Cystic Fibrosis

কাশিটা যায় না কেন!

নাছোড় কাশির পিছনে থাকতে পারে সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো রোগ। কী করে তা বুঝবেন?

সুনীতা কোলে
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৩৪

অনেক দিন হয়ে গেল ছোট্ট তনয়ার কাশি থামছেই না। তার মা ভেবেছিলেন ঋতু বদলের সময়ে হয়তো ঠান্ডা লেগেই সর্দি-কাশি হচ্ছে। কিন্তু মাসের পর মাস একটানা কাশি কিছুতেই না সারায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হল। তিনিই জানালেন, এটা অ্যালার্জি বা সাধারণ সর্দি-কাশি হয়। এই রোগের নাম সিস্টিক ফাইব্রোসিস।

সিস্টিক ফাইব্রোসিস কী?

এটি একটি জিনঘটিত রোগ বলে জানাচ্ছেন পালমোনোলজিস্ট সুস্মিতা রায়চৌধুরী। এই রোগে সিএফটিআর নামে একটি জিনের অভিযোজনের ফলে দেহের কোষগুলিতে নুন ও জলের আদানপ্রদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর জেরে দেহের নানা সিক্রেশন ও মিউকাস তরল না হয়ে আঠালো হয়ে যায়। এই আঠালো মিউকাস আটকে থাকে ফুসফুস ও অগ্ন্যাশয়ে। এই রোগ শিশুদেরই বেশি দেখা যায়। সুস্মিতা বলেন, “এই আঠালো মিউকাসের জন্য বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়। ফুসফুসের অ্যালভিওলাইগুলি বড় হয়ে বাটির আকার ধারণ করে এবং তার মধ্যে জমতে থাকে কফ। ব্যাকটিরিয়া ফুসফুসে বসে থাকার জন্য শুরু হয় বুকে সংক্রমণ।” তিনি জানাচ্ছেন, অগ্ন্যাশয়ে মিউকাস জমে থাকার কারণে পাচনরস কম হয়, তার ফলে সমস্যা হয় হজমে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর জেরে বৃদ্ধি ভাল হয় না, কমে যায় প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

জিনের অভিযোজন বেশি থাকলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার ভয় বাড়ে। কৈশোরের শেষ দিকে বা আর কয়েক বছর পরে কারও কারও ফুসফুস প্রতিস্থাপনের মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। যাঁদের অভিযোজন কম থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা এত গভীর না হলেও কমে যায় আয়ু।

উপসর্গ কী কী

সিস্টিক ফাইব্রোসিসের প্রাথমিক উপসর্গ হল অনবরত কাশি। সাধারণ ঠান্ডা লাগার কাশি সেরে যায় কয়েক দিনে। কিন্তু এই কাশি সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। এর পাশাপাশি সাইনাসের সমস্যা, শ্বাস নিতে সমস্যা বা সহজেই হাঁপিয়ে যাওয়া, বুকে সংক্রমণ, হজমে সমস্যা, মুখ দিয়ে রক্ত ওঠার মতো উপসর্গ দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ২-৪ বছর বয়সের মধ্যেই বিষয়টি ধরা পড়ে।বুকে স্টেথোস্কোপ বসিয়েই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, তা ছাড়া চেস্ট এক্স-রে, ঘামের ক্লোরাইড পরীক্ষার মাধ্যমেও রোগ নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

এই রোগ নিরাময়ের এখনও কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই বলে জানাচ্ছেন পালমোনোলজিস্ট অনির্বাণ নিয়োগী। ফলে রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করার দিকেই মূলত লক্ষ্য রাখা হয়। আঠালো মিউকাসের মোকাবিলার জন্য মিউকোলাইটিক দেওয়া হয়। জল বেশি খেতে হয়। এ ছাড়া, সংক্রমণ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার প্রচলিত। নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নিয়ম মেনে দিতে হবে। হজমে সাহায্য করার জন্য এনজ়াইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করা হতে পারে।

দৈনন্দিন যত্ন ও সাবধানতা

এই রোগে আক্রান্তদের ভিড় জায়গায় যাওয়া, ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, পোষ্য রাখা যাবে না। নিয়মিত হাঁটা ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ়ের দিকেও জোর দেন চিকিৎসকেরা। এই রোগ যেহেতু জিনের মিউটেশনের জন্য হয়, তাই এটি জন্ম থেকেই উপস্থিত থাকে। পরিণত বয়সে নতুন করে এই রোগ হয় না বলেই জানাচ্ছেন ডা. নিয়োগী। তবে যাঁদের অভিযোজনের মাত্রা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় পরে হতে পারে। বারবার কাশি, হজমের সমস্যাকে অন্য রোগের উপসর্গ বলে ভাবা হতে পারে।

সিস্টিক ফাইব্রোসিসকে বিরল রোগ হিসেবেই ধরা হয়। তবে এই রোগ উপেক্ষা করলে বিপজ্জনক হতে পারে।

আরও পড়ুন