Space Study in WB Schools

স্কুল স্তরে মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চায় জোর! বিশেষ মডিউল তৈরি করেছে কেন্দ্র, কী পরিস্থিতি রাজ্যের?

স্কুলপড়ুয়াদের জন্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার খুঁটিনাটি নিয়ে পাঠ্য মডিউল চালু করা হলেও রাজ্যের কোনও পাঠ্যবইয়েই এই বিষয়ে কিছুই লেখা নেই।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৮:০৭
Students look at a rocket model on National Space Day at the Birla Industrial and Technology Museum.

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজ়িয়ামে জাতীয় মহাকাশ দিবসে রকেটের মডেল দেখছেন পড়ুয়ারা। ছবি: সংগৃহীত।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ’। কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে এই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই। ১৯৬৯ সালে সেই সংস্থাই নাম বদলে হয় ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন বা ইসরো। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাফল্য রচিত হয়েছে একেবারে প্রথম থেকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’ থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ‘মঙ্গলযান’-এর সফল উৎক্ষেপণ, ২০২৪-এ প্রথম চেষ্টায় সফল ভাবে মঙ্গলের কক্ষপথে স্থাপন বা, ২০২৫-এ গগনযাত্রী শুভ্রাংশু শুক্লর সফল মহাকাশ সফর— পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস। সে সবই এ বার পড়ানো হবে স্কুলস্তরে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, এনসিইআরটি (রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ) ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়াদের জন্য একটি বিশেষ মডিউল তৈরি করেছে। তাতে ইসরোর কার্যক্রম, আগামীদিনে কী ধরনের অভিযান হতে চলেছে, সেই সমস্ত বিষয়ও লেখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় বোর্ড অর্থাৎ সিবিএসই (সেন্টাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন) কিংবা সিআইএসসিই (কাউন্সিল ফর দ্য ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজ়ামিনেশন) অধীনস্থ স্কুলগুলিতে এনসিইআরটি নির্ধারিত বই পড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানেও মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার বিষয়গুলি খণ্ডচিত্রে সজ্জিত। এ বার থেকে কি বদলাবে সেই চর্চার ছবি?

The module also mentions the successful space flight of Indian Air Force Group Captain Subhanshu Shukla.

ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লের সফল মহাকাশ যাত্রা কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই মডিউলে। গ্রাফিক্স: আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক।

সিবিএসই অধীনস্থ দিল্লি পাবলিক স্কুল, ডোমজুড়ের প্রধান শিক্ষিকা সুনীতা অরোরা জানিয়েছেন, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় পড়াতে গিয়ে ‘আর্যভট্ট’, ‘ইনস্যাট’-এর মতো উপগ্রহের কথা পড়াতে হয়েছে। কিন্তু তেমন খুঁটিনাটি ছিল না। সুনীতা বলেন, “এ বার এনসিইআরটি-র নতুন মডিউলে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এতে পড়ুয়ারা আগ্রহী হবে এবং ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে স্কুল স্তরেই চর্চা করতে পারবে।”

কিন্তু রাজ্য সরকারি বইয়ে কি রয়েছে এ সংক্রান্ত কোনও পাঠ্য? সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই জানিয়েছেন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাদা করে কোনও অধ্যায় বা পাঠ্যক্রমে নেই। ইসরো সম্পর্কে তথ্যও প্রায় নেই বললেই চলে।

তা হলে ছেলেমেয়েরা এত বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে শিখল কী ভাবে? পাণ্ডবেশ্বরের রাখালচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কবিতা ভান্ডারি জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলের ‘শনিবারের আনন্দপাঠ’ কর্মসূচিতে ছাত্রীদের অন্য নানা বিষয়ের সঙ্গে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার খুঁটিনাটি নিয়ে চর্চা হয়। আবার আসানসোলের হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের জীবনবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষিকা পারমিতা বিশ্বাস বলেন, “বইয়ের পাতায় এই বিষয়গুলি নেই ঠিকই, তবে কোনও কিছু শেখানোর এত কঠিনও নয়। কেন্দ্র-রাজ্য বিভাজনকে দূরে রেখেই মেয়েদের মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে শেখানো হয়।”

খাস কলকাতার চেতলা বয়েজ় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, “দশম শ্রেণির ভূগোল বইয়ে উপগ্রহ সংক্রান্ত বিষয় শেখাতে গিয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার কথা বলতেই হয়। এনসিইআরটি যে মডিউল শুরু করেছে, তা রাজ্যস্তরেও চালু হয়, আমাদের ছেলেমেয়েদের সুবিধা হবে বলেই মনে করি। প্রয়োজনে রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের কাছেও দরবার করব।”

Teachers have been practicing the intricacies of space research during class.

ক্লাসের মাঝেই মহাকাশ গবেষণার খুঁটিনাটি নিয়ে চর্চা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। — ফাইল চিত্র।

এরই পাশাপাশি অনেক রাজ্য সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি করেছেন, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মহাকাশ গবেষণা বিষয়টি নতুন নয়। চন্দ্রযান-২ অভিযানের পর থেকে চর্চার আলোয় আনা হচ্ছে। এই মডিউলও তার-ই প্রতিচ্ছবি। যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধানশিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, “দেরিতে হলেও পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে কিছু তথ্য তো সাজিয়ে দেওয়া হল। এ বার রাজ্যও যদি এমন কিছু ভাবে তাতে ছেলেমেয়েদেরই ভাল হবে।”

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে গত কয়েক বছরে ডেটা সায়েন্স বা কৃত্রিম মেধার মতো বিষয় স্কুল স্তরে পড়ানো শুরু হয়েছে। তবে, আপাতত ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে তেমন কিছু পরিকল্পনা নেই বলেই জানিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তবে, রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের তরফে ‘উজ্জিবন চর্চা’-র মাধ্যমে সূর্যের পথে ইসরো-র আদিত্য এলওয়ানের পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে অনলাইন ওয়েবিনারের মাধ্যমে বিশেষ ক্লাস করানো হয়েছিল।

আসানসোলের হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য জানিয়েছেন, কেন্দ্রের তরফে ইসরোর কার্যক্রম শেখার জন্য নতুন মডিউল তৈরি করা হয়েছে, সেটা রাজ্য কবে চালু করবে, এই আশায় বসে থাকার কোনও যুক্তি নেই। তাঁর কথায়, “পড়ুয়াদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বরাবরই নিজেদের উদ্যোগে এই বিষয়গুলি শিখিয়ে এসেছেন। ভবিষ্যতে যদি কিছু বিষয়ে ক্লাস ভিত্তিক অধ্যায় যোগ করা হয়, তাতে হয়ত এক-দু’পা এগোনোর সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই কেন্দ্রের মডিউল দেরিতে প্রকাশ করা হলেও সেটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।”

তবে, বিতর্ক রয়েছে অন্যত্রও। এনসিইআরটি-র ওই মডিউলে ইসরো এবং নাসা-র প্রথম যৌথ উদ্যোগে তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ ‘নিসার’-এর মতো বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও কোনও বিজ্ঞানীর নামই তাতে লেখা নেই। ‘নিসার’-এর উৎক্ষেপণে এ রাজ্যের দুই বাঙালি বিজ্ঞানী কৌশিক মণ্ডল ও বিমল ভট্টাচার্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন