Device to cure Diabetes

সুগার আচমকা বাড়বে বা কমবে না, ছোট্ট একটি যন্ত্রই নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবিটিস! নতুন আবিষ্কারের দাবি

রাতবিরেতে যখন তখন সুগার বেড়ে যেতে বা কমে যেতে পারে। এই নিয়ে সব সময়েই চিন্তায় থাকেন ডায়াবিটিসের রোগীরা। সেই চিন্তা দূর করতেই নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ১২:১২
MIT engineers have made progress in revolutionising Type 1 diabetes management with an emergency implant

শরীরের ভিতর যন্ত্র বসালেই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কী আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা? ছবি: সংগৃহীত।

সুগার বেড়ে যাওয়া বা আচমকা কমে যাওয়া নিয়ে চিন্তা থাকেই। রাতবিরেতে হঠাৎ করে রক্তে শর্করা বিপজ্জনক ভাবে কমে গেলে, তখন বিপদেই পড়তে হয়। আবার খাবার খাওয়ার পরে শর্করা বেড়ে যায় স্বাভাবিক ভাবেই। সুগারের এই ওঠানামার বিষয়টি নিয়ে সব সময়েই চিন্তায় থাকেন ডায়াবিটিসের রোগীরা। সে জন্য হাতের কাছে ওষুধ বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন রাখতেই হয়। কিন্তু এ বার সেই সমস্যার সমাধান করতে নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকেরা।

Advertisement

‘নেচার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ জার্নালে এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন যন্ত্রটি শরীরের ভিতর বসিয়ে দেওয়া হবে। এর কাজ হবে রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা। আপাতত টাইপ ১ ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্যই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এটি শরীরে বসিয়ে দিলে বার বার ওষুধ খাওয়া বা মনে করে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যন্ত্রটি নিজে থেকেই সে কাজ করবে।

টাইপ ১ ডায়াবিটিস হল অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার। মূলত জিনগত সমস্যার জন্য হয়। অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে যখন মানুষের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, সে অবস্থাকে টাইপ ১ ডায়াবিটিস বলা হয়। ইনসুলিন হরমোনই শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই এই হরমোনটির ক্ষরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে, তখন রক্তে শর্করা জমতে শুরু করবে। যন্ত্রটির কাজ হবে এই হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রেখে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে পলিমার দিয়ে। এর বাইরে নিকেল ও টাইটানিয়ামের স্তর আছে। যন্ত্রটি আকারে খুবই ছোট, সহজেই শরীরের ভিতরে প্রতিস্থাপন করা যাবে। এর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচলের ব্যবস্থাও থাকবে। ইলেকট্রিক কারেন্ট দিয়ে যন্ত্রটিকে উত্তপ্ত করা হবে, তখন সেটি সক্রিয় হয়ে রক্তে জমা অতিরিক্ত গ্লুকোজ় জারণে সাহায্য করবে।

ইঁদুরের উপর যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেটি ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। গ্লুকাগন হল অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ থেকে উৎপাদিত পেপটাইড হরমোন, যা রক্তে গ্লুকোজ়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এর বিপরীত হল ইনসুলিন, যা রক্তে গ্লুকোজ়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। এই দুই হরমোনের ওঠানামা নিয়ন্ত্রিত হলেই, রক্তে শর্করা আচমকা বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। নতুন যন্ত্রটি সে কাজই করবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যদি আচমকা সুগার বেড়ে বা কমে যায়, তখন যন্ত্রটি নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। ফলে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না।

যন্ত্রটি আপাতত পশুর শরীরে বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষক সিদ্ধার্থ কৃষ্ণন জানিয়েছেন, মানুষের শরীরে পরীক্ষা করার কাজ শুরু হয়েছে। যদি যন্ত্রটি ঠিকমতো কাজ করে এবং শরীরে বসানোর পরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়, তা হলে আগামী দিনে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই যন্ত্রটিই মাইলফলক হয়ে উঠবে।

Advertisement
আরও পড়ুন