Rare Appendix Cancer

অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার ছড়াচ্ছে কমবয়সিদের, বিরল রোগটি আগে ১০ লক্ষে এক জনের হত

অ্যাপেনডিক্সেও ক্যানসার হয়? রোগটি খুবই বিরল। কিন্তু এখন কমবয়সিদের মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়ছে। কেন ছড়াচ্ছে এই মারণ রোগ?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ১৪:৫২
Appendix Cancer is on rise among young adults, why early detection is necessary

অ্যাপেনডিক্স ক্যানসার কতটা ভয়াবহ, কী কী লক্ষণ দেখা দেয়? ছবি: ফ্রিপিক।

অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা নিয়ে এখন আর কেউ তেমন মাথা ঘামান না। এত রকম উন্নত অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি এসে গিয়েছে, যে অ্যাপেনডিক্সের সার্জারি সহজে ও কম সময়েই হয়ে যায়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামক সমস্যাটি নিয়ে তেমন চিন্তা না থাকলেও, অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার নিয়ে কিন্তু যথেষ্টই উদ্বেগের কারণ রয়েছে। অনেকেই ভাবতে পারেন, অ্যাপেনডিক্স ক্যানসারও হয়? খুবই বিরল এই রোগ। দশ লাখে হয়তো এক জন বা দু’জনের হয়। একেবারে গোড়াতে ক্যানসার ধরা না পড়লে, তার নিরাময়ের পথও খুব কঠিন। স্তন, প্রস্টেট, কোলন বা ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার প্রচার যতটা হচ্ছে, অ্যাপেনডিক্সের ক্যানসার নিয়ে ততটা প্রচার নেই। অথচ এই রোগটিই এখন বেড়ে চলেছে কমবয়সিদের মধ্যে।

Advertisement

আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকেরা জানিয়েছেন, কমবয়সিদের মধ্যে অ্যাপেনডিক্স ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। এর অন্যতম বড় কারণ হল, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পদ্ধতি। পাশাপাশি পরিবেশ থেকেও দূষিত পদার্থ ঢুকছে শরীরে, যা মারণ রোগের কারণ হয়ে উঠছে। অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার কী ভাবে হচ্ছে তা জানতে গেলে আগে অ্যাপেনডিক্স ও অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।

অ্যাপেনডিক্স আর অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী?

খাদ্যনালিতে ক্ষুদ্রান্ত্র আর বৃহদন্ত্রের সন্ধিস্থলে ছোট থলির মতো একটি জিনিস থাকে, যাকে বলে অ্যাপেনডিক্স। শরীরের ডান দিকে তলপেটের কাছে থাকে সেটি। এই থলির মধ্যে অজস্র ভাল ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা পরিপাকে সাহায্য করে। ‘গাট ব্যাক্টেরিয়া’ কথাটি এখন প্রায়ই শোনা যায়। এই সব ব্যাক্টেরিয়ার বাসস্থানই হল অ্যাপেনডিক্স। ব্যাক্টেরয়েড, ল্যাক্টোব্যাসিলাসের মতো উপকারী ব্যাক্টেরিয়ারা থাকে সেখানে। যদিও অ্যাপেনডিক্স শরীরের লুপ্তপ্রায় অঙ্গ, সেটি না থাকলেও তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। তবে থাকলে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ারা সেখানে আশ্রয় নেয় ও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

খাবার খাওয়ার সময়ে শরীরে যে সব টক্সিন বা দূষিত পদার্থ ঢোকে, সেগুলি ওই ভাল ব্যাক্টেরিয়ার উপর প্রভাব খাটায়। খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, নরম পানীয়, অতিরিক্ত ক্যাফিন যুক্ত খাবার খেলে খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। তখন অ্যাপেনডিক্সে সংক্রমণ ঘটে, সে জায়গাটা ফুলে ওঠে। পেটের ডান দিকে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই বলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। সাধারণত ১০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বেশি দেখা যায়।

কখন হয় ক্যানসার?

প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেতে শুরু করলে, অতিরিক্ত ধূমপান করলে অ্যাপেনডিক্সের কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়ে ক্যানসার কোষের জন্ম হয়। ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, গ্যাস্ট্রিসাইটিস বা পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া যাঁদের আছে, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। কয়েক রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও ক্যানসার হতে পারে। আবার পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অথবা বংশগত ভাবে কারও ‘মাল্টিপল এন্ডোক্রিন নিয়োপ্লাসিয়া টাইপ ১’ (এমইএন১) সিনড্রোম থাকলে, তাঁর অ্যাপেনডিক্স ক্যানসার হতে পারে।

অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার ছড়াতে থাকলে ওজন হঠাৎ করেই কমতে থাকবে, তলপেটে মারাত্মক যন্ত্রণা শুরু হবে, সব সময়েই পেট ভর্তি মনে হবে। সেই সঙ্গে কখনও ডায়েরিয়া, আবার কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দেবে। এ ক্ষেত্রে সিআরএস এবং হাইপারথারমিক কেমোথেরাপি নামে দু’ধরনের চিকিৎসা আছে। তবে ক্যানসার কোষ বেশি ছড়িয়ে পড়লে তখন চিকিৎসা পদ্ধতি আরও জটিল হয়ে যাবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করলেই ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে।

Advertisement
আরও পড়ুন