New Year

আরও একটি বছর

প্রতি বছরের মতো ২০২৫-ও কাটল ভাল এবং মন্দের মিশেলে। তবুও যদি বছরের কিছু অভিমুখ সন্ধান করা হয়, তা হলে বলতে হবে যে, এ বছরটিও যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ বহন করে আনল না।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২৬

আজ যে বছরটি শেষ হচ্ছে, তাকে কী ভাবে স্মরণে রাখবে ভারতের ইতিহাস? সেই বছর হিসাবে, যখন যাবতীয় বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতিকে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপরে চাপিয়ে দিলেন চড়া হারের শুল্কের বোঝা? না কি সেই বছর, যবে ভারতের মাটিতে হওয়া ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ্য জবাব দেওয়া গেল কয়েক দিনের মধ্যেই? অথবা সে বছর, যখন আন্তর্জাতিক এবং বিশেষত আঞ্চলিক কূটনীতির পরিসরে ভারতের নিঃসঙ্গতা আরও প্রকট হয়ে উঠল— প্রথমে পহেলগাম হামলার পরে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ে ব্যর্থতায়, এবং পরবর্তী পর্যায়ে একদা ঘনিষ্ঠতম সহযোগী বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তরোত্তর অবনতিতে? এমন একটি বছর, যখন কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক নীতি আরও সঙ্কুচিত করতে থাকল ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিসরটিকে? সে বছর, যখন জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনার নাম থেকে মহাত্মা গান্ধী, এবং প্রকল্পের চরিত্র থেকে নাগরিকের অধিকারের প্রশ্নটিকে মুছে দেওয়া হল? এমন সময়কাল, যখন দেশের এক বিপুলসংখ্যক নাগরিকের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল; নির্বাচন কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হল গভীর সংশয়? শুধু বাঙালি পরিচিতির কারণে রাষ্ট্রীয় নিগ্রহের শিকার হতে হলে বেশ কিছু ন্যায্য ভারতীয় নাগরিককে— মানবাধিকারের সমস্ত গণ্ডি অতিক্রম করে তাঁদের ‘পুশব্যাক’ করা হল বাংলাদেশে? এ বছরটি কি মনে করিয়ে দেবে যে, এখনও জামিন হল না উমর খলিদের; রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের ধকল সইতে না পেরে প্রয়াত হলেন জি এন সাইবাবা? না কি, ২০২৫ সাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে হরমনপ্রীত কউর, স্মৃতি মান্ধানাদের কারণে— সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিশ্বকাপ হাতে তুলে নেওয়ার অলৌকিক মুহূর্তটির জন্য?

এই কথাগুলোর সবই সত্য। আবার কোনওটাই একক ভাবে এই বছরটির অভিজ্ঞান নয়। প্রতি বছরের মতো ২০২৫-ও কাটল ভাল এবং মন্দের মিশেলে। তবুও যদি বছরের কিছু অভিমুখ সন্ধান করা হয়, তা হলে বলতে হবে যে, এ বছরটিও যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ বহন করে আনল না। অ-বিজেপি দল-শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাত ক্রমবর্ধমান হল। তার দু’টি প্রধান উদাহরণ তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যপালের অধিকারের প্রশ্নে তামিলনাড়ুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিরোধের যে সমাধানসূত্র শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে মিলল, তা ভবিষ্যতের জন্য কী নিদর্শন স্থাপন করল, ইতিহাস সে প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করবে। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা না দেওয়ার ঘটনা যেন প্রতিহিংসার রূপ ধারণ করল। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যের এক বিপুলসংখ্যক মানুষ গভীর উদ্বেগে দিন কাটাতে বাধ্য হলেন, আত্মঘাতীও হলেন বেশ কয়েক জন— কেন ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো একটি রুটিন প্রক্রিয়া নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয়ের কারণে পরিণত হল, সে প্রশ্নের কোনও যথার্থ উত্তর কেন্দ্রীয় সরকার বা নির্বাচন কমিশনের তরফে মিলল না। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ আরও বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেল অন্ধকারের অভিমুখে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির পরিণতি হিসাবে বাতিল হল বহু চাকরি; গত বছরের আর জি কর কাণ্ডের পর এ বছরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিসরে ধর্ষণের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল। রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ প্রকটতর হয়ে উঠল। তবু এই আঁধারেও জ্বলে থাকল কিছু আশার আলো। ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্ল জানালেন, মহাকাশ থেকে দেশ বা গোষ্ঠীর কোনও গণ্ডিই চোখে পড়ে না। ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্কীর্ণ গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে এমন ভাবে একাত্মতাকে উপলব্ধি করার সামর্থ্য কি ভারত বা এই বিশ্ব অর্জন করবে নতুন বছরে?

আরও পড়ুন