Directors Guild-Federation Conflict

টেকনিশিয়ান-বিরোধী কথা বলেছেন, এই অভিযোগে শ্রীজিৎকে ‘নিষিদ্ধ’ করল শিল্প নির্দেশক বিভাগ!

শিল্প নির্দেশক বিভাগ থেকে নাকি সেই বিভাগের সদস্যদের বলা হয়েছে, পরিচালক শ্রীজিতের সঙ্গে যেন কাজ না করেন তাঁরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৩
এ বার কোপে পরিচালক শ্রীজিৎ রায়?

এ বার কোপে পরিচালক শ্রীজিৎ রায়? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সরস্বতী পুজোর আগের রাতে আনন্দবাজার অনলাইন প্রথম জানিয়েছিল, ধারাবাহিকের পরিচালক শ্রীজিৎ রায় এ বার টলিউডের অন্দরে চলতে থাকা রাজনীতির শিকার। শীঘ্রই তাঁর নতুন ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হওয়ার কথা। জোরকদমে সেট তৈরির কাজ চলছে। আচমকাই শনিবার রাতে শোনা গিয়েছিল, আর্ট সেটিং গিল্ডের টেকনিশিয়ানেরা নাকি তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। তাঁরা কাজ করতে চাইছেন না। রবিবার, সরস্বতী পুজোর দিন সকালে শ্রীজিৎ জানান, আনন্দবাজার অনলাইনে সেই খবর প্রকাশের পরেই আবার কাজ শুরু হয়। সোমবার সকালে ফের তিনি অসহযোগিতার সম্মুখীন। পরিচালকের কথায়, “আর্ট সেটিং গিল্ড থেকে সেখানকার সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন আমার সঙ্গে কাজ না করেন।”

Advertisement

লিখিত ভাবে কি তাঁকে এই নির্দেশ জানানো হয়েছে? পরিচালকের দাবি, কোনও লিখিত নির্দেশ তাঁকে জানানো হয়নি। শিল্প নির্দেশক বিভাগের সদস্যদেরও কোনও লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শ্রীজিৎ ডিরেক্টর্স গিল্ডের সদস্য। পরিচালকদের সংগঠনের কাছেও লিখিত ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। পুরোটাই মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। অভিযোগ, শ্রীজিৎ নাকি ডিরেক্টর্স গিল্ড-ফেডারেশন দ্বন্দ্বের সময় টেকনিশিয়ান-বিরোধী কিছু কথা বলেছিলেন। টেকনিশিয়ানরা তাতে আহত। এই কারণেই তাঁরা শ্রীজিতের সঙ্গে কোনও কাজ করবেন না।

বিষয়টির সূত্রপাত চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষে। আনুমানিক ২৫ জানুয়ারি ফেডারেশনের রোষের মুখে পড়েন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ২৯ জানুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গে তাঁর পুজোর ছবি ‘জংলা’র শুটিং শুরু করার কথা। তার ঠিক কয়েক দিন আগে হঠাৎ টেকনিশিয়ানদের তালিকা নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে শুটিং বাতিলের নির্দেশ আসে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। পরিচালক এক বারের জন্যও সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি। কিন্তু সেই সময় ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। কৌশিক বিষয়টি নিয়ে পরিচালকদের সংগঠনের সঙ্গেও কোনও আলোচনা করেননি। ফলে, গিল্ডের পক্ষ থেকেও কেউ কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। ছবির প্রযোজক প্রদীপ নন্দী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, পরিচালক নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও ফেডারেশনের এ হেন আচরণে প্রযোজকও বিস্মিত। কারণ, তাঁর আগের ছবির শুটিংয়ে ফেডারশন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিল তাঁকে।

সেই সময় এও শোনা গিয়েছিল, পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়-ও নাকি একই সমস্যায় ফেঁসেছেন। তিনিও এখনও পর্যন্ত কারও কাছে মুখ খোলেননি।

কৌশিকের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার তিন দিনের মাথায় সমাজমাধ্যমে পরিচালক একটি বার্তা দেন। বলেন, “ফেডারেশন এবং টেকনিশিয়ান্স গিল্ডের সঙ্গে সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই শুটিং শুরু করছি।” তাঁর আরও বক্তব্য, “কথা বলতে গিয়ে জানলাম আমার আগে বলা কিছু কথা টেকনিশিয়ান ভাইদের খুব দুঃখ দিয়েছে। তাঁদের গলায় অভিমান, ‘দাদা, আমাদের নিয়ে এ ভাবে আপনি বললেন!’ সামনাসামনি বসে তাঁদের বুঝিয়েছি, কী কারণে, কী বিষয়ে, কোন প্রেক্ষিতে বক্তব্য রেখেছিলাম। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। আমাদের মধ্যে যা ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা মিটে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকেই আমরা আবার আগের মতো কাজ করতে চলেছি।” অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধেও টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্যের অভিযোগ! যে দোষে দুষ্ট ছোট পর্দায় পরিচালক শ্রীজিৎও। তবে কৌশিক যতই বলুন মিটে গিয়েছে, দ্বন্দ্ব যে মেটেনি তেমনই আভাস টলিউডের অন্দরে। এ-ও শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশন কৌশিককে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নাকি প্রযোজক প্রদীপ নন্দীকেও সতর্ক করেছে, অন্য পরিচালককে নিয়ে ছবি করলে সংগঠন তাঁর পাশে থাকবে। তা হলে কি কৌশিককে নিয়েই সংগঠনের যত আপত্তি! প্রযোজক কি তবে নিজেই ভয় পেয়ে কৌশিকের ছবি থেকে সরে এলেন?

এই প্রশ্নের জবাব মেলার আগেই যূপকাষ্ঠে ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ ধারাবাহিকের পরিচালক। তিনিও পাল্টা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বলেছেন, “প্রথমেই পরিচালক হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে আসিনি। লাইন প্রযোজক হিসেবে পেশাজীবনের শুরু। ২৫ বছর কাটিয়ে ফেললাম। প্রত্যেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। কোনও দিন আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ শোনা যায়নি।” সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে। তিনি ফোনে অধরা।

নতুন বছরের শুরু থেকে কেনই বা ডিরেক্টর্স গিল্ড-ফেডারেশন নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ল?

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত বছর পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবি নিয়ে প্রথম পরিচালক গিল্ড বনাম ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব বাঁধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে সাময়িক তাতে দাঁড়ি পড়লেও অসন্তোষের চাপা আঁচ উভয় পক্ষের মধ্যেই ছিল। আরজি কর-কাণ্ডের আবহে বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় শ্লীলতাহানির প্রসঙ্গ উঠতেই ফেডারেশন সভাপতি বলেছিলেন, “৬০ শতাংশ পরিচালকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে রয়েছে।” এই বক্তব্যকে ঘিরে ফেডারেশন-পরিচালক গিল্ডের নতুন করে তরজা বাধে। গিল্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য পরিচালক স্বরূপের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন।

কৌশিক, জয়দীপের পর শ্রীজিৎ কি তারই কি ফল ভুগছেন? পরিচালকের আফসোস, “কাজ করতে গেলে বিবাদ হয়। আমার প্রশ্ন, দুই সংগঠন বিবাদে জড়ালে সংগঠনের সদস্যেরা কেন ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হবেন?” পাল্টা প্রশ্নও রেখেছেন, “এতে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার যে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি কেউ বুঝতে পারছেন না?”

Advertisement
আরও পড়ুন