প্রিয়। সেগুলি করার ইচ্ছে আছে। কলেজ শো বা অন্যত্র অনেক সময়ই নাচের গানের দাবি থাকে। এই অনুষ্ঠানে নাচের গানের দাবি থাকবে বলে মনে হয় না। সেই জায়গা থেকে আমরা যত্ন করে একটু ভাল গান বেছেছি।''

‘অঞ্জন দত্ত অ্যান্ড দ্য ইলেকট্রিক ব্যান্ড’, ‘ক্যাকটাস’, ‘ফসিল্‌স’, ‘ফকিরা’, ‘পৃথিবী’র সঙ্গে ‘ব্যান্ড স্টর্ম’-এ ঝড় তুলতে থাকবে ‘হুলিগানিজ়ম’-ও। বহু বছর পর ফের কোনও বাংলা ব্যান্ড বা তার গান এতটা জনপ্রিয় হল, মাঝে এতটা লম্বা সময় কেন কোনও ব্যান্ড সেই অর্থে নাম করতে পারল না প্রসঙ্গ ওঠায় সিধু স্পষ্টতই জানান এর জন্য অনেকাংশে এফএম এবং টিভি চ্যানেল দায়ী। তাঁর কথায়, ''মাঝখানে নতুন বাংলা ব্যান্ড উঠে আসেনি এটা যেমন সত্যি, তেমনই বাংলা ব্যান্ড নিয়ে কাজ করাও কিন্তু বন্ধ হয়নি। প্রচুর ব্যান্ড কাজ করেই চলেছে। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় গান রিলিজ করেছে। কিন্তু সেভাবে উল্লেখযোগ্য নাম খুব যে উঠে এসেছে সেটা নয়। এটার অন্যতম কারণ, কোনও বাংলা এফএমে নতুন বাংলা ব্যান্ডের গান শোনানো হয় না। শুধু বাংলা ব্যান্ডের গান কেন, যাঁরা সিনেমার গানের বাইরে গান বানান এবং করেন, তাঁদের গানও শোনানো হয় না। নচিকেতা, অঞ্জন দত্তের গান নিশ্চয় শোনানো হয়। ৯০ দশক থেকে ২০০০-এর গোড়ার দিকের গান যেগুলি সেগুলিই বারবার চর্বিতচর্বণ করা হয়। কিন্তু এঁরাও পরবর্তীকালে বহু ভাল কাজ করেছেন, আমরাও করেছি, কিন্তু সেই ধরনের গান কোনও এফএমে চলে না। আর এফএমে না চললে সেই গানগুলি চট করে জনগণের কাছে পৌঁছে যাওয়াটা মুশকিল। নিশ্চয় সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের হাতে রয়েছে, সেটার মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু সেই খবরটাও সবার কাছে সব সময় থাকে না।'' কিন্তু এটা কেন? সিধুর মতে, এফএমে অ্যাক্টিভ লিসেনিং হয় না, প্যাসিভ লিসেনিং হয়। তাঁর কথায়, ''এখানে আমি এখন এই গানটা শুনব, এটা শুনব না, এটা হয় না। ধরুন, গাড়ি চালাচ্ছি তখন আমি এফএম চালিয়ে রাখলাম। কোথাও যাওয়ার ফাঁকে যে ৬-৮ টা গান হল শুনলাম। এই প্যাসিভ লিসেনিংয়ের মধ্যে যদি একটা নতুন গানকে নিয়ে ফেলা যায়, এবং কয়েক বার রিপিট করানো হয় তা হলে সেই গান কিন্তু একটা জায়গা পেয়ে যায়। বাংলা ব্যান্ড বা স্বাধীন গান-বাজনার ক্ষেত্রে আমরা একদমই মিডিয়ার সাহায্য পাইনি। শুধু এফএমকে দোষ দেব কেন, কোনও বাংলা টিভি চ্যানেলেও নতুন গানের ভিডিয়ো দেখানো হয়নি।''

তবে এফএমে না হলেও, সোশ্যাল মিডিয়া সেই সুযোগ নতুনদের দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ''এখানে কারও দাদাগিরি চলে না। এখানে এরম কিছু নেই যে অমুকের গান চালাতেই হবে, নইলে অমুক সমস্যা। এরম কিছু নেই যে অমুকের গান চারটে চালাই তাহলে প্রমোশন বাবদ কিছু টাকা আসবে। এখানে কোনও টাকা, ক্ষমতার খেলা নেই। বম্বে হেড অফিসের কোনও ব্যাপার নেই। ওদের কিছু বললেই বলে, আমাদের আসলে বম্বে হেড অফিস থেকে যেমন বলেছে তেমন করছি। সেখানে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সত্যি সত্যিই মুক্ত একটা অঞ্চল, যা নতুন ব্যান্ডকে তুলে আনার কাজে দিচ্ছে। এই যে আমাদের 'আমি ফিরছি বাড়ি' গানটি যে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, সেটা তো সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত একটি এফএমে বাজিয়েছে বোধহয় এক, দু'বার।'' তা হলে কী করণীয়? এই বিষয়ে গায়কের মত, ''মাল্টিপ্লেক্সের উপর যেমন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যে ‘প্রাইম টাইমে’ বাংলা ছবি দেখাতে হবে, তেমনই সমস্ত অডিয়ো প্ল্যাটফর্ম, এফএমের উপর চাপ তৈরি করা উচিত যাতে সেখানেও নতুন বাংলা গান রাখতেই হবে। নতুন গান চালাতে হবে।''

‘ব্যান্ড স্টর্ম’ শেষ হতে না হতেই পুজো। বাঙালিরা গোটা বছর যে সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে সেই সময় ‘ক্যাকটাস’-এর এ বার কী পরিকল্পনা? সিধু জানালেন, ''এ বারের পুজোর প্ল্যান দারুণ আনন্দের। আমরা প্রায় এক মাসের ট্যুরে বেরোচ্ছি, তার মধ্যে ২টি মহাদেশ, আর ৪টি দেশ রয়েছে। প্রথম ১৫ দিন থাকব কানাডায়, সেখানে ৬টা শো করব। তার পর বাকি ১৫ দিনে ইউরোপের ৩টি দেশে ৩টি শো করব।''

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement
আরও পড়ুন