Centralized admission portal

এখনও শুরু হয়নি স্নাতকে ভর্তির প্রক্রিয়া, বাইরে চলে যাচ্ছেন বহু পড়ুয়া! রাজ্য কি ভুগবে মেধাহীনতায়?

রাজ্যের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চান, এমন পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। তবে সরকারি কলেজগুলিতে পড়ুয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে কী ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ১৭:৫৩
Under graduation admission 2025.

প্রতীকী চিত্র।

এক মাস আগে বেরিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। কিন্তু রাজ্যে এখনও খোলেনি সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য অভিন্ন ভর্তির পোর্টাল। এ দিকে, সময় চলে যাচ্ছে। অন্যান্য রাজ্যে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়াও পুরোদমে চলছে। আর তার জেরেই রাজ্যের বাইরের কলেজে চলে যাচ্ছেন বহু পড়ুয়া।

Advertisement

যে সকল পড়ুয়া রাজ্য ছাড়ছেন, তাঁদের অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছেন। অর্থাৎ, নম্বরের নিরিখে মেধা তালিকার উপরেই তাঁরা। যেমন ধরা যাক দেবদত্তা মাঝির কথা। সদ্যই জেইই অ্যাডভান্সড-এ আইআইটি খড়্গপুর জ়োন থেকে প্রথম এবং সর্বভারতীয় স্তরে মহিলাদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। তিনি আইআইএসসি থেকে বিটেক করতে চান। এ ছাড়াও আইআইটি প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ রাজ্যের আরও এক কৃতী অরিত্র রায় এবং আইসিএসই-তে ৫০০-এ ৫০০ পাওয়া দেবত্রী মজুমদারের লক্ষ্যও আইআইটি।

এই ‘সেরা’দের বাদ দিলে সদ্য দ্বাদশ উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের বড় অংশই তাকিয়ে রয়েছেন অভিন্ন ভর্তির পোর্টালের দিকে। সংখ্যাটা এক লক্ষেরও বেশি। জানা গিয়েছে, ওবিসি মামলার জটে আটকে রয়েছে পোর্টাল খোলার বিষয়টি। ফলে শুরু করা যাচ্ছে না ভর্তি প্রক্রিয়া।

12th pass students are waiting for the registration process in Centralized admission portal.

ওবিসি মামলার জটে আটকে রয়েছে পোর্টাল খোলার বিষয়টি। প্রতীকী চিত্র।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে, কলেজস্তরে পঠনপাঠনের সঙ্গে ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স, ইন্টার্নশিপ, ‘কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি’-র মতো বিষয় যোগ হয়েছে। এগুলি পড়ুয়াদের কর্মজীবনের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে। কিন্তু পঠনপাঠন শুরু হতে দেরি হলে পড়ুয়ারা এতগুলি বিষয় সামলাবেন কী করে?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৬৯টি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে আর্জি জানিয়েছেন, আইনি জটিলতাহীন ক্ষেত্রগুলির জন্য দ্রুত পোর্টাল চালু করা হোক। তাঁর দাবি, এমনটা না করা গেলে সমস্যা আরও বাড়বে।

পঠনপাঠনের সময় নষ্ট হচ্ছে, এ কথা কিন্তু মানতে রাজি নন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আগেই তিনি জানিয়েছেন, ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়নি। গত বছর ১৯ জুন ভর্তির পোর্টাল‌ খুলেছিল। এ বার তার আগেই তা শুরু হবে। তবে হিসাব বলছে, সমস্যা হয়ে ছিল বিগত শিক্ষাবর্ষেও।

২০২৪-এ অভিন্ন ভর্তির পোর্টালে আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া চলেছিল নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তার পর পড়ুয়ারা ক্লাসে যোগ দেন। সে বার সিলেবাস শেষ না হওয়া, সেমেস্টার পদ্ধতিতে খাপ খাইয়ে নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সমাধান মেলেনি। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এর ফলে মেধার উৎকর্ষতাও প্রশ্নের চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার অবশ্য জানিয়েছেন অন্য কথা। তাঁর দাবি, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম অনুযায়ী মেধাবী পড়ুয়ারা ভর্তি হন। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হলেই যে মেধাবীরা অন্যত্র চলে যাবেন, এমনটা নয় বলেই তাঁর বিশ্বাস। পাশাপাশি তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। তবে এখনও সময় পেরিয়ে যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী রেজিস্ট্রার ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দ্রুত সমস্ত ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রবেশিকার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। তবে মেধাবীদের আসন শূন্য হওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তবে অনেক কলেজের তরফেই মেধাবীদের রাজ্যের বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতার কথা স্বীকার করা হয়েছে। বেশ কিছু কলেজ আবার দাবি করেছে, ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হওয়ায় সেমেস্টার পদ্ধতির সঙ্গে তাল মেলাতে অসুবিধা হচ্ছে শিক্ষকদেরও। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানিয়েছেন, পঠনপাঠন যথাসময়ের শুরু না হওয়া মানে পরীক্ষা এবং মূল্যায়নে পিছিয়ে যাওয়া। দ্রুত সিলেবাস শেষ করতে পড়ুয়াদের তো বটেই, শিক্ষকদের উপরও বাড়তি চাপ পড়ে। আর এতেই মেধাবী পড়ুয়াদের এই ব্যবস্থায় পড়ার আগ্রহও কমছে।

অন্যদিকে স্বাধীন, স্বশাসিত এবং সংখ্যালঘু কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষের মুখে। তবে, সেই সব কলেজগুলিতে আসন সংখ্যা সীমিত। ফলে সরকারি এবং সরকার পোষিত কলেজগুলির দিকেই তাকিয়ে স্নাতক পড়ুয়ারা।

Advertisement
আরও পড়ুন