Similarity Between Saiyaara And Belashuru

নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘বেলাশুরু’র সঙ্গে ‘সইয়ারা’র অদ্ভুত মিল! কী সেটা? জানালেন খোদ পরিচালক

শিবপ্রসাদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছায়াছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে পারলে সেটা অনেক বেশি প্রভাব ফেলে মানুষের মনে। ‘আনন্দ’, ‘কণ্ঠ’, ‘বেলাশুরু’ তার প্রমাণ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪০
‘বেলাশুরু’, ‘সইয়ারা’ কি একই বিষয় নিয়ে তৈরি?

‘বেলাশুরু’, ‘সইয়ারা’ কি একই বিষয় নিয়ে তৈরি? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

দমদমের বাসিন্দা পবিত্র চিত্ত নন্দী, গীতা নন্দী। দু’জনের কেউই আর নেই। গীতা দেবী তখন অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত। তাঁর স্মৃতি ফেরাবেন, শেষ দিন পর্যন্ত আগলে রাখবেন বলে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন পবিত্রবাবু। যদিও যা ভেবেছিলেন তা হয়নি। যিনি আগলে রাখবেন তিনিই আগে চিরবিদায় নেন! তার পরে গীতা দেবী একদম একা। পবিত্রবাবুর মৃত্যুর পরে তিনিও অবশ্য বেশি দিন বাঁচেননি।

Advertisement

এই গল্পের ছায়ায় তৈরি নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ২০২২ সালের ছবি ‘বেলাশুরু’। যেখানে বিশ্বনাথ সরকারের স্ত্রী আরতি সরকার একই সমস্যায় আক্রান্ত। বিশ্বনাথবাবু শেষ দিন পর্যন্ত একই ভাবে ভালবেসে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর স্ত্রীকে। এই দুই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।

সাল ২০২৫। সদ্য মুক্তি পেয়েছে হিন্দি ছবি ‘সইয়ারা’। নায়ক-নায়িকার চরিত্রে অহান পাণ্ডে, অনীত পড্ডা। ছবিতে নায়িকা অল্পবয়সেই অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত। যাকে ভালবেসে আগলে রাখবে বলে পেশাজীবনকেও দূরে সরিয়ে রাখে নায়ক।

দুটো ছবির মধ্যে অদ্ভুত সেতুবন্ধ গড়ে দিয়েছে এই শারীরিক সমস্যা। দুটো ছবির গল্পই আবর্তিত অ্যালঝাইমার্সকে কেন্দ্র করে। সত্যিই কি তাই?

এই সাদৃশ্য সম্বন্ধে জানতে পরিচালকজুটির অন্যতম শিবপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। পরিচালক জানিয়েছেন, তিনিও বিষয়টি খেয়াল করেছেন। তাঁর ভাল লেগেছে, অ্যালঝাইমার্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবশেষে একাধিক ছবির বিষয় হয়ে উঠছে। “একটা সময় পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল, অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া মানসিক রোগ। যাঁরা এতে আক্রান্ত তাঁরা মানসিক রোগী”, বক্তব্য পরিচালকের।

যাঁরা বাড়ির ঠিকানা ভুলে গিয়ে পথে আশ্রয় নেন তাঁদের মানসিক সমস্যা রয়েছে! অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া থেকেও যে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে, বুঝতেন না তাঁরা। ফলে, শেষ দিন পর্যন্ত আক্রান্তদের বাড়তি যত্ন দরকার, সেই যত্নে ভালবাসার ছোঁয়া থাকতে হবে— এই প্রয়োজনও বুঝতেন না কেউ। ‘বেলাশুরু’ বা একই ঘরানায় তৈরি অন্য ছবি ধীরে ধীরে সমাজে এই সচেতনতা বাড়িয়েছে, জানিয়েছেন শিবপ্রসাদ। তাঁর আরও উপলব্ধি, মানুষের জীবনে এমন অনেক সমস্যা আছে, যা ছায়াছবির মাধ্যমে তুলে ধরলে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এই প্রসঙ্গে প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতার উদাহরণ হিন্দি ছবি ‘আনন্দ’, বাংলা ছবি ‘কণ্ঠ’র। শিবপ্রসাদের কথায়, “আজ ক্যানসার নিয়ে আমরা যত সহজে কথা বলি একটা সময় সেটা ছিল না। এই রোগ নিয়েও নানা ভুল ধারণা ছিল সাধারণের মনে। রাজেশ খন্না-অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘আনন্দ’ প্রথম বিষয়টির উপরে আলো ফেলেছিল।”

নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ছবি ‘কণ্ঠ’র বিষয়ও এক। “কণ্ঠনালির ক্যানসার কী ভাবে সাময়িক স্তব্ধ করে দিয়েছিল রেডিয়ো সঞ্চালক অর্জুনের কণ্ঠস্বর? কী ভাবে সেই বাধা পেরিয়ে জীবনের পথে ফিরেছিল সে? এই ছবি সেই গল্প দেখিয়েছে।” শিবপ্রসাদের দাবি, “কঠিন রোগ নিয়ে ছবি তৈরি করা সহজ কথা নয়। এই ধরনের ছবি দর্শক কী ভাবে নেবে, ছবি তৈরির সময় পরিচালকদের মাথায় সেই ভাবনাও ঘোরে।” তার পরেও এই ধরনের ছবি আরও বেশি হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি, যাতে ক্যানসার, অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়া বা আরও অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ সম্পর্কে দ্রুত সচেতনতা বাড়ে। পাশাপাশি, তিনি দুরারোগ্য রোগকে কেন্দ্রে রেখে ছবি বানানোর সাহস দেখানোর জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন ‘সইয়ারা’ ছবির পরিচালক মোহিত সুরি, প্রযোজক আদিত্য চোপড়াকে।

Advertisement
আরও পড়ুন