ছবি : সংগৃহীত।
চলেছে সর্দি-কাশি-গলা ব্যথার সময়। শীতে ঘরে ঘরে একই রোগের রোগী। কেউ কাশতে কাশতে রাতে ঘুমোতে পারছেন না। কারও ঠান্ডা লেগে গলা ধরে যাওয়ায় কণ্ঠস্বর শোনাই যাচ্ছে না। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার ফলে কানে-মাথায় এবং গলায় ব্যথাও হচ্ছে। সংক্রমণ হচ্ছে কণ্ঠনালীতে। এমন অবস্থায় বাঙালি বাড়িতে একটি পরামর্শ প্রায় সব রোগীই শোনেন— নুনজলে গার্গল করতে হবে! গলার সংক্রমণ কমাতে কেউ দিনে এক বার, কেউ দিনে ২-৩ বারও ঈষদুষ্ণ জলে নুন ফেলে গার্গল করেন। তবে এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, গলাব্যথা, কাশি বা গলার সংক্রমণের সমস্যা হলে আর যা-ই হোক, গার্গল করা উচিত নয়।
গার্গল করার যে সাধারণ পদ্ধতি তাতে ঈষদুষ্ণ জল মুখে নিয়ে মাথাটিকে পিছন দিয়ে হেলিয়ে ওই জল কণ্ঠনালির মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে গার্গল করা হয়। মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল কলেজের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে বিশেষ উপকার তো হয়ই না, বরং সমস্যা বাড়তে পারে। ইএনটি-র চিকিৎসক এবং মাথা ও ঘাড়-গলার সার্জন মনোজেন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্যও জানাচ্ছেন, পদ্ধতিটি উপশম হিসাবে মোটেই ঠিক নয়।
কেন গার্গল করলে সমস্যা হতে পারে?
মনোজেন্দ্র জানাচ্ছেন, গার্গল করলে কণ্ঠনালিকে আরাম দেওয়া তো দূর, বরং তাকে খানিক ব্যতিব্যস্তই করে তোলা হয়। তিনি বলছেন, ‘‘যখন গলায় ব্যথা হচ্ছে অথবা কথা বলতে গেলেই কাশি হচ্ছে কিংবা গলা ভেঙে আওয়াজ বেরোচ্ছে না, তখন বুঝতে হবে কণ্ঠনালিতেই কোনও না কোনও ভাবে সংক্রমণ হয়েছে। তখন কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। গার্গল করলে তা হয় না।’’ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, গার্গল করলে কণ্ঠনালি আরও বেশি করে কাঁপে। তাতে ব্যথা উপশমের চেয়ে খারাপই হয় বেশি। তাই তাঁর পরামর্শ, ‘‘গলার কোনও সমস্যা হলে গার্গল করবেন না।’’
তবে উপশম মিলবে কিসে?
চিকিৎসক অরুণাংশু জানাচ্ছেন, ‘‘গলায় এই ধরনের সমস্যা হলে প্রথমেই বুঝতে হবে গলার বিশ্রাম দরকার। তাই কথা কম বলতে হবে। জোরে কথা বলা যাবে না। চেঁচিয়ে কথা বলা যাবে না। গলায় ঠান্ডা লাগতে দেওয়া যাবে না। গার্গলের বদলে যদি সারা দিনে অল্প অল্প করে ঈষদুষ্ণ গরম জলে চুমুক দেওয়া যায় তবে আরাম পাবেন।’’
চিকিৎসক মনোজেন্দ্র বলছেন, ‘‘আরামের জন্য ভেপারও নিতে পারেন। তবে গরম জলে কিছু ফেলতে হবে না। সাধারণ জল গরম করে ভেপার নিলেই চলবে।’’
কত ক্ষণ ভেপার নেওয়া জরুরি?
উপশমের জন্য দীর্ঘ ক্ষণ ভেপার নেওয়ারও প্রয়োজন নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন, ‘‘অনেকে ব্যাপারটাকে প্রতিযোগিতার পর্যায়ে নিয়ে যান। কেউ বলেন, আমি ১০ মিনিট ভেপার নিয়েছি, তো কেউ বলেন আমি ১৫ মিনিট নিলাম। অথচ গরম জলে ২-৫ মিনিট ভেপার নিলেই কাজ হয়। তবে দিনে এক বার নয়, অন্তত দু’বার ভেপার নিন।’’