Jet Lag Prevention

দূর বিমানযাত্রায় জেট ল্যাগের সমস্যা? সমাধানে আগাম কোনও প্রস্তুতি নেওয়া যায়?

যাঁরা দীর্ঘ বিমানযাত্রায় অভ্যস্ত, তাঁরা ‘জেট ল্যাগ’ শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত। দূর গন্তব্যে পৌঁছনোর পর শুরু হয় শারীরিক সমস্যা। কী ভাবে ‘জেট ল্যাগ’-এর সমস্যা এড়াবেন?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:০৫
জেট ল্যাগের সমস্যা সমাধানের কোনও সহজ উপায় হয়?

জেট ল্যাগের সমস্যা সমাধানের কোনও সহজ উপায় হয়? ছবি:ফ্রিপিক।

ভারত থেকে আমেরিকায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন সুপ্রিয়া। সেখানে গিয়েই শুরু হল সমস্যা। রাতের দিকে কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক হয় না। অথচ সকাল হলেই চোখ ঘুমে ঢুলে আসে। সে এমন ঘুম যে, কিছুতেই আর বসে থাকা যায় না।

Advertisement

যাঁরা দীর্ঘ পথ বিমানযাত্রা করেন, তাঁদের অনেকেই প্রায় এমন সমস্যার সম্মুখীন। একেই বলা হয় ‘জেট ল্যাগ’।

জেট ল্যাগ কী?

আসলে দেশভেদে দিন-রাতের সময়ও বদলে যায়। ভারতে যখন রাত, কোনও এক দেশে তখন দিন। তেমনই কোনও এক জায়গায় গিয়ে পড়লে সমস্যা শুরু হয়ে যায়। আচমকা ঘুমের সময় বদলে যাওয়া, দিনের হিসাব পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে শরীর চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে ঘুমের সমস্যা, শারীরিক অস্বস্তি, মাথাব্যথা, বমি ভাবের মতো নানা রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। একেই ‘জেট ল্যাগ’ বলা হয়।

কেন এমন হয়?

আসলে দীর্ঘ বিমানযাত্রায় টাইমজ়োনের পরিবর্তন হয়। যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে শরীরকে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়। ঘুম নিয়ে গবেষণা করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা এল মেডনিক। তিনি বলছেন, ‘‘টাইম জ়োন বদলালেই আমাদের শরীরে সার্কাডিয়ান ঘড়ি বা স্বাভাবিক দেহছন্দ বিগড়ে যায়। সে জন্যই এমন সমস্যা হয়। বয়স অনুযায়ী জেট ল্যাগের প্রভাব এক এক জনের উপর এক রকম হয়। বয়স্করা বেশি সমস্যায় পড়েন।’’ শরীরের ছন্দ এবং তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা জানলে জেট ল্যাগের সমস্যা কাটানো সহজ হবে বলছেন তিনি।

অবস্থান: যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, পশ্চিমের তুলনায় পূর্ব গোলার্ধের দেশে গেলে জেট ল্যাগের প্রভাব বেশি পড়ে। কারণ, যত পূর্বে যাওয়া যায়, দিনের সময়টা তুলনামূলক কমতে থাকে। সময়ের কাঁটা সেখানে এগিয়ে যায়। যেমন কেউ নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিসে যাবেন। সেখানে সময় এগিয়ে থাকে। ফলে তিনি যদি রাত ১১টায় প্যারিসে পৌঁছন, নিউইয়র্কে তখন সন্ধ্যা ৫টা। সেই সময় কাউকে ঘুমোতে হলে, স্বাভাবিক ভাবেই ঘুম আসবে না। শরীরের পক্ষে দিন-রাতের হিসাবের সঙ্গে মানিয়ে চলাটাও কঠিন হয়ে পড়বে।

আগাম প্রস্তুতি: প্রস্তুতি আগাম শুরু করা যেতে পারে। যে দেশে বা স্থানে যাচ্ছেন, সেখানে যদি সময় এগিয়ে থাকে বা দিন আগে হয় তা হলে ঘুম থেকে ওঠার সময় ৩০ মিনিট করে এগিয়ে আনতে হবে। যেমন, যিনি সকাল আটটায় ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁকে এক সপ্তাহ সাড়ে সাতটায়, তার পরের সপ্তাহে ৭ টায়, তার পরের সপ্তাহে সাড়ে ছ’টায় ওঠা অভ্যাস করতে হবে। এই ভাবে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস এগিয়ে আনলে, রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার আগেই সেই দেশের সঙ্গে নিজের শরীরের ঘড়িকে সময়ের পার্থক্য মানিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত করে তুলুন। তা হলে জেট ল্যাগের সমস্যা দ্রুত কাটানো যাবে। সার্কাডিয়ান রিদম বিষয়ের গবেষক ফিলিস সি জ়ি বলছেন, ‘‘দেশান্তরে যাওয়ার আগে ব্যাগ গোছানোর মতোই জরুরি শরীরকেও ভিন্ন টাইম জ়োনে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা।’’

খাওয়ার সময়: যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে তাল মিলিয়ে খাওয়ার সময় বদলে ফেললেও সমস্যার সমাধান হবে অনেকটা। এতেও শরীরের পক্ষে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।

আর কী করতে পারেন?

শরীরের ছন্দের সঙ্গে আলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য ওঠার পর থেকে ধীরে ধীরে শরীরও চনমনে হয়ে উঠতে থাকে। যত বেলা বাড়ে, ততই শরীর সক্রিয় হয়। কারণ, দিনে কাজ করতে হবে, রাতে ঘুমোতে হবে, এ ভাবেই শরীর অভ্যস্ত। দিন এবং রাত সূর্যের আলো দেখেই ধার্য হয়। উজ্জ্বল আলো এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। অন্য টাইম জ়োনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে রাতের বেলা সেই আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন, যাতে শরীর মনে করতে শুরু করে সেটা দিন।

কলকাতার চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘জেট ল্যাগ কাটানোর উপায় হল বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে শরীরকে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়া। দিনের বেলা যখন প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে তখন শুয়ে না পড়ে হাঁটাহাটি করা, ঘুরে বেড়ানো দরকার। এতে যেমন ঘুম কেটে যাবে, তেমনই শরীরেও কিছুটা পরিশ্রম হবে, যা রাতে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে।’’ এ ছাড়া, রাতে হালকা খাবার খেয়ে বেশি সময় নষ্ট না করে শুতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। খুব প্রয়োজন পড়লে স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমনের ওষুধ দেওয়া হয় বলেও জানাচ্ছেন তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন