Psychological effects of living alone

‘একা ভয় করে’, ঊষা নাদকার্নির মতো একাকিত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন অনেক প্রবীণই, মনের ভার কমানোর উপায় কী?

টিভি তারকা ঊষা নাদকার্নি সম্প্রতি জানিয়েছেন, একাকিত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি। বাড়িতে কথা বলার মতোও কেউ নেই। এই সমস্যা এখন অধিকাংশ প্রবীণেরই। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ১৪:৪৮
Actor Usha Nadkarni expresses her fear of living alone, how older adults can manage fears

একাকিত্বে ভুগছেন ঊষা নাদকার্নি, একা থাকতেও ভয় পাচ্ছেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাড়িতে একা। কথা বলার কেউ নেই। ভাইয়ের মৃত্যু পরে একেবারেই একা হয়ে গিয়েছেন অভিনেত্রী ঊষা নাদকার্নি। ‘পবিত্র রিস্তা’ ধারাবাহিকে তাঁর অভিনীত ‘সবিতা দেশমুখ’ নামক চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তা ছাড়াও একাধিক সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের তিনি পরিচিত মুখ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ঊষা জানিয়েছেন, আপনজন বলতে এখন আর কেউ নেই তাঁর। একাকিত্ব গ্রাস করছে দিন দিন। শরীর খারাপ হলে ওষুধ দেওয়ার কেউ নেই, মাটিতে পড়ে গেলে ধরে তোলারও কেউ নেই। একা থাকার ভয় জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসছে। এই অবস্থাকে তিনি রীতিমতো ভয় পেতে শুরু করেছেন। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

Advertisement

ঊষা নাদকার্নির মতো অবস্থা অনেক প্রবীণেরই। জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে গিয়ে একা বোধ করছেন প্রায় সকলেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা একাকিত্বের রং যেন বেশিই বিষাদময়। সেখানে কোথাও ঘিরে রয়েছে কারও ফিরে আসার অপেক্ষা, কোথাও একরাশ শূন্যতা। বার্ধক্যে পৌঁছনো মানেই যে একাকিত্ব ঘিরে ধরবে, তা নয়, এমনটাই জানালেন জেরেন্টোলজিস্ট ধীরেশ চৌধুরী। তাঁর মতে, আগে একান্নবর্তী পরিবারে নানা প্রজন্মের মানুষের সঙ্গে থাকার ফলে একা বোধ করার অবকাশ থাকত না। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার আলাদা হয়েছে, ছেলেমেয়েরা কর্মসূত্রে দূরে থাকছেন, আবার কখনও বয়স্কদের সংসার থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে একাকিত্বের যন্ত্রণা বাড়ছে। এই বয়সে উদ্বেগের আরও একটি কারণ হল শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গেই ভাঙতে থাকে শরীর। ফলে ভয়টা আরও বেশি ঘিরে ধরে।

দেশের ‘সিনিয়র সিটিজ়েন’রা ভাল আছেন কি না, তা নিয়ে এখন অনেক কর্মশালা আয়োজিত হয়, সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারও চলে। ২০২৩-এর ‘ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট’ বলছে, ৬০ কিংবা ষাটোর্ধ্বের সংখ্যা দেশে ১৪.৯ কোটি— জনসংখ্যার প্রায় ১০.৫ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটাই দ্বিগুণ হবে। প্রবীণদের মধ্যে আশি-ঊর্ধ্বদের সংখ্যাও বাড়ছে। শহুরে সচ্ছ্বল প্রবীণদের অবস্থাও ভাল নয়। উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগটুকু হয়তো পান। শহরতলি, গ্রামাঞ্চলের বয়স্কেরা অনেক সময়ই সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আসলে, দেশের অধিকাংশ বয়স্ক যত্নআত্তি, সেবা-শুশ্রূষা সন্তান-সন্ততিদের থেকেই পেতেন। আজকাল উচ্চশিক্ষা, চাকরির প্রয়োজনে ছেলেমেয়েরা বাইরে যেতে বাধ্য। যৌথ পরিবার ভেঙেছিল আগেই। অণু পরিবারেরও নতুন ধরনের ভাঙন হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিবারে বয়স্করা অনেক ক্ষেত্রেই ব্রাত্য।

বয়স্কদের এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে তাঁদের মনের যত্ন নেওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, একাকিত্বের বোধ ও বাড়তে থাকা মানসিক যন্ত্রণা অনেক সময়েই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশের ঝুঁকি বাড়ায়। সমাজ থেকে নিজেদের আলাদা করে ফেলার চেষ্টাও করেন তাঁরা। তাই বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে সংসারের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তাঁদের সঙ্গে রোজ অন্তত এক ঘণ্টা ভাল সময় কাটানো খুবই জরুরি। স্মার্টফোনে অ্যাপ ব্যবহার করা শিখিয়ে দিতে পারেন। এতে তাঁদের সময় কাটবে, নির্ভরতাও কমবে। ফলে আত্মবিশ্বাসী হবেন। বাগান করা, ছবি আঁকা, গান শোনার মতো কাজেও সময় কাটালে ভাল লাগবে। দূরে থাকলেও দিনে এক বার কি দু’বার নিয়ম করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলাও জরুরি। তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিন। পাশে থাকার আশ্বাস দিন। বয়সের থাবা শরীরে তো বসবেই, কিন্তু মনে যেন তা আঁচড় কাটতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন