Cooking Oil

কোন তেলে রান্না খেয়ে স্থূলত্ব বাড়ছে আমেরিকাবাসীর? এ দেশেও দিব্যি খাওয়া হয়, বিপদসঙ্কেত দিলেন গবেষকেরা

ভাজাভুজি করতে এই তেলই বেছে নেওয়া হয় বেশির ভাগ সময়ে। আমেরিকায় সর্ষের তেল চলে না। কাজেই স্বাস্থ্যকর ভেবে এই তেলের রান্নাই বেশি খাওয়া হয়। আর এখন এই তেলেই বিপদ দেখছেন গবেষকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৭
New Study says, America’s favourite and most popular cooking linked to Obesity

বাঙালির হেঁশেলেও ভাজাভুজি করতে লাগে, এ তেলেই লুকিয়ে বিপদ। ছবি: ফ্রিপিক।

বাঙালির হেঁশেল মানেই সর্ষের তেলের ঝাঁঝাঁলো গন্ধ। বঙ্গবাসী বলে শুধু নয়, ভারতেই রান্নার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের ব্যবহার বহুল। আর আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ভোজ্য তেল হিসাবে সর্ষের তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বদলে যে তেল স্বাস্থ্যকর ভেবে বেশি খাওয়া হত, তাতেই এখন বিপদ দেখছেন গবেষকেরা। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সয়াবিন তেলে রান্না খেয়েই নাকি স্থূলত্ব বাড়ছে আমেরিকায়। ডায়াবিটিসে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। সয়া তেল দিয়ে বেশি ভাজাভুজি খাওয়ার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় অনেকটাই।

Advertisement

সয়া তেলের সবটাই যে খারাপ, তা নয়। তবে কী পরিমাণ তেল দিয়ে রান্না হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালোফোর্নিয়ার গবেষকেরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকর ভেবে সয়া তেলের ব্যবহার এত বেশি বেড়ে গিয়েছে যে, তা উপকারের চেয়ে ক্ষতি করছে বেশি। ‘জার্নাল অফ লিপিড রিসার্চ’-এ এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা লিখেছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় সয়া তেলের ব্যবহার বেশি। এই তেল বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে তা লিভারে এক প্রকার প্রোটিন তৈরি করে, যা মেটাবলিক সিনড্রোমের কারণ হয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ, বিপাকক্রিয়ার হার কমিয়ে মেদ জমার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।

ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে গবেষকেরা দেখেছেন, সয়া তেলের মূল উপাদান লিনোলেয়িক অ্যাসিডই যত নষ্টের গোড়া। এটি এক ধরনের পলিআনস্যাচুরেটেড ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীর তৈরি করতে পারে না। উদ্ভিজ্জ তেল থেকেই এই উপাদানটি শরীরে ঢোকে। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে শরীরে থাকলে তা উপকারী, কিন্তু যখনই এর মাত্রা বাড়বে, তখনই তা টক্সিন হিসেবে জমা হতে থাকবে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে তুলবে। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে।

২০১৫ সালেও এমনই একটি গবেষণা করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। সেখানেও বলা হয়েছিল, রান্নায় নারকেল তেলই ভাল, কিন্তু সয়া তেলের অধিক ব্যবহার বিপজ্জনক। এই বিষয়ে গবেষক ফ্রান্সেস স্ল্যাডেক আরও একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন। তিনি জানান, সয়া তেলে রান্না অনেকেই খান, তাঁরা সবাই যে স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছেন, তা নয়। এটি মূলত হয় এক ধরনের প্রোটিনের রাসায়নিক বদল ঘটার কারণে। লিভারে এক প্রকার প্রোটিন তৈরি হয় যার নাম ‘এইচএনএফ৪এ’। সকলের শরীরেই থাকে এই প্রোটিন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গিয়েছে, সয়া তেলের লিনোলেয়িক অ্যাসিড যদি শরীরে বেড়ে যায়, তা হলে এই প্রোটিন কারও কারও ক্ষেত্রে বদলে যায়। নতুন এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়, যা মেদবৃদ্ধির কারণ হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে এর থেকে ফ্যাটি লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়। এখনকার যে সব প্রক্রিয়াজাত খাবার দোকানে পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই তৈরি হয় সয়া তেলে। তাই এই তেলেই বিপদ দেখছেন গবেষকেরা।

তা হলে কোন তেল ভাল?

তিলের তেলে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডও এতে থাকে। এই তেল খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে না। হার্টের জন্যও ভাল। তিলের তেল শরীরে প্রদাহ কমাতে পারে। মাঝারি আঁচে রান্নার জন্য এই তেল ভাল।

রান্নার জন্য আরও একটি তেল ভাল, সেটি হল অলিভ অয়েল। সারা বিশ্বেই এই তেলটির ব্যবহার হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে রান্নায় পরিশোধিত অলিভ অয়েলই ব্যবহার করা হয়। পরিশেধিত অলিভ অয়েলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, এই তেলের ধূমাঙ্ক ৪৬৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, অর্থাৎ উচ্চ তাপে ভাজাভুজি করলে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে না। তেলও পুড়বে না। ক্ষতি কম হবে। তবে একস্ট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে কখনওই ডিপ ফ্রাই করতে যাবেন না।

ভাজাভুজির জন্য ভাল নারকেল তেল। নারকেল তেল ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। লিভারের জন্য এই তেল ভাল। তবে এটিও পরিমিত মাত্রাতেই খেতে হবে।

সূর্যমুখীর তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

Advertisement
আরও পড়ুন