Rare Disease by lyssavirus

বাদুড়ের কামড়ে মৃত্যু! লিসাভাইরাসের সংক্রমণে বিরল রোগ অস্ট্রেলিয়ায়, কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস?

বাদুড়ের কামড়ে জলাতঙ্কের মতো রোগ। রেবিসের চেয়েও সংক্রামক ভাইরাসের হানা অস্ট্রেলিয়ায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ ১২:১৫
A Man Has died from an extremely rare rabies-like infection transmitted by a bat bite

বাদুড়ের কামড়ে মৃত্যু, জলাতঙ্কের মতো কী রোগ ছড়াল? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

১৯৯০ সালের দিকে প্রথম শোনা গিয়েছিল এই ভাইরাসের নাম। আবারও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস! করোনার পরে ফের একবার বাদুড় থেকে রোগ ছড়ানোর খবর শোনা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বাদুড়ের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে পাওয়া গিয়েছে জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রেবিস থেকে ওই রোগ হয়নি। বরং এর জন্য দায়ী লিসাভাইরাস। বাদুড়ের লালায় থাকে এই ভাইরাস। সাধারণত মানুষ বা পশুপাখির শরীরে ছড়ায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভাইরাসটি ওই ব্যক্তির শরীরে ঢোকে এবং খুব দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের থেকে ভাইরাস আরও অনেকের শরীরে ঢুকেছে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

Advertisement

গত পঞ্চাশ বছরে ইবোলা ভাইরাস, নিপা ভাইরাস, হেন্ড্রা ভাইরাস, সার্স-কোভ, মার্স-কোভ, সার্স কোভ-২ (করোনা)–এর মতো সংক্রমণের জন্য দায়ী হল বাদুড়। গবেষণা বলছে, ওই ভাইরাসগুলি হল আরএনএ ভাইরাস, যা পরিবর্তিত পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই ক্ষমতাই তাদের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। তাই সংক্রমণ রুখতে মানুষ ও বাদুড়ের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার বলেও সচেতন করা হচ্ছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে একটি ফক্স ব্যাট কামড়ে দেয় বলে খবর। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে লিসাভাইরাসের অস্তিত্ব। অস্ট্রেলিয়ার কুইনস্‌ল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিম ম্যাহোনি জানিয়েছেন, বাদুড়ের লালা থেকে সরাসরি ভাইরাসটি ওই ব্যক্তির রক্তে মিশে যায়। তার পর খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। লিসাভাইরাস খুব সংক্রামক, মানুষের শরীরে একবার সংক্রমণ ঘটলে আরও বহু জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রেবিসের থেকেও ভয়ঙ্কর লিসাভাইরাস

করোনার মতোই আরএনএ ভাইরাস। এটি একটি নিউরোট্রপিক ভাইরাস, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। করোনা যেমন শরীরে ঢুকে ফুসফুসকে সংক্রমিত করে, এই ভাইরাস ঠিক তেমনই স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করতে শুরু করে। এটিও রেবিস ভাইরাস পরিবারেরই অন্তর্ভুক্ত। ফ্লাইং ফক্স বা ফ্রুট ব্যাট বা ফল খাওয়া বাদুড় এই ভাইরাসের বাহক। বাদুড়ের আঁচড়, কামড় বা মল-মূত্র, মৃত বাদুড়ের দেহাবশেষ থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ অ্যালিসন পিল জানিয়েছেন, সব ফল খাওয়া বাদুড় কিন্তু এই ভাইরাস বহন করে না। কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতি রয়েছে। সেই প্রজাতির বাদুড় যদি মানুষের সংস্পর্শে চলে আসে, তা হলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। ২০১৮ সালেও এই ভইরাসটি কয়েক জনের মধ্যে ছড়িয়েছিল।

কী রোগ ছড়াতে পারে?

বিরল স্নায়ুর রোগের কারণ হতে পারে লিসাভাইরাস। শরীরে ঢুকলে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পাবে। প্রথমে জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি, আঁচড় বা কামড়ের জায়গায় ক্ষতস্থান ফুলে রক্ত বা পুঁজ বেরনোর মতো উপসর্গ দেখা দেবে। ধীরে ধীরে রোগীর শরীর পক্ষাঘাতে পঙ্গু হতে থাকবে। জল দেখলে আতঙ্ক হবে। অস্থিরতা বাড়বে, বিভ্রান্তি তৈরি হবে। রোগীর খিঁচুনি শুরু হতে পারে, কোমায় চলে যেতে পারে।

লিসাভাইরাসের সংক্রমণের কোনও চিকিৎসা এখনও অবধি নেই। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কোনও অচেনা রোগে কেউ আক্রান্ত হলে কিংবা অজানা ভাইরাসের আক্রমণ ঘটার আশঙ্কা দেখলেই আক্রান্তের নমুনা জিনোম পরীক্ষার জন্য পাঠানো জরুরি।

Advertisement
আরও পড়ুন