IIT Patna Researcher

স্তনে বিষাক্ত খনিজ! জল থেকে ইউরেনিয়াম নিষ্কাশনের পথ খুঁজছে পটনার বাঙালি গবেষক দল

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিহারের মহিলাদের স্তনদুগ্ধে পাওয়া যাচ্ছে ইউরেনিয়াম। ভোজপুর, সমস্তিপুর, বেগুসরায়, খাগারিয়া, কাটিহার এবং নালন্দা জেলার প্রায় ৪০ জন মহিলার উপর করা সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে এই রিপোর্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৪২
নতুন গবেষণার পথে আইআইটি পটনা।

নতুন গবেষণার পথে আইআইটি পটনা। নিজস্ব চিত্র।

জলে মিশছে তেজস্ক্রিয় খনিজ। অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বিস্তর। এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজতেই গবেষণা চালাচ্ছেন পটনার এক দল বাঙালি। সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিহারে। মাতৃদুগ্ধে মিলেছে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি। সেখান থেকে নিস্তারের পথ খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

জাদুগোড়া, ভারতের অন্যতম ইউরেনিয়াম উত্তোলন কেন্দ্র। ১৯৬৭ থেকে খনিজ উত্তোলন শুরু হয় সেখানে। ১৯৯৯ থেকেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে, খনির আশপাশের কিছু গ্রামে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে এই তেজস্ক্রিয়ের। বিশেষত যে পুকুরে অব্যহৃত আকরিক নিষ্কাশন করা হয় তার ৫ কিলোমিটার ব্যাসে প্রায় ১৫ গ্রামের মহিলারা অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। মৃত অথবা, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছেন।

জাদুগোড়া দীর্ঘ দিন ছিল বিহারের অন্তর্গত। ২০০০ থেকে তা ঝাড়খণ্ডে চলে যায়। কিন্তু ইউরেনিয়াম সমস্যার কি আদৌ সমাধান হয়েছে?

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিহারের মহিলাদের স্তনদুগ্ধে পাওয়া যাচ্ছে ইউরেনিয়াম। ভোজপুর, সমস্তিপুর, বেগুসরায়, খাগারিয়া, কাটিহার এবং নালন্দা জেলার প্রায় ৪০ জন মহিলার উপর করা সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে এই রিপোর্ট। আর তার পরই শুরু হয়েছে শোরগোল। যদিও মাতৃদুগ্ধে এই ইউরেনিয়মের উপস্থিতি কতটা ক্ষতি করতে পারে শিশুর, তা নিয়ে রয়েছে মত বিরোধ।

নতুন গবেষণার পথে আইআইটি পটনা।

নতুন গবেষণার পথে আইআইটি পটনা। নিজস্ব চিত্র।

এরই মধ্যে উঠে এসেছে আরও একটি প্রশ্ন। পানীয় জল কি বিষমুক্ত করা সম্ভব নয়?

জল থেকে ইউরেনিয়াম নিষ্কাশনের কৌশল নিয়ে গবেষণা করছে আইআইটি পটনা। সেখানকার এক গবেষক দল দাবি করেছে, জলবাহিত ইউরেনিয়ামই মানুষের শরীরে ঢুকছে। শুধু জাদুগোড়া নয়। বিহার-ঝাড়খণ্ড এলাকায় অনেকগুলি ইউরেনিয়ামের খনি রয়েছে। তাই, এ সব অঞ্চলের মাটি বা জলে মিশে যায় খনিজ। শুধু মহিলা নন, যে কোনও মানুষ বা অন্য প্রাণীর দেহেই তাই জলবাহিত হয়ে এই খনিজ ঢুকে পড়তে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাতৃদুগ্ধের নমুনায় যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্ধারিত বিপদসীমার নীচেই রয়েছে।

এরই মধ্যে আইআইটি পটনার গবেষকেরা জানালেন জল থেকে ইউরেনিয়াম আলাদা করা সম্ভব। সদ্য এই বিষয়টি নজরে এনেছেন গবেষকরা। আতিকুর হাসান-সহ দশ সদস্যের গবেষক দল ‘স্মার্ট মেটেরিয়াল ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়াটার পিউরিফিকেশন’ বিষয়ের উপর গবেষণা করছে। আতিকুর বলেছেন, “আমরা এমন একটি পাউডার উদ্ভাবন করেছি, যা দিয়ে দূষিত জল থেকে ইউরেনিয়াম শোষণ করে জলকে পানযোগ্য করে তুলতে পারে। এই গবেষণা পদ্ধতিটি ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অর্গানাইজেশন (হু)-এর নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।” তাঁরা আশাবাদী এই নতুন পদ্ধতির ফলে, বাস্তব সমস্যার সমাধান করা যাবে। ফলে এই পদ্ধতিতে পরিস্রুত পানীয় জল গ্রহণ করতে পারবেন অন্তঃসত্ত্বারাও।

কী ভাবে প্রয়োগ করা হবে?

জানা গিয়েছে, এই বিশেষ গুঁড়ো জলে মিশে ইউরেনিয়াম শোষণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জল পরিশোধনের সাধারণ ফিল্টারে এই গুঁড়ো দেওয়া থাকলে তা ভাল কাজ করতে পারে। এক গ্রাম পাউডার প্রায় ৮৫৪ মিলিগ্রাম ইউরেনিয়াম শোষণ করার ক্ষমতা রাখে।

তবে এ বিষয়ে যে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন, তা-ও জানিয়েছেন আতিকুর। এমনকি এই দীর্ঘ গবেষণায় জল দূষণের আরও নানা বিষয় উঠে আসতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। বিহারের গ্রামে গ্রামে ইউরেনিয়ামমুক্ত জল পানের বিষয়ে প্রচার চালানোর কথাও ভাবছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন