Bone Glu

আঠা দিয়ে জুড়বে ভাঙা হাড়? হাত- পা ভাঙলে আর চিন্তা নেই, ‘বোন গ্লু’ তৈরি করে ফেললেন বিজ্ঞানীরা

ভাঙা হাড় নিপুণ ভাবে জুড়ে যাবে মাত্র তিন মিনিটে। একেবারে এঁটে বসবে একে অপরের সঙ্গে। প্লাস্টার করার ঝক্কি থাকবে না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১৪
Chinese researchers claimed to have developed a medical bone glue that can be used to treat fractures

প্লাস্টারের ঝক্কি নয়,আঠা দিয়ে জোড়া যাবে ভাঙা হাড়! ছবি: এআই।

হাড় এমনই এক জিনিস, যার আলাদা করে যত্নআত্তির তেমন প্রয়োজন পড়ে না। তাই হাড় থাকতে হাড়ের মর্মও বিশেষ কেউ বোঝেন না। বোঝে্ন তখনই, যখন সেটি ভাঙে বা চিড় খায়। হাড় ভাঙা মানেই প্লাস্টার করো, ধাতব প্লেট বসাও— হাজারটা ঝক্কি। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও। এক বার হাত, পায়ের হাড় ভাঙলে তা জোড়া দেওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। এই সব সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা নাকি বানিয়ে ফেলেছেন হাড় জোড়া দেওয়ার বিশেষ এক রকম আঠা। ভাঙা হাড়ে আঠা লাগিয়ে দিলেই তা নাকি নিখুঁত ভাবে জুড়ে যাবে। একেবারে এঁটে বসবে একে অপরের সঙ্গে।

Advertisement

চিনের ঝেজিয়াং প্রদেশের বিজ্ঞানীরা হাড় জোড়া দেওয়ার আঠা তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন। আঠার নাম ‘বোন ০২’। গবেষণাটি যাঁর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে সেই বিজ্ঞানী লিন জ়িয়ানফেং দাবি করেছেন, হাড় যে ভাবেই ভাঙুক না কেন, তাতে আঠা লাগিয়ে দিলেই হবে। আঠার জোর এমনই যে, মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে ভাঙা হাড় নিপুণ ভাবে জুড়ে যাবে। তার পরেও হাড়ের বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই হবে। রোগীর না থাকবে কোনও যন্ত্রণা, না প্লাস্টার করার ঝামেলা।

হাড়ের অনেক স্তর থাকে। একেবারে বাইরে একটা পর্দা থাকে, যাকে পেরিঅস্টিয়াম বলা হয়, তার পর থাকে কর্টিকল বোন, তার মাঝে থাকে মজ্জা। অনেকটা রডের মতো, ত্রিমাত্রিক গঠনের। রডের যে কোনও একটা অংশ যদি ভেঙে যায়, তখনই হয় গন্ডগোল। ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। আবার অনেক সময়ে হাড় থেঁতলেও যেতে পারে। হাড়ের ক্ষেত্রে এই সব কিছুকেই ‘ফ্র্যাকচার’ বলা হয়।

প্রধানত ফ্র্যাকচার হয় কোনও ট্রমা বা আঘাত থেকে। এতে হয় হাড় সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে যায় অথবা হাড়ের সঙ্গে যে পেশি, লিগামেন্ট জুড়ে থাকে, সেগুলি অনেক সময়ে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারে। অস্টিয়োপোরোসিস, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে বা অন্য কারণে স্ট্রেস ফ্র্যাকচারও হতে পারে। আবার জন্মগত কারণে হাড়ের শক্তি কম থাকলে সহজেই তাতে ফ্র্যাকচার হতে পারে। সে যে কারণেই হাড় ভাঙুক না কেন, তার চিকিৎসা খুবই জটিল। প্রথমেই এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, কিছু ক্ষেত্রে এমআরআই করে জায়গাটা দেখে নেওয়া হয়। তার পরে স্প্লিন্ট দিয়ে সাময়িক ভাবে জায়গাটাকে ধরে রাখা হয়। এই সময়েই চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, সেখানে প্লাস্টার করা হবে, না কি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। দুটো আলাদা হয়ে যাওয়া হাড়ের টুকরোকে এক রেখায় নিয়ে আসা হয় প্লাস্টার, প্লেট, স্ক্রু বা রডের সাহায্যে। তার পরেও ওই জায়গার পেশির সঞ্চালন ঠিক হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হয়। চিনা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এত কিছু জটিল প্রক্রিয়ায় না গিয়ে শুধু যদি খানিকটা আঠা লাগিয়ে দেওয়া যায়, তা হলেই হাড় জুড়ে যেতে পারে। ১৫০ জনের উপর পরীক্ষা করে নাকি সাফল্যও পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেকেরই ভাঙা হাড় জুড়েছে।

তবে গবেষণাটি সকলের জন্য কার্যকরী হবে কি না, সে উল্লেখ করেননি গবেষকেরা। গবেষণাটি পরীক্ষার পর্যায়তেই আছে। যে কোনও রকম ফ্র্যাকচার সারাতে যদি তা কার্যকর হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে যে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে, তাতে কোনও সন্দেহই নেই।

Advertisement
আরও পড়ুন