Newborn Crying

শিশু জন্মেই কাঁদে কেন? মস্তিষ্কের কোন বদলে কান্নাই আগে আসে, হাসি অনেক পরে

কান্না-হাসির জটিল খেলা চলে মগজে। নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়েই প্রথমে কেঁদে ওঠে। এই কান্নার নেপথ্যে রয়েছে হরেক কারণ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২৫
New Scientific data explains why crying comes before smiling or laughter in newborns

জন্মেই কান্নার অর্থ কী, ঠিক কোন বয়স থেকে হাসতে শেখে শিশু? ফাইল চিত্র।

শিশু জন্মেই কেঁদে ওঠে। একরত্তির কান্নার আওয়াজ পেলেই নিশ্চিন্তের হাসি ফোটে চিকিৎসক ও পরিবারের সকলের মুখে। পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক কেন কাঁদে, তার কিন্তু বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। জন্মেই শিশু হাসছে, এমনটা কখনও হয় না। মা-বাবারা অনেক সময়েই ভয় পান যে, শিশু এত কাঁদছে কেন। কোনও সমস্যা হল কি? আসলে তা নয়। মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে প্রথম বাইরের আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসামাত্র শিশুর শরীর ও মস্তিষ্কে নানা বদল ঘটতে থাকে। তার বহিঃপ্রকাশ হয় একটিমাত্র অভিব্যক্তিতেই— সেটি হল কান্না। সদ্যোজাত যদি জন্মানোর পরে না কাঁদে, তা হলেই মুশকিল। সে ক্ষেত্রে নানা রকম জটিল ও স্নায়বিক রোগের আশঙ্কাই করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

কান্না কেন ভাল?

জন্মানোর পরে প্রথম কান্নার অর্থ হল, শিশুর শ্বাস নেওয়া। শুনলে অবাকই লাগবে। আসলে মাতৃগর্ভে শিশুর ফুসফুস যখন তৈরি হতে শুরু করে, তখন তার মধ্যে ‘অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড’ জমা হয়। এই তরলের কাজ হল পেশি, ফুসফুস-সহ শিশু নানা অঙ্গের বিকাশ ঘটানো, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা। এই তরলের মাধ্যমেই শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস চলে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাইরের আঘাত থেকে বাঁচাতেও সাহায্য করে এই তরল। জন্মের পরে ফুসফুস পুনগর্ঠনের পর্যায়ে এই তরলটি ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়। শিশু যখন কাঁদে, তখন এই তরল ফুসফুস থেকে বার হয় এবং প্রথম বার বাইরের অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস শিশুর ফুসফুসে প্রবেশ করে। তা ছাড়া বাইরের বাতাস ঢুকে ফুসফুস প্রসারিত হয়, বায়ুথলিগুলি খুলতে থাকে, ফলে সামান্য অস্বস্তিও হয় শরীরে। সে কারণেও শিশু কাঁদতে থাকে।

জন্মের পরেই কান্না কেন ভাল?

জন্মের পরেই কান্না কেন ভাল? ছবি: ফ্রিপিক।

দ্বিতীয় কারণ হল, শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও হৃৎস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রিত হয় কান্নার মাধ্যমে। শিশু যখন জন্মেই কেঁদে ওঠে, তখন তা সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।

তৃতীয় কারণ হল, কান্না শিশুর পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে, যা তাকে প্রথম বার মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

মগজে কান্না-হাসির জটিল খেলা

শিশু জন্মেই কেন কাঁদে, তার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল মস্তিষ্কের গঠন। কান্না, হাসির মতো আবেগ মস্তিষ্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু নবজাতকের মস্তিষ্কের সার্বিক বিকাশ ধীরে ধীরে হয়, তাই আবেগগুলির প্রকাশও একে একে হতে থাকে। সহজ করে বললে, কান্না নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের নীচের অংশ বা ব্রেনস্টেম এবং অ্যামিগডালা। জন্মের পরে এই দু’টি অংশ বিকশিত থাকে, ফলে কান্নার অভিব্যক্তিরই প্রকাশ পায় প্রথমে।

হাসি বা অন্যান্য সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলি তৈরি হয় মস্তিষ্কের উপরের অংশ সেরিব্রাল কর্টেক্সে। ওই অংশটির সম্পূর্ণ বিকাশ ধীরে ধীরে হয়। শিশু যত বাইরের পরিবেশকে চিনতে থাকে, চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে, মুখচেনা শুরু হয়, ততই ওই অংশের গঠন সম্পূর্ণ হতে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, জন্মের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অর্থাৎ, দেড় থেকে দু’মাস পরে শিশু হাসতে শুরু করে।

হাসিরও আবার ধরন আছে। যেমন, ‘রিফ্লেক্স স্মাইল’, জন্মের পরে ঘুমের মধ্যে শিশুকে হাসতে দেখা যায়। সেটি আসলে পেশির সংকোচন ও প্রসারণের কারণে হয়। আর দ্বিতীয় হল ‘সোশ্যাল স্মাইল’, শিশু যখন মানুষজনকে চিনতে পারে এবং কোনও কথা বা আওয়াজ শুনে হেসে ওঠে। এই হাসির প্রকাশ ঘটে অনেক পরে। হাসির সময়ে মুখের পেশি কী ভাবে নড়বে, হাসির আওয়াজ কেমন হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অঞ্চল। সেই অংশটির বিকাশ অনেক পরে হয়।

জন্মেই যদি শিশু না কাঁদে

শিশু যদি জন্মের পর পরই না কেঁদে ওঠে, তা হলেই গন্ডগোল। চিকিৎসকেরা বলেন, সেটি ‘পেরিনাটাল অ্যাসফিক্সিয়া’-র লক্ষণ হতে পারে। এতে শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছয় না। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, খিঁচুনি হয় এবং জীবন বিপন্ন হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয়ে ‘হাইপক্সিক-ইস্কেমিক এনসেফেলোপ্যাথি’ হতে পারে শিশুর, যে কারণে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া সেরিব্রাল পলসি, মৃগী, বধিরতা, অন্ধত্ব, কথা বলার সমস্যা, জটিল স্নায়বিক রোগও দেখা দিতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন