Aging Spread through Protein

জরা-বার্ধক্য কি থাকবে না? ‘দুষ্ট’ প্রোটিনের বিজয়রথ থামাতে কোমর বেঁধে নামছেন বিজ্ঞানীরা

বার্ধক্যের সময়টাকে ধরেবেঁধে আটকে রাখা যাবে অনন্ত কাল? বয়সের হিসেবে বার্ধক্যে পৌঁছেও দেহে-মনে যৌবন ধরে রাখার উপায় কি তবে আয়ত্তে এল?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৫
A new study pinpoints a single protein as being able to spread aging through your body

বয়স বাড়লেও যৌবন থাকবে দেহ-মনে, উপায় পেলেন কি গবেষকেরা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মানুষ কি তবে আর বুড়ো হবে না? শুধু কোনও দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া অনিবার্য মৃত্যুর সময়কেও পিছিয়ে দেওয়া যাবে? বার্ধক্যের সময়টাকে ধরেবেঁধে আটকে রাখা যাবে অনন্ত কাল? বয়সের হিসেবে বার্ধক্যে পৌঁছেও দেহে-মনে যৌবন ধরে রাখার উপায় কি তবে আয়ত্তে এল?

Advertisement

বার্ধক্যে পৌঁছেও যৌবন ধরে রাখার উপায় খুঁজে পাওয়া গেল বলে দাবি করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিনের গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, যুবক থাকা বা বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়াটা পুরোটাই কোষের জন্ম-মৃত্যুর খেলা। কোষ বুড়িয়ে যাবে, তার ক্ষয় হবে, কোষের মৃত্যুর পর সে জায়গায় নতুন কোষ জন্মাবে। এই হল সহজ বিষয়। যত দিন প্রক্রিয়াটি দুরন্ত গতিতে চলবে, তত দিনই যৌবন। যখন জন্মহার কমে, কোষের মৃত্যুহার বাড়বে, ক্ষয় হবে বেশি, তখন থেকেই বার্ধক্যের সূত্রপাত। এই প্রক্রিয়াটিকে যদি কোনও ভাবে থামিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে কেল্লাফতে। বার্ধক্যকে পুরোপুরি জয় করে ফেলবে মানুষ। দেহমনে থাকবে অফুরন্ত যৌবন।

কোরীয় বিজ্ঞানীরা তাঁদের দাবির পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, জিনের ওপর মানুষের ‘দাদাগিরি’-ই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে। কারণ বার্ধক্যের জন্য দায়ী যে প্রোটিন, তার মতিগতি ধরে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রোটিনের নাম ‘আরইএইচএমজিবি১’। সে-ই আসল খলনায়ক। এর কাজ হল কোষে কোষে বার্ধক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কখন বুড়িয়ে যাবে কোষ, কোন অঙ্গের কোষের মৃত্যুর সময় এগিয়ে এল, এই সব খবরাখবরই চালান করা তার কাজ। রক্তস্রোতে বয়ে গিয়ে সারা শরীরের কোষে কোষে খবর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে সে। শরীরের আঘাত লাগলে, সেখানকার কোষগুলির কতটা ক্ষতি হয়েছে সে খবরও পৌঁছে দেয় এই প্রোটিন। অর্থাৎ, এর কাজ হল এক কোষের হাঁড়ির খবর অন্য কোষে পৌঁছে দেওয়া। বুড়ো হওয়ার সময় এলে, সে খবরও দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দেয় সে। তাই এর গতিরোধ করতে পারলেই খবর আদানপ্রদানের পথটা বন্ধ হয়ে যাবে।

কোরিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক ওক হি জিয়ন জানান, গবেষণাগারে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইঁদুরদের শরীরে ওই প্রোটিনের গতিরোধ করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রোটিনটির দাপট কমে যাওয়ার পর, কোষের মৃত্যু কম হচ্ছে। নতুন কোষের জন্ম দ্রুত হচ্ছে, ফলে কোষের ক্ষয়ে যাওয়ার সময়টা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে।

কেন বার্ধক্য আসে, তার একটা কারণ আছে। যৌনকোষ ও রক্তের কোষ ছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষেই থাকে ক্রোমোজোম থাকে ২৩ জোড়া করে। শরীরের ক্রোমোজমে যে ডিএনএ বা ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে, তার একটা ‘লেজ’ (টেল) থাকে। সেই ‘লেজ’টার নাম- ‘টেলোমেয়ার’। বার্ধক্যের দিকে মানুষ যত এগোতে থাকে, ততই আকারে ছোট হতে থাকে সেই টেলোমেয়ার। যদি আকারে ছোট হয়ে যাওয়া টেলোমেয়ারকে টেনেটুনে বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলেই বয়সের হিসেবে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও, দেহে ও মনে চিরযুবাই থাকা যাবে।

শুধুই যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মে টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে উত্তরোত্তর, তা নয়। বায়ুদূষণ, ধূমপান ও মদ্যপানের মতো বাইরের কোনও কারণও টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য উত্তরোত্তর কমিয়ে দিয়ে বুড়ো হওয়ার সময়টাকে এগিয়ে আনতে পারে। আর টেলোমেয়ারের পরিণতির খবর দায়িত্ব নিয়ে কোষে কোষে পৌঁছে দেয় ওই প্রোটিন। তাই তার গতিরোধ করতে পারাটাই এখন মূল কাজ। এতে বার্ধক্যজনিত রোগগুলিও দূরে থাকবে বলেই দাবি গবেষকদের।

Advertisement
আরও পড়ুন