Riddhi Banerjee Interview

এই ইন্ডাস্ট্রিতে মনোপলি কিংবা লবি-ভিত্তিক কাজ হচ্ছে: ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

অধ্যাপকের চাকরি ছেড়ে বেছে নিয়েছেন অনিশ্চিত জীবন, শুধুই গানকে ভালবেসে। সঙ্গীতজগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া না-পাওয়া, বিজেপি-ত্যাগ নিয়ে অকপট ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
সম্পিতা দাস
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৩
Exclusive Interview of Riddhi Banerjee about her life changing in music industry

ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

মফস্বলের মেয়ে। কোন্নগরে কেটেছে তাঁর ছোটবেলা। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে শুরু গানের তালিম। বহু বছর ধরে গান গাইছেন। মায়ের হাত ধরে কলকাতায় এসে মঞ্জু গুপ্ত, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, মায়া সেনের কাছে গান শেখার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। বড় হয়ে অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানকেই যেন বেছে নিলেন তিনি। রিয়্যালিটি শোয়ে মুখ দেখাননি এখনও। ব্রাত্য বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান থেকে। সঙ্গীতজগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া-না পাওয়া, বিজেপি ত্যাগ নিয়ে অকপট ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদ বা রজনীকান্তের গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

Advertisement

ঋদ্ধি: আমি নিজে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলাম। গানের টানে চাকরি ছাড়ি। সেই অর্থে স্রোতের বিপরীতে হাঁটি। নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছি। ‘পঞ্চ কবি’ গানের ব্র্যান্ডিং কিন্তু আমার তৈরি করা। রবীন্দ্র-নজরুলের গান তো অনেকেই করেন। কিন্তু বাকিদের গানকে সারা বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের কাছে পুনরুজ্জীবিত করেছি। সত্যি বলতে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন। আর বেশি সমস্যা হয়, যদি তুমি কারও ‘ইয়েস ম্যান’ না হও, সবাইকে ফোন না করো, আবার স্পষ্টবাদী হও। তখন সব জায়গা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: ‘ইয়েস ম্যান’ হতে না পারার কী কী খেসারত দিতে হয়েছে?

ঋদ্ধি: অনেক। পশ্চিমবঙ্গে তো কাজ পাই না (জোর গলায়)। যাঁরা প্রাইভেট অনুষ্ঠান করেন, তাঁরা ডাকেন। আমার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ‘পশ্চিমবঙ্গ সঙ্গীত মেলা’য় ডাক পায় না। ২৫ বৈশাখে সুযোগ পাই না, দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রসাদের অনুষ্ঠানে সুযোগ পাই না। আগে কষ্ট পেতাম। এখন মনকে বোঝাই, যা পেয়েছি আমার থেকে অনেক গুণী মানুষও পান না।

প্রশ্ন: বাংলা সিনেমাতেও অনেক ধরনের সুযোগ আছে, সেখানেও ব্রাত্য আপনি?

ঋদ্ধি: ডাক তো আসছে না। একটা-দুটো সুযোগ পেয়েছি, সেগুলি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। আসলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মনোপলি’ কিংবা লবি-ভিত্তিক কাজ হচ্ছে। এখানে সবাই নিজেদের পছন্দের মানুষ কিংবা প্রযোজকের বলে দেওয়া মানুষের সঙ্গে কাজ করে। আমার দুভার্গ্য, কোনও লবিতে ঢুকতে পারিনি।

Exclusive Interview of Riddhi Banerjee about her life changing in music industry

প্রশ্ন: এখানে ডাক পান না, কিন্তু বিদেশে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। এই যোগাযোগ তৈরি হল কী ভাবে?

ঋদ্ধি: বিদেশের বড় বড় সব অনুষ্ঠানে ডাকে। আমার প্রচুর ছাত্রছাত্রী আছে। ২০১৩ সালে টরোন্টোতে প্রথম বঙ্গ সম্মেলনে যাওয়া। অনুষ্ঠানটা হিট করে। সেখান থেকে বিদেশে যাত্রা শুরু। সেখানকার মানুষ দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদের গান, পুরাতনী টপ্পা আমার কণ্ঠে শুনতে পছন্দ করেন। আমি গানের সুর-তালকে অক্ষুণ্ণ রেখে যুগোপযোগী করে দর্শকের সামনে রাখি।

প্রশ্ন: বাংলা টেলিভিশনে এত সঙ্গীত রিয়্যালিটি শো, সেখানেও দেখা যায় না আপনাকে। কেন?

