Actual Scenario Of Bengali Television Industry

কেউ জোর করে বাতিলের খাতায়, কেউ জানতেই পারছেন না তিনি নেই! ধারাবাহিকে প্রবীণেরা ব্রাত্য?

তুলিকাকে বাদ দেওয়া হয়েছে ধারাবাহিক ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’ থেকে। ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’ থেকে আচমকা বাদ পড়েছেন স্বাগতা, তনিমা, অমিতাভ-সহ অনেকেই।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১২
কোপ পড়েছে তনিমা সেন, স্বাগতা বসু, তুলিকা বসুর উপরে।

কোপ পড়েছে তনিমা সেন, স্বাগতা বসু, তুলিকা বসুর উপরে। ছবি: ফেসবুক।

ঘটনা এক: সান বাংলার ধারাবাহিক ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’তে অভিনয় করছিলেন তুলিকা বসু। শুটিং শুরুর আগে জানিয়েছিলেন, তিনি যাত্রাপালায় অভিনয় করতে চলেছেন। ফলে, বেশি দিন দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে তাঁকে বাদ দিতে পারেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁকে নেওয়া হয়। মাস দুয়েকের পরেই তুলিকার সামনে এমন কিছু শর্ত রাখা হয়, যা পূরণ করা সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। এর পরেই ‘এনওসি’ সই করিয়ে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement

ঘটনা দুই: ধারাবাহিক ‘রাজ রাজেশ্বরী রাণী ভবানী’। মাত্র দু’মাসে আঠারো বছরের ব্যবধান দেখানোয় একযোগে বাদ স্বাগতা বসু, তনিমা সেন, অমিতাভ ভট্টাচার্যেরা। স্বাগতাকে দিনের পর দিন ডাকা হয়নি শুটিংয়ে। তনিমা আগের দিন শুটিং করে গিয়ে পরের দিন অন্যের থেকে জেনেছেন, ধারাবাহিকে তাঁকে মৃত দেখিয়ে দিয়েছে! অর্থাৎ, তাঁকে আর প্রয়োজন নেই।

এ রকম উদাহরণ আরও আছে। নাটকে অভিনয়ে করবেন বলে ধারাবাহিক থেকে বাদ পড়েছেন শঙ্কর চক্রবর্তী, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সে খবর আনন্দবাজার ডট কম-এ প্রকাশিত। চাকরিক্ষেত্রে ষাট বছরে অবসর। বিনোদন দুনিয়ায় ক্ষমতায় কুলোলে মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত শুটিং করতে পারেন অভিনেতা। তার পরেও হাঁড়িকাঠে গলা দিতে হয়েছে উল্লিখিত অভিনেতাদের।

কেন? জানতে আনন্দবাজার কথা বলেছিল স্বাগতা, তনিমার সঙ্গে। দু’জনেই বলেছেন, “সঠিক কারণ কেউ বলতে পারেন না। সকলের মুখে একটাই কথা, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আর প্রযোজক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরাই বলতে পারবেন।” অথচ, স্বাগতাকে শুরুতে বলা হয়েছিল, মাসে ২২ দিন করে অভিনয় করবেন তিনি। এই কড়ারে তাঁর পাওনা টাকার পরিমাণও কম করেছিল প্রযোজনা সংস্থা। স্বাগতা মেনে নিয়েছিলেন। তার পর? বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর কথায়, “আমরা শুরুতে মুর্শিদাবাদে গিয়ে শুটিং করলাম। দর্শক আমাদের ধারাবাহিক পছন্দ করতে শুরু করল। রেটিং চার্টে প্রথম আমরা। চার মাসের মাথায় সব বদলে গেল!” স্বাগতা পাশাপাশি ছবির কাজ করছিলেন। তাই বেঁচে গিয়েছেন।

তনিমার অভিজ্ঞতাও কি এরকমই? “আমি আগের দিন শুটিং করেছি। সেট থেকে জানাল, পরের দিন শুট বন্ধ। তার পরের দিন আবার কাজ হবে। শুটিং বন্ধের দিন ধারাবাহিকের এক সহ-অভিনেত্রী ফোনে জানালেন, আমি বোধহয় বাদ পড়েছি। পরে আমার পরিচিতেরা জানালেন, ধারাবাহিকে আমার ছবিতে মালা পরানো হয়েছে!” অভিনেত্রী হাসতে হাসতে বললেন, “আমি মরে গেলাম সেটা আমিই জানতে পারলাম না!” শুধু এই ধারাবাহিক নয়, ‘উড়ান’-এও তাঁর একই অভিজ্ঞতা। তনিমার দাবি, “ক্যামেরার সামনে আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয়ের ক্ষমতা নেই। ক্যামেরার পিছনে কলকাঠি নাড়তে দিব্যি শিখে গিয়েছেন কিছু মানুষ।” তনিমাকে তাই নতুন করে আবার কাজ খুঁজতে হচ্ছে।

