সেরা: সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কলকাতায় ফিরলেন ইস্টবেঙ্গলের মেয়েরা। বিমানবন্দরে ট্রফি নিয়ে ফাজ়িলা। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
ঘড়িতে রাত নয়টা পঁয়ত্রিশ। মোবাইলের তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু কলকাতা বিনামবন্দরে এলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। এখানকার শীত যেন লাল-হলুদ আবির, স্মোক বম্বের তাড়নায় দূরের কোনও অতিথি। প্রায় তিনশো সমর্থকের কণ্ঠের ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত।
না, প্রথমটায় দেখে বিশ্বাস করতে পারেননি সদ্য এশিয়াসেরা ফুটবলাররাও। প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক গোল করা ফাজ়িলা ইকওয়াপুট তো বলেই ফেললেন, “এত সমর্থক দেখে বিস্মিত। ভাবতে পারিনি বিমানবন্দরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে রাতে এত সমর্থক আসবে।”
কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের ছেলেদের দলের কোনও বিদেশি বা তারকা ফুটবলার গভীর রাতে এলেও হাজার হাজার সমর্থক তাঁদের দেখতে ছুটে যান। গত বছরে সুপার কাপ জয় ছাড়া সিনিয়র দলের তেমন কোনও সাফল্য নেই। সেখানে মহিলা দল ২১ বছর পরে ক্লাবকে আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের স্বাদ দিল। ট্রফি জিতিয়েও তাঁরা ঘরে ফিরলেন মাত্র শ’তিনেক সমর্থকের জয়ধ্বনিতে! এমনকি মহিলা সমর্থকদের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা।
এত দিন ধরে যা বরাদ্দ ছিল কার্লেস কুয়াদ্রাত বা অস্কার ব্রুসোদের জন্য, আজ দেখা গেল সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছেন অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজ়। কোচ সহ গোটা দল বিমানবন্দরের গেট দিয়ে বেরনোর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকে সমর্থকরা জমায়েত হতে শুরু করে। ‘অ্যান্টনি, অ্যান্টনি’ বা ‘ফাজ়িলা, ফাজ়িলা’ ধ্বনিই বুঝিয়ে দিচ্ছিল মশালবাহিনীর ব্যাটন এখন কারা বয়ে নিয়ে চলেছেন। ফাজ়িলা ট্রফি ধরে হাসিমুখে সামনে দাঁড়াতেই একসঙ্গে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠল। বেশ কয়েক জন সমর্থক জড়িয়ে ধরলেন লাল-হলুদ কোচকে। তাঁর চোখ-মুখই বলে দিচ্ছিল যে, তিনিও বেশ অভিভূত। কোচও ট্রফি তুলে ধরলেন— যেন বলতে চাইলেন, ‘এই ট্রফি তোমাদেরই’। টিম বাস ছেড়ে দেওয়ার সময়ে হাত নেড়ে সমর্থকদের ধন্যবাদও জানান ফাজ়িলারা। ট্রফি জয়ের কারণে সোমবার দুপুরে ক্লাব তাঁবুতে পতাকা উত্তোলন হবে।
বীরাঙ্গনাদের ঘরে ফেরার সাক্ষী হিসেবে হাজির ছিলেন টালিগঞ্জের নবম শ্রেণির জিনিয়া দেবনাথ। ইস্টবেঙ্গলের অন্ধ সমর্থকের কথায়, “ইস্টবেঙ্গলের মেয়েদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করেছে। ভারতীয় ফুটবলের অন্ধকার অবস্থায় আমাদের দল শুধু বাংলার নয়, গোটা ভারতকে আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে আশা করেছিলাম, পুরুষ দলের মতো মহিলা দলকে অভ্যর্থনা জানাতে আরও বেশি সংখ্যক সমর্থক আসবে।” হাওড়ার বালি থেকে এসেছিলেন সৃজিতা সাহা। লাল-হলুদ পতাকা নাড়তে নাড়তে বলছিলেন, “ফাজিলারা আমাদের গর্বিত করেছে। এই বছরে মেয়েরা তিনটি ট্রফি জিতেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রফিজয় মহিলা ফুটবলের আরও নতুন দিগন্ত খুলে দিল।”
নেপালেই ২১ বছর আগে সান মিগুয়েল আন্তর্জাতিক কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেটাই ছিল শেষ বার লাল-হলুদের আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়। সেই দলে ছিলেন ভাইচুং ভুটিয়া। শনিবার ফের সেই নেপালেই শাপমুক্তি ঘটানোর নেপথ্যে কিছুটা হলেও রয়ে গেলেন ভাইচুং। ইস্টবেঙ্গল শিবির থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ফাইনালের দিন সকালে ভিডিয়ো বার্তায় সৌম্যা গুগুলথদের উজ্জীবিত করেছিলেন ভাইচুং।
কী বলেছিলেন তিনি? এক ফুটবলারের কথায়, “ভাইচুং স্যর প্রথমেই শুভেচ্ছা জানালেন। তার পরে বলেন, ‘তোমরাই এখন বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছ। মাঠে নেমে নিজেদের উজাড় করে দাও। তোমাদের এশিয়াসেরা হতেই হবে’। এর পরে কোচ অ্যান্টনিও মেয়েদের দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “এএফসিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এখানে কিন্তু আমরা ট্রফি জিতবই।”
কথা রেখেছেন ফাজ়িলারা। দলকে ট্রফি জিতিয়েছেন। কিন্তু যোগ্য সমর্থন কি তাঁরা পেলেন?