ঋদ্ধি: হয়তো কেউ চেনেই না আমাকে। আসলে যতটা তদ্বির করলে কিংবা যতটা যোগাযোগ থাকলে এসব রিয়্যালিটি শোয়ে ডাকে, ততটা তদ্বির আমি করি না। l আর পশ্চিমবঙ্গের বহু শিল্পী ‘ওভাররেটেড’।

প্রশ্ন: কাদের দেখে এমন মনে হয়?

ঋদ্ধি: না, নাম বলি কী করে! সকলেই সহকর্মী। কেউ বয়সে বড়, কেউ বয়সে ছোট। অনেকের গান শুনেই মনে হয়, বড় বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আবার অনেকে পরিচিতি পাচ্ছে না।

Exclusive Interview of Riddhi Banerjee about her life changing in music industry

প্রশ্ন: আপনি কখনও মাচা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন?

ঋদ্ধি: কেরিয়ারের শুরুর দিকে দু-তিনটে করেছি। ওখানে তিনটে গান গাওয়ার পরই ‘পালকিতে বৌ চলে যায়’ কিংবা ‘কলকাতার রসগোল্লা’ গাওয়ার অনুরোধ আসে। সেটার জন্য আমি যথাযথ নই। ওগুলো আমি জানি না।

প্রশ্ন: জনপ্রিয়তা পেতে গেলে সব ধরনের হিন্দি-বাংলা গান, মূলত দ্রুত লয়ের গান গাইতে হবে, রিল তৈরি করতে হবে, এটা মানেন?

ঋদ্ধি: এখন শুনি নেটপ্রভাবীদের কাজ বেশি। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা নেটপ্রভাবীদের মুখ চায়। আসলে অতিমারির পর সময়টাই পাল্টে গিয়েছে। আমার কিন্তু, কিছু রিল দেখতে ভালই লাগে। সমাজমাধ্যম একটা অবসাদের জায়গা। সারা ক্ষণ একটা ‘আসুন কিছু করে দেখাই’ মানসিকতা সকলের। কলকাতা খুব অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই অশ্লীল কথা, বাজে কথা শুনতে হয়। মানুষ হিসাবে খুব স্পর্শকাতর, তাই খারাপ লাগে।

প্রশ্ন: আপনার বিজেপিতে যোগ দেওয়া কি সরকারি কাজ না পাওয়ার আসল কারণ?

ঋদ্ধি: আমি আগেও সরকারি কাজ খুব একটা পেতাম না। তবে ‘সঙ্গীত মেলা’য় ডাক আসত তখন। আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাবান ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধ হয়েছিল। কারণ তাঁর বা তাঁদের সঙ্গে আপস করতে পারিনি। তখন আমাকে অন্যায় ভাবে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের সময় মনে হল, এমন অনাথ সন্তানের মতো ঘুরে বেড়ানোর থেকে মাথায় একটা ছাতা হওয়া খুব দরকার। সেই ভাবনা থেকে বিজেপির ‘কালচারাল সেল’-এ যোগদান করি। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, এখানে সংস্কৃতির কাজ খুব কম। তাই, আমি বিজেপি ছেড়ে দিই। তার পর থেকে সরকারি কাজ, সরকারি হল পাই না।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা রয়েছে?

ঋদ্ধি: অনেক পরিকল্পনা আছে। এখন বিদেশে বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে পরিচালনার কাজ করেছি। আমি সব সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করি, যেটা নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। স্টেজে বসে চারটে জ্ঞান দিয়ে লাভ নেই। অতুলপ্রসাদ সেনকে নিয়ে কিছু রিসার্চের কাজ করছি। কাজ নিয়ে থাকতে ভালবাসি।

Advertisement
আরও পড়ুন