Artificial Blood

এক বোতল রক্তের জন্য হাহাকারের দিন শেষ! প্রাণ বাঁচাবে কৃত্রিম রক্ত,বড় গবেষণার পথে জাপানি বিজ্ঞানীরা

মানব শরীরের রক্তের বিকল্প হতে পারে গবেষণাগারে বানানোর কৃত্রিম রক্তকোষ! কৃত্রিম রক্ত দিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। শুরু হয়েছে মানুষের শরীরে ক্লিনিকাল ট্রায়াল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ১৭:০৪
Japanese scientists invent universal Artificial Blood For All Types

কৃত্রিম রক্ত দিয়ে বাঁচবে প্রাণ, আসাধ্য সাধন করতে চলেছেন গবেষকেরা। ছবি: ফ্রিপিক।

রক্তের গ্রুপ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। এক বোতল রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘোরার দিন কি তবে শেষ হতে চলেছে? ঠিক যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, তা আর ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে খুঁজতে হবে না। রক্তের ঘাটতি থাকলেও চিন্তা নেই। কারণ, মানব শরীরের রক্তের বিকল্প হতে পারে গবেষণাগারে বানানো কৃত্রিম রক্তকোষ। এমনটাই দাবি করেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম রক্ত দিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। শুরু হয়েছে মানুষের শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।

Advertisement

জাপানের নারা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা কৃত্রিম রক্তকোষ তৈরি করেছেন গবেষণাগারে। রক্তের গ্রুপ যা-ই হোক না কেন, সকলের শরীরেই কাজ করবে এই রক্ত, দাবি এমনটাই। গবেষণাগারে কৃত্রিম রক্ত তৈরির পরীক্ষা নতুন নয়। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় ধরেই সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২০ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থের একটি গবেষণাপত্রেও কৃত্রিম রক্তের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালে বিরল রক্তের গ্রুপ রয়েছে এমন কয়েকজনের শরীরে কৃত্রিম রক্তের ট্রায়াল হয়েছিল। তবে মানুষের হাতে বানানো সেই রক্তকোষগুলিকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা বা সেগুলিকে দিয়ে একেবারে স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি এখনও পর্যন্ত। এ বার কি তবে সেই অসাধ্য সাধন সম্ভব হবে?

জাপানি গবেষক হিরোমি সাকাই ও তাঁর টিম কৃত্রিম রক্তকোষ তৈরির গবেষণা চালাচ্ছেন। হিরোমি জানিয়েছেন, দাতার শরীর থেকে যে রক্ত নেওয়া হয়, তার আয়ু ৪২ দিনের বেশি নয়। কারণ, লোহিত রক্তকণিকা শরীরের বাইরে এর বেশি সময়ে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু কৃত্রিম রক্তকোষ তা পারবে বলেই দাবি। প্রাথমিক ভাবে ১৬ জনের শরীরে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার কৃত্রিম রক্ত দিয়ে দেখা হচ্ছে, এর প্রভাব কী হতে পারে। দফায় দফায় ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ চলছে। যদিও এর ফলাফল নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি।

কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা।

কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা।

এখন কথা হল, কৃত্রিম রক্তকোষ তৈরি হবে কী ভাবে?

গবেষকেরা প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ থেকে রক্তের কোষ তৈরির চেষ্টা করছেন। প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল আদতে সেই ধরনের স্টেম সেল, যার থেকে শরীরের যে কোনও ধরনের কোষ চটজলদি বানিয়ে ফেলা যায়। তা সে রক্তকোষই হোক বা পাকস্থলী বা কিডনির কোষ। এই ধরনের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বানানো যায় দু’ভাবে— ১) ভ্রূণের কোষ নিয়ে যাকে বলে ‘এমব্রায়োনিক স্টেম সেল’ বা, ‘ইএস’, ২) প্রাপ্তবয়স্কের শরীর থেকে নিয়ে যাকে বলা হয় ‘ইনডিউস্‌ড প্লুরিপোটেন্ট সেল’ বা ‘আইপিএস’। এই ধরনের কোষ যাতে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে, তার জন্য নানা পদ্ধতির প্রয়োগও করছেন গবেষকেরা।

কৃত্রিম রক্তের কোষ আসল লোহিত রক্তকণিকার মতো না হলেও তার মতোই কাজ করার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পরিবহণের সাহায্য করবে বলে দাবি করেছেন জাপানি গবেষকেরা। কোনও বিরল রোগের ক্ষেত্রে, জটিল অস্ত্রোপচারের সময়ে অথবা বিরল রক্তের গ্রুপ রয়েছে এমন কারও ক্ষেত্রে এই ধরনের কৃত্রিম রক্ত কাজে আসতে পারবে বলেই দাবি তাঁদের। তবে সমস্যা হতে পারে অন্য জায়গায়। গবেষণাগারে কৃত্রিম রক্তকোষ বানানো হলে সেগুলি স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো দেখতে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক রক্তকোষের মতো বেড়ে উঠতে পারবে কি, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া শরীরে প্রবেশের পরে কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না, আসল আর কৃত্রিম রক্ত মিশলে তার থেকে কোনও সমস্যা হতে পারে কি না, সে নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন গবেষকেরাও।

Advertisement
আরও পড়ুন