Student Election

বিধির ফাঁস নাকি দায় ঠেলাঠেলি! কেন বছরের পর বছর বন্ধ এ রাজ্যের ছাত্র সংসদ নির্বাচন!

ছাত্র সংসদ নির্বাচন করানো হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাতেই নাকি আটকে গিয়েছে নির্বাচন!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
Student council elections have not been held at some universities in the state since 2017.

রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-র পর থেকে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। পিএইচডি-র ক্লাস শুরুর ছয়-আট সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজনের নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরই সঙ্গে ইন্টারনাল কমিটির ভোটও ওই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভোট নিয়ে হইচই কম হয় না। প্রায় প্রতি বছরই নির্বাচন হয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই নতুন করে উস্কে উঠেছে এ রাজ্যে ছাত্রভোট নিয়ে আলোচনা।

Advertisement

এ রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে দড়ি টানাটানি চলেছেই। ছাত্রভোট করানো হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারই একটি মামলায় রাজ্য সরকার দাবি করেছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অনীহার জেরেই কোথাও ছাত্র সংসদ ভোট করানো যাচ্ছে না।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাল্টা বক্তব্য, নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই নির্বাচন করানো হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল।

সমস্যা কোথায়?

জানা গিয়েছে, ছাত্রভোটের জন্য একটি বিশেষ বিধি মেনে চলতে হয়। তা রাজ্যের তরফে না দেওয়া হলে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, ২০১৭-য় তৎকালীন শিক্ষা দফতর বিশেষ বিধি জারি করেছিল। সেই বছরই কলকাতা, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যাল‍য় এবং তার অনুমোদিত কলেজগুলিতে শেষ বারের মতো ছাত্রভোট হয়েছিল।

অন্য দিকে, একাধিক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট ওই ‘রুলস’ বা বিধি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যকে। কিন্তু তা আজও জমা দিয়ে উঠতে পারেনি সরকার। বছর দুয়েক আগে হাই কোর্টে ছাত্রভোট সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বার বার শুনানি তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। ওই বিধি আদালতে জমা দেওয়ার কোনও সদিচ্ছাই রাজ্য সরকারের আছে বলে মনে হয় না।”

রাজ্যের বক্তব্য:

বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, আদালতে ছাত্রভোট নিয়ে দায়ের হওয়ার একাধিক মামলার মধ্যে একটি মামলায় ওই ‘রুলস’-এ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানিয়েছেন, তিন বছরের স্নাতক কোর্সের নিরিখে ওই ‘রুলস’ তৈরি করা হয়েছিল। তবে ২০২৫-এ চার বছরের কোর্স চালু হওয়ায় ওই ‘রুলস’ কার্যকর করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে এখনই কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

কেন বন্ধ হয়েছিল ছাত্রভোট:

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, গার্ডেনরিচ থানা এলাকার হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিস্তর গোলমাল হয়। পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছোয় যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। ঘটনার জেরে নড়ে বসে শিক্ষা দফতর। তার পর থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাশ টানতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। এমনকি ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন শাসকদলের একাংশ নেতা। ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন কলেজে অশান্তির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মডেলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার কথা বলে। সে জন্য ২০১৭-তে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস অ্যান্ড কলেজেস রুলস’ জারি করা হয়েছিল। ওই আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত ছাত্র সংসদের মেয়াদ দু’বছরের। অথচ ২০১৭-র পর আর কোনও কলেজেই ছাত্রভোট হয়নি।

Advertisement
আরও পড়ুন