তুলিকা অনেক দিন কাজ না পেয়ে বসেছিলেন। তা-ই যাত্রাপালায় যোগ দেন। তিনি একাধিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, অনেকেই একাধিক ধারাবাহিক বা ধারাবাহিকের সঙ্গে সিনেমা বা সিরিজ়ে অভিনয় করেন। গোল বাধল তাঁকে নিয়েই! প্রায় একই কথা জানিয়েছিলেন শঙ্কর, সুরজিৎ। সেই সময়ে তাঁদের বক্তব্য ছিল, “আমরা মঞ্চ থেকে এসেছি। নিয়মিত না হোক, মাঝেমধ্যে নাটকে অভিনয় করতে না পারলে দমবন্ধ হয়ে আসে। সেই ইচ্ছাপূরণ করতে গেলে ছোটপর্দায় জায়গা পাব না।”

কী বলছেন সুব্রত গুহ রায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়?

কী বলছেন সুব্রত গুহ রায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়? ছবি: ফেসবুক।

চাকরিতে চুক্তিপত্র থাকে। তাতে একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কর্মীকে অপসারণ করার অধিকার থাকে সংস্থার। আবার কর্মীরও অধিকার থাকে, একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে চাকরি থেকে সরে যাওয়ার। অভিনেতাদের সে রকম কোনও চুক্তিপত্রে সই করতে হয়?

স্বাগতা বলেছেন, “তা হলে তো বর্তে যেতাম। এ রকম দুমদাম বাদ দিয়ে দিতে পারত না। চুক্তিপত্রে সই করতে হয় কেবল নায়ক-নায়িকাদের। তাই তাঁদের বদলাতে গেলে ‘এনওসি’ নিতে হয়।” তার উপরে ধারাবাহিকও যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, বিশেষ করে প্রবীণ অভিনেতারা সবার আগে পড়েন বিপদে। স্বাগতা জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে ‘একা মা’-এর সংখ্যা বাড়ছে। কাজের অভাবে তাঁদের অবস্থা আরও করুণ।

অভিযোগ আরও আছে। ইদানীং, পাঁচ জনের সঙ্গে মেকআপ রুম ভাগ করতে হয় প্রবীণ অভিনেতাদের। তার পরেও যথাযোগ্য মর্যাদা পান না তাঁরা।

সুব্রত গুহ রায়। ধারাবাহিক ‘নিমফুলের মধু’তে যিনি ‘ধ্যাষ্টামো জেঠু’ নামে জনপ্রিয়। তাঁরও কি এমনই অভিজ্ঞতা?

প্রশ্ন করা হয়েছিল বর্ষীয়ান অভিনেতাকে। তিনি কিন্তু বিপরীত ছবি তুলে ধরেছেন। সুব্রত বলেছেন, “দেখতে দেখতে অনেক বছর কাটিয়ে ফেললাম ইন্ডাস্ট্রিতে। একদিনের জন্য কারও থেকে কোনও ভাবে অপমানিত হইনি। আমায় না জানিয়ে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়নি। উল্টে আমার যাবতীয় জনপ্রিয়তা ছোটপর্দার দৌলতেই।”

কিন্তু লিলি চক্রবর্তী, অনামিকা সাহা-সহ অনেকেই যে ছোটপর্দায় আর অভিনয় করতে চান না!

সুব্রতের কথায়, “লিলিদির বিষয়টি আমি জানি। ধারাবাহিকের শুটিংয়ে ধকল বেশি। বয়স্কদেরও অনেক রাত পর্যন্ত শুটিং করতে হয়। লিলিদি এই ধকল আর নিতে পারছিলেন না।” এই জায়গা থেকে তাঁর পরামর্শ, ধকল নেওয়ার মতো শরীরের অবস্থা না থাকলে একটা বয়সের পর ধারাবাহিকে ভেবেচিন্তে অভিনয় করা উচিত।

Advertisement
আরও পড়ুন