মহম্মদ রফির ১০১তম জন্মদিন। ছবি: সংগৃহীত।
এক ফকিরের গান শুনে গানের প্রতি মুগ্ধতা। অমৃতসরের গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল সেই গানের সফর। সেখান থেকে মুম্বই নগরীর সঙ্গীতদুনিয়ার শিখরে পৌঁছেছিলেন। আজও তাঁর গান বাজে সঙ্গীতপ্রেমীদের কানে। প্রেয়সীকে প্রেম নিবেদনের জন্য অনেকেই আজও বেছে নেন তাঁর গাওয়া গান। কথা হচ্ছে মহম্মদ রফির। ২৪ ডিসেম্বর তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে গ্রামে গ্রামে ফকিরদের গান তাঁকে মুগ্ধ করত। শোনা যায়, খুবই রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছিলেন তিনি। জীবিকা হিসাবে সঙ্গীতকে বেছে নেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন মহম্মদ রফির বাবা। তাই সঙ্গীতজগতে খ্যাতি অর্জন করার পরে ভেবেছিলেন, সত্যিই কি তিনি পাপ করেছেন? এই কারণেই রফি চাননি, তাঁর সন্তানেরাও তাঁর পথ অনুসরণ করুন। পড়াশোনা করতে তাই সন্তানদের লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন, সন্তানেরা যেন বিনোদনজগৎ থেকে দূরে থাকেন।
কেমন ছিল মহম্মদ রফির শৈশব? সেই প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন গায়কের পুত্র শাহিদ রফি। তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো ফকিরদের গান মুগ্ধ করত তাঁকে। ফকিরেরা একটি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন, যা দেখে সঙ্গীতকে আরও বেশি ভালবেসে ফেলেছিলেন রফি। ফকিরদের গান শুনেই নিজে মাত্র আট-নয় বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি।
নীরবে ফকিরদের পথেঘাটে অনুসরণ করতেন তিনি। একদিন এক ফকির প্রশ্ন করেন, কেন তিনি নীরবে অনুসরণ করছিলেন তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে শাহিদ বলেন, “আমার বাবা সেই দিন ফকিরকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর কণ্ঠের প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। ফকির যে গানটি গাইছিলেন, সেটিও তিনি তুলে ফেলেছেন। তখন ফকির আমার বাবাকে গাইতে বলেছিলেন। বাবার গান শুনে ফকিরও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। বাবাকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন।”
রফির গানের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু শিল্পী পাশে পেয়েছিলেন মা-কে। তিনি পুত্রকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, “চিন্তা করিস না। আমি সবটা সামলে নেব।”
রফি ছোট থাকতেই তাঁরা অমৃতসর থেকে লাহৌরে চলে আসেন। জীবনের শেষের দিকের এক সাক্ষাৎকারে রফি বলেছিলেন, “আমি লাহৌরের বাসিন্দা। খুবই রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গাইতে যেতাম। এমনই এক দিন প্রযোজক তথা অভিনেতা নাসির খান আমাকে খুঁজে পান এবং মুম্বই নিয়ে গিয়ে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন।” সেই সময়ে বাবার অনুমতি পাননি রফি। অবশেষে গায়কের ভাই তাঁর বাবার থেকে অনুমতি গ্রহণ করেছিলেন। উস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খানের কাছে গানের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই প্রয়াত হয়েছিলেন মহম্মদ রফি।